তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বিএনপির সঙ্গে এখন আর কোনো বিদেশি শক্তি নেই। তারা মহাসমাবেশের ডাক দিয়েছিল, অর্থাৎ আন্দোলনের বেলুনটা ফুলিয়েছিল। পরের দিন আবার ঢাকার প্রবেশমুখ অবরোধ দিয়েছিল। এরপর দেখা গেল বিএনপির আন্দোলনের যে বেলুন ফুলেছিল পরদিনই তা ফুটে গেছে।

বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) সন্ধ্যায় চট্টগ্রামের এলজিইডি মিলনায়তনে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এতে সভাপতিত্ব করেন উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ সালাম।

তিনি বলেন, বিএনপিও বুঝতে পেরেছে শেখ হাসিনাকে সরানো তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। সেজন্য দেখেন না বেলুন ফুলানোর পর আস্তে আস্তে বাতাস কমে যাচ্ছে। বিএনপি আন্দোলনের বেলুন আর ফুলাতে পারছে না।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, আন্দোলনের বেলুন না ফোলার কারণে এখন তারা লিফলেট বিতরণ আর হাঁটা কর্মসূচি দিচ্ছে। পদযাত্রা মানেই তো হাঁটা। কয়দিন হাঁটা কর্মসূচি, কয়দিন বসা কর্মসূচি, আবার কয়দিন দৌড়ানো কর্মসূচি দিয়ে তারা কর্মীদের চাঙ্গা রাখার চেষ্টা করছেন। তাদের কর্মীরাও জেনে গেছে বিদেশিদের পদলেহন করে তাদের কোনো লাভ হয় নাই। বিদেশিরাও তাদের তত্ত্বাবধায়ক সরকার, তথাকথিত নিরপেক্ষ সরকার, এগুলোর প্রতি কোনো সমর্থন জানায়নি। সেজন্য বিএনপি আন্দোলনের বেলুনের আর ফুলাতে পারছে না। একটু বাতাস ঢুকে, আবার বের হয়ে যায়। এই হচ্ছে বিএনপির দশা। 

তারেক রহমান বিএনপিকে তার একটি লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে ব্যবহার করতে চায় উল্লেখ করে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, তাদের নেতাদের কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে দিতে চান না তিনি। আগামী নির্বাচনের পর বুঝতে পারবে, এই লাঠিয়াল বাহিনী ছোট হয়ে গেছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নীতি হচ্ছে, যতদিন তিনি ইলেকশন করতে পারবেন না ততদিন বিএনপির কেউ ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার পদেও নির্বাচন করতে পারবেন না। বিএনপি এখন আবার ষড়যন্ত্রের পথ বেছে নিয়েছে। তারা বুঝতে পেরেছে নির্বাচনে গেলে তাদের কোনো সম্ভাবনা নাই, এজন্য নির্বাচন বানচাল করার পথ বেছে নিয়েছেন তারা। 

তারেক রহমানের লাঠিয়াল হিসেবে ব্যবহৃত বিএনপি নেতাদের কাছে প্রশ্ন রেখে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আপনাদেরকে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেম্বার ইলেকশন করতে দেন না, সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর ও মেয়র ইলেকশন করতে দেন না, পার্লামেন্ট ইলেকশন করতে দেন না, পার্লামেন্টে নির্বাচিত হওয়ার পর শপথ গ্রহণ করতে দেন নাই মির্জা ফখরুল সাহেব। আবার পার্লামেন্টের নির্বাচিতদের পদত্যাগ করতে বাধ্য করেন। আপনারা কী তারেক রহমানের লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে ব্যবহৃত হবেন? আগামী নির্বাচনের পর বুঝতে পারবেন এই লাঠিয়াল বাহিনী ছোট হয়ে গেছে। 

তিনি বলেন, নির্বাচনে জনগণের অংশগ্রহণই হচ্ছে মুখ্য, নির্বাচনে যদি মানুষ ব্যাপকভাবে অংশগ্রহণ করে সেখানে কোন দল অংশগ্রহণ করলো সেটি মুখ্য নয়। সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপি বর্জন করেছিল, তাদের কোন নেতাকে ইলেকশন করতে দেয় নাই, এরপরও অনেকে করেছে এবং ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে ৩০-৪০ শতাংশ ভোট কাস্ট হয়। আমাদের এখানে নির্বাচন বিরোধিতা এবং এত অপপ্রচারের পরও ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছে। আগামী নির্বাচনেও জনগণ অংশগ্রহণ করছে কি না সেটি হচ্ছে মুখ্য। সেখানে বিএনপি নেতারা কিংবা বিএনপি অংশগ্রহণ করলো কি না সেটি মুখ্য বিষয় নয়। কেউ নির্বাচনে আসুক বা না আসুক জনগণের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু ও অবাধ সুন্দর আগামী নির্বাচন হবে এবং শেখ হাসিনা পরপর চারবার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হবেন এই দেশে।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, জিয়াউর রহমান ও খন্দকার মোশতাক বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের অন্যতম কুশীলব। আজকে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়েছে, কিন্তু কুশীলবদের বিচার হয়নি। কারা এই ষড়যন্ত্রের পটভূমি রচনা করেছেন, কারা বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পেছনে কলকাঠি নেড়েছে সেগুলো উন্মোচিত হয়নি। 

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর মোশতাক বিশ্বস্ত জিয়াউর রহমানকে সেনাপ্রধান নিয়োগ করেন। একজন সেনাপতি শপথ গ্রহণ করেন রাষ্ট্র এবং রাষ্ট্রপতিকে রক্ষা করার জন্য। বঙ্গবন্ধুর খুনি ফারুক ও রশিদ ১৯৭৬ সালে লন্ডনে একটি টেলিভিশনে সাক্ষাৎকার দিয়ে বলেছেন, জিয়াউর রহমানের কাছে তারা গিয়েছিল বঙ্গবন্ধুকে হত্যার বিষয়ে আলোচনা করার জন্য। তখন জিয়াউর রহমান বলেছিলেন তোমরা জুনিয়র অফিসাররা এগিয়ে যাও। শপথ অনুযায়ী জিয়াউর রহমানের দায়িত্ব ছিল, এই ধরনের একটি ষড়যন্ত্র রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করা। সেটি না করা মানে তিনি ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দেবাশীষ পালিতের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান, চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এটিএম পেয়ারুল ইসলাম এবং উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও রাঙ্গুনিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান স্বজন কুমার তালুকদার।

এমআর/এমজে