পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগে নিজ থানায় দায়ের হওয়া মামলার আসামি হয়ে দীর্ঘ আড়াই মাসের বেশি সময় থানায় অনুপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম নগরের পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজিম উদ্দিন। এসময়ে তিনি অসুস্থ ছিলেন বলে দাবি করেছিলেন। তবে মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়ার দিনই কাকতালীয়ভাবে তিনি সুস্থ হয়ে থানায় যোগ দেন। এরপর এবার তার বিরুদ্ধে উঠেছে মারধর, হত্যাচেষ্টা, চাঁদা দাবি ও ফ্ল্যাট দখলে সহযোগিতার। এ ঘটনায় ওসি নাজিম উদ্দিনসহ মোট তিন জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতপরিচয় ৫ থেকে ৬ জনের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে। 

বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট অলি উল্লাহর আদালতে মামলাটি দায়ের করেন শামীমা ওয়াহেদ নামে এক ভুক্তভোগী। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।

মামলায় নাম উল্লেখ করা বাকি আসামিরা হলেন- পাঁচলাইশ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. জাকির (৪০) ও আহমেদ ফয়সাল চৌধুরী (৪২)।

মামলার অভিযোগে উল্লেখ করা করা হয়, ভুক্তভোগী পাঁচলাইশ থানার হামজারবাগ এলাকার জাংগাল পাড়া রিজিয়া ম্যানসন নামে একটি ভবনে থাকেন। মামলার বিবাদী আহমেদ ফয়সাল চৌধুরী তার স্বামীর প্রথম সংসারের সন্তান। ভুক্তভোগী যে ফ্ল্যাটে বসবাস করেন সেটি দখল করতে ফয়সাল চৌধুরী দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা করছিলেন। গত ২৭ জুলাই ভুক্তভোগীদের ডেকে নিয়ে ফ্ল্যাট ছেড়ে দিতে এক সপ্তাহের আল্টিমেটাম দেন ওসি নাজিম। না হয় ভুক্তভোগীদের কারাগারে পাঠানোর হুমকি দেন তিনি। এ ঘটনার পর ১২ ও ১৬ আগস্ট দুই দফা অভিযুক্তরা ওসি নাজিমের নির্দেশে ভুক্তভোগীর ফ্ল্যাটে ঢুকে তাদের মারধর ও হত্যাচেষ্টা এবং ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। এরপর আজ (বৃহস্পতিবার) তিন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আদালতে মামলা দায়ের করেন। 

মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার আফরোজা আক্তার ঢাকা পোস্টকে বলেন, আদালত মামলার অভিযোগ শুনে আমলে নিয়ে পিবিআইকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।

জানা গেছে, বছরের শুরুতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ডায়ালাইসিস ফি কমানোর দাবিতে আন্দোলনে নামেন রোগী ও তাদের স্বজনরা। কয়েক দিন ধরে চলা ওই আন্দোলনের অংশ হিসেবে ১০ জানুয়ারি বিক্ষোভকারীরা চমেকের প্রধান ফটকের সামনের সড়ক অবরোধ করেন। ওইদিন পাঁচলাইশ থানার ওসি রোগীর স্বজনদের পিটিয়ে আলোচনায় আসেন। এদিন মোস্তাকিম নামে এক রোগীর ছেলেকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠান ওসি নাজিম। 

এদিকে, কারাগার থেকে বের হয়ে পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগে মোস্তাকিম ২০ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ ড. বেগম জেবুননেছার আদালতে একটি পিটিশন মামলা দায়ের করেন। এতে পাঁচলাইশ থানার ওসি নাজিম উদ্দিন এবং একই থানার এসআই আবদুল আজিজকে আসামি করা হয়। আদালত অভিযোগকে নিয়মিত মামলা হিসেবে রেকর্ড করার নির্দেশ দেন এবং পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। এরপর ওইদিনই একসঙ্গে অসুস্থতার অজুহাত দেখিয়ে ছুটি নেন অভিযুক্ত ওসি-এসআই। প্রায় ৮০ দিন মামলাটি তদন্ত করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয় সিআইডি। যেদিন  প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয় সেদিনই আকস্মিক দুজনই সুস্থ হয়ে থানায় যোগ দেন।

এমআর/জেডএস