চিকিৎসায় সন্তুষ্ট সাঈদীর পরিবার, দাবি বিএসএমএমইউয়ের
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর চিকিৎসায় চিকিৎসাবিজ্ঞানে যা যা সম্ভব বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) সবই করেছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালটির কার্ডিওলজি বিভাগের অধ্যাপক এবং চিকিৎসক দলের প্রধান ডা. মোস্তফা জামান। সেইসঙ্গে বিএসএমএমইউয়ে সাঈদীকে যে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে তাতে তার পরিবার সন্তুষ্ট বলেও দাবি করেছেন তিনি।
সোমবার (১৫ আগস্ট) রাতে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যু পরবর্তী সময়ে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
বিজ্ঞাপন
ডা. মোস্তফা জামান বলেন, সাঈদী সাহেবের সন্তানরা আমাদেরকে জানিয়েছেন যে, বিএসএমএমইউয়ের চিকিৎসায় তারা সন্তুষ্ট। সাঈদী সাহেব গতকাল (রোববার) হার্ট অ্যাটাক করে হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসেন। তখন আমাদের বিভাগীয় চেয়ারম্যান আমাকে রিং পরানোর জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে বলেন। কিন্তু আমরা যখন রোগীকে পর্যবেক্ষণ করি, তখন দেখি যে তার হার্টে সেই মুহূর্তে রিং পরানো সম্ভব নয়। যে কারণে তাকে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী কনজারভেটিভ ট্রিটমেন্ট দেওয়া হয় এবং ওষুধ দেওয়া হয়। পাশাপাশি আমরা করোনারি কেয়ার ইউনিটে তাকে ভর্তি রাখি।
তিনি বলেন, সারাদিন আমরা তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখে চিকিৎসা দিয়েছি। বারবার তাকে আমরা দেখেছি এবং কথা বলেছি। খাওয়া-দাওয়া থেকে শুরু করে সবকিছুর ব্যবস্থা করেছি। কিন্তু আজকে (সোমবার) সন্ধ্যা ৬টা ৪৫ মিনিটে তিনি আবারও কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে আক্রান্ত হন। আপনারা জানেন ইতঃপূর্বে বিভিন্ন মেয়াদে তার পাঁচটি স্টেন্টিং করা ছিল। এরপর আজ ৭টা ১০ মিনিটে তাকে লাইফ সাপোর্টে নিয়ে আসা হয়। পরে তাকে বিভিন্ন ধরনের ওষুধপত্র, কার্ডিয়াক মেসেজ, অর্থাৎ লাইভ সাপোর্টের সঙ্গে যা যা করণীয় করেছি।
কার্ডিওলজি বিভাগের এই অধ্যাপক বলেন, একজন কার্ডিয়াক রোগীকে আন্তর্জাতিক প্রটোকল অনুযায়ী যেসব চিকিৎসা দেওয়া হয়, আমরা সাঈদী সাহেবকে সে ধরনের চিকিৎসা দিয়েছি। তারপরও আমরা তাকে বাঁচাতে পারিনি। রাত ৮টা ৪০ মিনিটে আমরা তাকে মৃত ঘোষণা করি। তার সন্তানদের অনুমতি নিয়ে তার হার্টের টিউবগুলো রিমুভ করা হয়। এসময় আমরা তার দুই সন্তানকে সব ধরনের প্রসিডিউর ব্যাখ্যা করেছি। আমাদের করণীয় কী, তাদের করণীয় কী সবকিছুই বুঝিয়ে বলেছি।
ডেথ সার্টিফিকেট দেওয়া হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা তার ডেথ সার্টিফিকেট দিয়েছি। আমাদের এখানে সাঈদী এসেছিলেন কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে, আমরা তাদের কাছেই ডেথ সার্টিফিকেট দিয়েছি।
এর আগে, সোমবার রাত ৮টা ৪০ মিনিটে বিএসএমএমইউয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
তারও আগে, রোববার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে বুকে ব্যথাজনিত সমস্যার কারণে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে প্রথমে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়। সেখানে তার ইসিজিসহ যাবতীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। পরে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় পাঠানো হয়। রোববার রাত ১০টা ৪০ মিনিটে বিএসএমএমইউতে ভর্তি করা হয় সাইদীকে।
২০১০ সালের ২৯ জুন রাজধানীর শাহীনবাগের বাসা থেকে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয় সাঈদীকে। পরে ওই বছরের ২ আগস্ট মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
উল্লেখ্য, মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, অপহরণ, নির্যাতন, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, লুণ্ঠন, ধর্মান্তর করাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের আটটি অভিযোগের মধ্যে দুটি অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন। পরে তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ তার মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ডের আদেশ দেন। এতদিন ওই সাজা ভোগ করছিলেন তিনি।
টিআই/কেএ