‘দুদক থেকে বলছি’, ‘আপনার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে’ ফোনে এভাবেই শুরু। এরপর তথ্য ফাঁস কিংবা অভিযোগ থেকে অব্যাহতির আশ্বাসে অনৈতিক লেনদেন। এভাবে সক্রিয় ভুয়া দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

বাদ যাননি মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীরা। কল/এসএমএস/ভুয়া নোটিশ পাঠিয়ে তাদের সঙ্গে প্রতারণা করে যাচ্ছে একটি চক্র। অভিযোগ নিষ্পত্তির আশ্বাস দিয়ে বিকাশ, নগদসহ অন্যান্য মোবাইল ব্যাংকিং এবং নগদে বিভিন্ন ব্যক্তি থেকে টাকা আদায় ও অন্যান্য সুবিধা গ্রহণ করেছে।

ভুয়া দুদক চক্রটি আসল দুদকের কমিশনার, মহাপরিচালক ও অন্যান্য কর্মকর্তাদের নাম, ছবি ব্যবহার করে হোয়াটস অ্যাপে আইডি খুলে প্রতারণা করে আসছে। এতদিন এসব প্রতারককে পুলিশের হাতে সোপর্দ করেও প্রতারক চক্রকে আটকানো যায়নি। এমনকি গণমাধ্যমে বারবার সচেতনতামূলক প্রচারণাও রুখতে পারেনি প্রতারক চক্রকে।

এবার প্রতারক চক্রকে রুখতে দুদক বাদী হয়ে থানায় প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগে মামলা করেছে। রোববার (১৩ আগস্ট) রাজধানীর রমনা মডেল থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কয়েকটি ধারায় মামলা করেছে দুদক।

দুদকের উপ-পরিচালক সৈয়দ নজরুল ইসলাম বাদী হয়ে দায়ের করা মামলার এজাহারে কারো নাম উল্লেখ করা হয়নি। দুদকের উপপরিচালক (জনসংযোগ) মুহাম্মদ আরিফ সাদেক ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

মামলায় প্রতারণার কাজে ব্যবহার হয়েছে উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের পাঁচটি মোবাইল নম্বর উল্লেখ করা হয়েছে। এজাহারে বলা হয়, প্রতারক চক্র মোবাইল নম্বর ব্যবহারের মাধ্যমে সরাসরি মোবাইল কল, হোয়াটস অ্যাপসহ অনলাইনে আইডি খোলে এবং দুদকের কর্মকর্তাদের নাম, পদবি, ছবি এবং কমিশনের লোগো ব্যবহার করেছে। এভাবে চক্রটি প্রতারণার আশ্রয়ে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, ব্যবসায়ীদের কল/এসএমএস/ভুয়া নোটিশ পাঠিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে। এরপর অভিযোগ নিষ্পত্তির আশ্বাস দিয়ে বিকাশ, নগদসহ অন্যান্য মোবাইল ব্যাংকিং এবং নগদে বিভিন্ন ব্যক্তি থেকে টাকা আদায় ও অন্যান্য সুবিধা গ্রহণ করেছে।

কমিশনের নির্দেশে গোয়েন্দা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয় উল্লেখ করে এজাহারে বলা হয়, চক্রটি বিভিন্ন পেশা ও শ্রেণির লোকদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। তাদের প্রতারণার কারণে দুদকের সুনামহানি হয়েছে এবং দুদক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

প্রতারক চক্রের সদস্যরা একটি মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে দুদকের মহাপরিচালক (তদন্ত) রেজানুর রহমানের নামে একটি ভুয়া হোয়াটস অ্যাপ আইডি খোলে, এর মাধ্যমে মানুষকে ফোন করে হয়রানি ও প্রতারণা করে দুর্নীতি অভিযোগ আছে বলে দাবি করে। পরে অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য টাকা চাওয়া হয়। আরেকটি মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে দুদকের সাবেক কমিশনার মো. মোজাম্মেল হক খানের নামে একটি ভুয়া হোয়াটস অ্যাপ আইডি খুলে চক্রটি প্রতারণা করেছে। একইভাবে দুদকের উপ-পরিচালক মনিরুজ্জামানের নামে আইডি খুলে প্রতারক চক্রের সদস্যরা মানুষকে হয়রানি ও প্রতারণার মাধ্যমে অভিযোগ নিষ্পত্তির কথা বলে টাকা দাবি করেছে।

মামলার এজাহারে বলা হয়, প্রতারক চক্রটি এ ধরনের প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছে, এতে দুর্নীতি দমন কমিশন সম্পর্কে বিভিন্ন পর্যায়ের শ্রেণি-পেশার মানুষের মনে নেতিবাচক  প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। কমিশনের কর্মকর্তাদের পরিচয় দিয়ে ওই সব মোবাইল নম্বর ব্যবহারকারী অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি/ব্যক্তিরা পরস্পর যোগসাজশে ছদ্মবেশ ধারণ করে মিথ্যা তথ্য প্রকাশ করে ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে প্রতারণার মাধ্যমে সুনাম ক্ষুণ্ন করেছে।

আরএম/এসএসএইচ/