মাইকিংয়েই স্বাস্থ্যবিধির দায় সারছে রেল স্টেশন কর্তৃপক্ষ
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে গত ২৯ মার্চ মাস্ক পরিধান বাধ্যতামূলকসহ স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে ১৮ দফা নির্দেশনা জারি করেছে সরকার। নির্দেশনার চার দিন অতিবাহিত হলেও ট্রেনের যাত্রীদের স্বাস্থ্যবিধি মানানোর বিষয়টিতে অনেকটাই উদাসীন স্টেশন কর্তৃপক্ষ। যাত্রীদের অনেকেও অবলীলায় উপেক্ষা করে চলেছেন এসব স্বাস্থ্যবিধি।
রেলে যাতায়াতকারীদের একটি বড় অংশই ব্যবহার করেন কমলাপুর রেল স্টেশন। এরপরই রয়েছে বিমানবন্দর স্টেশন। বৃহস্পতিবার (১ এপ্রিল) সরেজমিনে কমলাপুর রেল স্টেশনে দেখা যায়, কোনোরকম স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা না করে হুড়োহুড়ি করেই স্টেশনে প্রবেশ করছেন যাত্রীরা। টিকিট কাউন্টার ও প্ল্যাটফর্মে অনেকেই মাস্ক পরিধান না করেই দাঁড়িয়ে আছেন। প্ল্যাটফর্মের প্রবেশের পথে নেই কোনো সাবান-পানির ব্যবস্থা। তবে তাপমাত্রা নির্ণয়ের জন্য দুজন দায়িত্বে থাকলেও অনেকজন একসঙ্গে প্রবেশ করায় সবার তাপমাত্রা মাপতেও তাদের হিমশিম খেতে দেখা যায়। হ্যান্ড স্যানিটাইজার লেখা একটি টেবিলে দুটো স্প্রে বোতল থাকলেও তা প্রয়োগের কোনো উদ্যোগ নেই স্টেশন কর্তৃপক্ষের। অনেকেই সেটি এড়িয়ে যাচ্ছেন।
বিজ্ঞাপন
চট্টগ্রামের উদ্দেশে কমলাপুর স্টেশন থেকে ছেড়ে আসা চট্টলা এক্সপ্রেস বিমানবন্দর স্টেশনে থামতেই দেখা গেল, কোনোরকম নিয়মের তোয়াক্কা না করেই ঠেলাঠেলি করেই বগিতে প্রবেশ করছেন যাত্রীরা। বগিগুলোতেও যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড়। সিট পরিপূর্ণ হওয়ার পরও গায়ে গা লাগিয়ে দাঁড়িয়ে গন্তব্য যাচ্ছেন যাত্রীরা।
আরেক যাত্রী আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘গণপরিবহনে বাড়তি ভাড়া দিয়ে স্টেশনে এসেছি। তবে এখানে এসে দেখছি, কোনো ধরনের নিয়ম মানা হচ্ছে না।’ তাহলে শুধু কেন গণপরিবহনে নিয়ম মেনে বাড়তি ভাড়া নিচ্ছে? এমন প্রশ্নও করেন এ যাত্রী।
সিলেটগামী কালনী এক্সপ্রেসের যাত্রী সুদীপ বলেন, ‘প্ল্যাটফর্মে হাত ধোঁয়ার ধোয়া জন্য একটু সাবান পেলাম না।’ তাহলে এই জনসমাগমস্থলে কীভাবে সংক্রমণ ঠেকানো সম্ভব? এমন প্রশ্নও তোলেন এই যাত্রী।
মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসের যাত্রী সুলতান আহমেদ অভিযোগ করেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি মানাতে স্টেশন কর্তৃপক্ষ পুরোপুরি উদাসীন।’
স্টেশনের স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনের বিষয়ে বিমানবন্দর স্টেশন মাস্টার মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘স্টেশনে স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে আমাদের আগে থেকেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ছিল। হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও মাস্ক ব্যবহারের জন্য মাইকিং করা, টিকিট সংগ্রহের জন্য কাউন্টারে লাইন ধরতে বলা, ট্রেনে যেন মাস্ক ছাড়া যাত্রী না ওঠে, সে বিষয়ে আগে থেকেই ব্যবস্থা নেওয়া ছিল এগুলোই চলমান আছে। তবে হাত ধোয়ার জন্য বিমানবন্দর স্টেশনে সাবান-পানির ব্যবস্থা করা হয়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘যাত্রীরা যখন টিকিট নিচ্ছেন সেক্ষেত্রে শারীরিক দূরত্ব মেনে দিচ্ছি। ট্রেনে যখন উঠছেন তখন দূরত্ব মেনে যেন ওঠেন সেই ব্যবস্থা করতেছি। কিন্তু যাত্রীরা যদি শারীরিক দূরত্বের বিষয়টা না মানেন তাহলে তো জোর করে কিছু করা যায় না তাদেরকে। এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে বাধ্য করলে হয়তো পুরোপুরি স্বাস্থ্যবিধি মানানো যেতে পারে।’
এসব বিষয়ে পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের মহাপরিচালক জাহাঙ্গীর হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘কেউ যদি মাস্ক না পরেন আমরা তাকে ট্রেনে না ওঠাতে পারি। তবে বাধ্য করতে পারি না। এটা পুলিশের কাজ। এ বিষয়ে রেল কর্তৃপক্ষ যাত্রীদের জরিমানাও করতে পারে না। তবে মাস্ক না পরলে আমরা যাত্রীদের ট্রেনে উঠতে দিব না।’
স্টেশনে হ্যান্ড স্যানিটাইজ করা হচ্ছে না- যাত্রীদের এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে রেলের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘যাত্রীরা নিজেরা নিয়ে আসেন না কেন? এতগুলো যাত্রী আমরা কেমনে দেব? আমরা প্রাথমিকভাবে একটা ব্যবস্থা করতে পারি। তবে স্ব-উদ্যোগে যাত্রীরা আলাদা স্যানিটাইজাইরের বোতল সঙ্গে রাখতে হবে। স্টেশনগুলোতে প্রবেশের সময় আমরা একবার স্যানিটাইজ করে দেব।’
তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি স্ব-উদ্যোগে মানতে হবে। এখন সব যদি রেলের উপর চাপানো হয়, রেল কেন দেয় না? তাহলে তো ঠিক হবে না। স্টেশনের ভেতর স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে বাড়তি নির্দেশনা দেওয়া হবে।’
এসআর/এফআর