স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেছেন, অন্যান্য বছর শুধু ঢাকা ও চট্টগ্রামে ডেঙ্গু রোগের বিস্তার লক্ষ্য করেছি। কিন্তু এবার পুরো দেশেই ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হচ্ছেন। এর মধ্যে অনেকেই মারা যাচ্ছেন, যা আমাদের ব্যথিত করছে। ডেঙ্গু জ্বরের বাহক এডিসের বিস্তাররোধে বিশ্বব্যাপী যেসব পদ্ধতি প্রচলিত আছে আমরা সবই অনুসরণ করছি।

বৃহস্পতিবার (১০ আগস্ট) সচিবালয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগে ‌‘সারাদেশে ডেঙ্গুসহ অন্যান্য মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে গৃহীত কার্যক্রম পর্যালোচনার লক্ষ্যে’ বিশেষ সভার (ভার্চুয়াল) আগে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি।

সরকার বা সিটি কর্পোরেশনগুলো ডেঙ্গু প্রতিরোধে আগে ব্যবস্থা না নেওয়ায় এ ভয়াবহতা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, এটা একেবারেই ঠিক নয়। তারা যখন আমাদের সামনে কথা বলেন এসব তখন উল্লেখ করেন না। আগে থেকে কী ব্যবস্থা নেব? আমরা গত ৫ জানুয়ারি সভা করেছি। সেই সভায় কীট তত্ত্ববিদরাও উপস্থিত ছিলেন। তারা তো তখন এ ব্যাপারে আমাদের কোনো দুর্বলতা আছে বলে বলেননি। আমাদের কোনো পদক্ষেপে ঘাটতি আছে কি না, সেটাও বলেননি।

যে পদক্ষেপ নেওয়ার দরকার ছিল সেটা নেওয়া হয়েছিল দাবি করে মন্ত্রী বলেন, জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সব সময়ে মশক নিধন কার্যক্রম অব্যাহত আছে। মশা এবং ডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি পায় বৃষ্টি যখন শুরু হয় তখন থেকেই। এ জন্য আমরা ৫ জানুয়ারি সভা করেছি। সে সভা বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। আমরা তো কেউ অনুপস্থিত ছিলাম না।

সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা (ডেঙ্গু) সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করে আবহাওয়ার উপর। আমাদের ক্লাইমেট চেঞ্জের কারণে এটা হচ্ছে। শুধু আমাদের দেশে নয়, আজকের তথ্য হলো পৃথিবীর ১৪৮টি দেশে ডেঙ্গু মাত্রাতিরিক্ত পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, পৃথিবীর অর্ধেক মানুষ ডেঙ্গু রোগের ঝুঁকিতে আছেন। এ অবস্থায় আমরা আমাদের পক্ষ থেকে যেসব পদক্ষেপ নেওয়ার সেগুলো নিয়েছি।

তিনি বলেন, আরও একটা পদক্ষেপ হলো সকল মানুষকে সচেতন করা। এই ডেঙ্গু রোগ মোকাবিলা করার জন্য, এডিস মশা মারার জন্য সবার অংশগ্রহণ করা। আমরা সমস্যাটা মোকাবিলা করছি কোথায়? প্রত্যেকে প্রত্যেকের স্থাপনাগুলো পরিষ্কার করছেন না। যে সব লার্ভা আছে, যে সব ডিম আছে, সেগুলো যদি পরিষ্কার করে ফেলা হয় তাহলে-তো মশা থাকবে না।

মন্ত্রী বলেন, সিঙ্গাপুর অত্যন্ত পরিচ্ছন্ন শহর কিন্তু সেখানেও এ মুহূর্তে আমাদের কাছে তথ্য আছে প্রায় পাঁচ-সাত হাজারের মতো ডেঙ্গু আক্রান্ত আছে। বিভিন্ন দেশেই আছে। সবাই মিলে আমরা যেভাবে কাজ করছি, সেখানে আমি মনে করি জনগণকে যদি আরও সম্পৃক্ত করতে পারতাম, সেক্ষেত্রে আরও সফল হতাম।

তিনি বলেন, আমরা টেলিভিশনে ব্যাপক প্রচার চালাচ্ছি। কীটনাশক ওষুধ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সরবরাহ করা হচ্ছে। আমি একটা সাধারণ পদ্ধতির কথা বলি। আমি নিজেও উপস্থিত ছিলাম। মশারির ভেতরে অসংখ্য মশা ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এরপর স্প্রে করা হয়েছে। কয়েক মিনিট পর দেখা হয়েছে মশা মারা গেছে কিনা। একইভাবে লার্ভাও দেখা হয়েছে। সেগুলো মারা গেছে কিনা- এগুলো পরীক্ষা করে দেওয়া।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেন, দুই কোটি মানুষের ঢাকা শহর। সারা বাংলাদেশের আউটার জেলাগুলোতে হয়তো এ প্রথম তারা আক্রান্ত হচ্ছে। সতর্কতার জন্য একটু সময় লাগতে পারে কিন্তু ঢাকা শহরে তো আমি মনে করি সব সচেতন হয়ে যেতে পারি। এখানে সব শিক্ষিত লোকজন।

সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সচেতনতা আমাদের বৃদ্ধি করতে হবে ব্যাপক পর্যায়ে। আমরা যদি সচেতন না করতে পারতাম তাহলে আজকে হয়ত ঢাকা শহরে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ৫ থেকে ১০ লাখ হয়ে যেত।

আজকের সভার নির্দেশনার বিষয়ে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধী কার্যক্রমে বিভাগীয় কমিশনার, ডিসি, বিভিন্ন পৌরসভার মেয়রদের যুক্ত করা হবে। যেহেতু এডিস মশা এখন শুধুমাত্র ঢাকা শহরের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় সে কারণে সারা দেশব্যাপী দ্রুত কার্যক্রম শুরুর ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে হবে। সে ব্যাপারে নির্দেশনা দেওয়া। এজন্য আমরা প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ দিয়েছি সিটি কর্পোরেশনগুলোকে। অন্যান্য জেলাতেও আর্থিক এবং কারিগরি কি-কি সহায়তা দিতে পারি, সেজন্য আজকের এ সভা করা।

এসএইচআর/এসকেডি