প্রাথমিকভাবে দুটি নতুন রাজনৈতিক দলের আবেদন যাচাই-বাছাই করে নিবন্ধনের সিদ্ধান্তে পৌঁছায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তবে দুই দলের পক্ষে-বিপক্ষে শুনানির পরই নিবন্ধনের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানিয়েছিল ইসি। আজ দল দুটির শুনানি শেষে নতুন দল নিবন্ধনের বিষয়ে কমিশন সিদ্ধান্ত দেবে বলে জানান ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম।

সোমবার (৭ আগস্ট) নির্বাচন ভবনে নিবন্ধন সংক্রান্ত শুনানি শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান ইসি সচিব।

তিনি বলেন, দুটি দলকে যাচাই-বাছাইয়ের পর নিবন্ধন দেওয়ার জন্য তালিকায় রাখা হয়েছিল। একইসঙ্গে দল দুটির বিরুদ্ধে কারো কোনো অভিযোগ থাকলে তাও জানাতে বলা হয়েছিল। সে অনুযায়ী শুনানি সম্পন্ন হয়েছে। এটি একটি বিচারাধীন বিষয়। তাই কিছু বলা ঠিক হবে না। শুনানির যুক্তি-তর্ক পর্যালোচনার পর নিবন্ধন নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবে কমিশন।

নির্বাচন কমিশন নিবন্ধন দেওয়ার জন্য যাচাই-বাছাই শেষে প্রাথমিক তালিকায় রেখেছিল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টিকে (বিএসপি)। ইসির দেওয়া সময়ের মধ্যে এই দুটি দলের বিরুদ্ধে মোট তিনটি অভিযোগ পড়ে।

বিএনএমকে ভুঁইফোড় সংগঠন আখ্যা দিয়ে নিবন্ধন না দেওয়ার জন্য আবেদন জানান আইনজীবী আবু নাছের খান। আর পৈত্রিক সম্পত্তি দখল করে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও খানকা দরবার শরিফকে রাজনৈতিক দল হিসেবে উপস্থাপন করায় এবং অন্য দলের নামের সঙ্গে মিল রাখায় বিএসপিকে নিবন্ধন না দেওয়ার আবেদন পড়ে দুটি।

বিএসপির বিরুদ্ধে সম্পত্তি দখলের অভিযোগ করেন দলটির সভাপতি শাহজাদা সৈয়দ সাইফুদ্দিন আহমদের ছোট ভাই শাহাজাদ সৈয়দ শহিদউদ্দিন আহমদ মাইজভাণ্ডারি ও তার দুই বোন। আর নামের মিল থাকার অভিযোগ তোলেন বাংলাদেশ শ্রমজীবী পার্টির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি লায়ন আব্দুল কাদের জিলানী।

শুনানি শেষে অ্যাডভোকেট আলী নাছের খান বলেন, বিএনএম ইসির নিবন্ধনের জন্য কোনো শর্তই পূরণ করতে পারেনি। এ বিষয়ে আমরা যুক্তি উপস্থাপন করেছি। তিনি বলেন, ভূঁইফোঁড় সংগঠনগুলোকে যদি রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন দেওয়া হয় তাহলে শপথ ভঙ্গ হবে নির্বাচন কমিশনের।

তবে বিএনএম যুগ্ম আহ্বায়ক ব্যারিস্টার এম সারোয়ার হোসেন বলেন, অভিযোগীকারী এবি পার্টির একজন সদস্য। প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়ে অভিযোগ করেছেন। আমাদের দল সাত জুলাই ২০২১ সালে প্রতিষ্ঠা হয়েছে। প্রথম থেকে যখন প্রয়োজন তখন আমাদের কার্যক্রম চালিয়েছি।

বাংলাদেশ শ্রমজীবী পার্টির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি লায়ন আব্দুল কাদের জিলানী বলেন, আমার কথা হলো বাংলাদেশ শ্রমজীবী পার্টি-বিএসপি, ২০১৭ সালে ৬ জুলাই আত্মপ্রকাশ ঘটিয়েছি। আজ হঠাৎ করে একটি রাজনৈতিক সংগঠন আসলো, রাজনৈতিক সংগঠন না তারা আসলে ধর্মীয় সংগঠন; আমরা জানি মাইজভাণ্ডারি বা খানকা। সেই ভদ্রলোক এসে রাজনৈতিক দল গঠন করল, আর আমাদের বিএসপির সংক্ষিপ্ত নামটি উনি ব্যবহার করলেন। এটা আমি কোনোভাবে মেনে নিতে পারিনি। দলের নাম ডবল হতে পারে না।

অন্যদিকে শাহাজাদা সৈয়দ শহিদউদ্দিন আহমদ বলেন, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানটা এই দরবারকে পুঁজি করে, সেটাকে তার ভাই রাজনৈতিক হাতিয়ার বানাতে চান। যার কাছে নিজের পিতা, নিজের ছোট ভাই-বোন, অনুসারী আশেকানরা নিরাপদ নয়।

তবে এসব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির স্থায়ী পরিষদের মেম্বার মো. ইব্রাহীম মিয়া বলেন, আমরা সব শর্ত পূরণ করেছি। যে অভিযোগ ছিল, তা মিথ্যা। কারো পৈত্রিক সম্পত্তিতে অফিস করার অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তিনি বলেন, যিনি অভিযোগ করেছেন, তার পিতা একটি পত্রিকায় ২০০৮ সালে বিজ্ঞাপন দিয়েছিলেন তার বিরুদ্ধে, যেন জানাজাতেও তিনি অংশ না নেন। এছাড়া, তার পিতা পাঁচলাইশ ও ফটিকছড়ি থানায় দুটি জিডি করে গেছেন তার বিরুদ্ধে। আমরা আর কোনো বক্তব্য দেওয়ার প্রয়োজন মনে করি না।

বাদী-বিবাদীরা সাংবাদিকদের জানান, কমিশন তাদের বক্তব্য শুনেছেন। পর্যালোচনা করে রায় দেবেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের সভাপতিত্বে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। এতে অন্য নির্বাচন কমিশনাররাও উপস্থিত ছিলেন।

এসআর/এসএসএইচ/