পূর্ব শত্রুতার জের ধরে রাজধানীর উত্তরখানে হৃদয় হত্যার ঘটনায় কিশোর গ্যাং চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। গ্রেপ্তাররা হলেন– আরমান হোসেন (১৯) ও নজরুল ইসলাম (১৯)।

রোববার (৬ আগস্ট) রাতে রাজধানীর উত্তরখান এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেপ্তার করে পিবিআই ঢাকা মেট্রোর (উত্তর) একটি বিশেষ টিম।

সোমবার (৭ আগস্ট) বিকেলে পিবিআই সদরদপ্তরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) আবু ইউসুফ জানান, গত ২০১৮ সালের ২১ মার্চ রাজধানীর উত্তরখান থানায় একটি হত্যা মামলা হয়। মামলা নং-১৬।

মামলার বাদী লাবনী বেগম এজাহারে উল্লেখ করেন, তার ছেলে ভিকটিম মো. কামরুল হাসান ওরফে হৃদয় (১৬) ঢাকার দক্ষিণখান থানাধীন ফায়দাবাদ দি চাইল্ড ল্যাবরেটরী স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র।

হৃদয় বিকেল ৪টায় স্কুল শেষে বাসায় আসে ও খেলাধুলা করার কথা বলে বাসা থেকে বের হয়ে যায়। বিকেল পৌনে ৬টায় হৃদয়ের বন্ধু সাব্বির ও মেহেদী কল করে জানায়, কামরুল হাসান হৃদয় ছুরিকাহত হয়ে মুমূর্ষু অবস্থায় উত্তরা-আইচি হাসপাতালে আছে।

পরিবার সেখানে ছুটে গেলে আইচি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, অজ্ঞান অবস্থায় উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। সেখানে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক হৃদয়কে মৃত ঘোষণা করেন।

বাদী হৃদয়ের বন্ধুদের মাধ্যমে জানতে পারেন, ২০১৯ সালের ২১ মার্চ বিকেল ৫টার সময় তারা উত্তরখান থানাধীন রাজাবাড়ীর বহরেরটেক বাগানে ঘুরাফেরা করার সময় পূর্ব শক্রতার জের ধরে বাদীর ছেলের পূর্ব পরিচিত রাব্বী ওরফে টেলি রাব্বি গ্রুপের ১০-১৫ জন এবং ছোটন ওরফে বিগবস ছোটন গ্রুপের ১০-১২ জনসহ অজ্ঞাতনামা ১০-১২ জন হৃদয়কে হত্যার উদ্দেশ্যে বুকের বাম পাশে নিচে ধারালো ছুরি দিয়ে আঘাত করে।

সংবাদ পেয়ে উত্তরখান থানা পুলিশ উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে বাদীর ছেলে হৃদয়ের সুরতহাল রিপোর্ট শেষে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।

মামলায় তিনি ২৩ জনের নাম উল্লেখ করেন ও ১০-১২ জন অজ্ঞাতনামা পলাতক আসামি করে মামলা করেন।

২০২০ সালের ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১ বছর ৯ মাস তদন্ত শেষে এজাহারনামীয় ১০ জন ও তদন্তে প্রাপ্ত আট জন আসামি গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আদালতে প্রেরণ করা হয়। ঘটনার সময় তিনজন প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী আদালত জবানবন্দি দেন। তদন্ত শেষে মোট ১৮ জনের মধ্যে ১৫ জন আসামির বিরুদ্ধে উত্তরখান থানার অভিযোগপত্র এবং তিন জনের বিরুদ্ধে দোষীপত্র দাখিল করেন থানা পুলিশের তদন্ত কর্মকর্তা।

আদালত গত বছরের ২২ এপ্রিল অভিযোগপত্রে ৯ জন এজাহারনামীয় আসামির বিরুদ্ধে ঘটনায় জড়িত থাকার সাক্ষ্য-প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও তাদের নাম ও ঠিকানা সঠিক না পাওয়ায় অব্যাহতির আবেদন করায় আদালত তদন্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করেননি। সঠিকভাবে ও যথাযথভাবে তদন্ত করা হলে ঘটনার সঙ্গে জড়িত আসামিদের নাম ও ঠিকানা সংগ্রহ সম্ভব মর্মে আদালত মামলাটি অধিকতর তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পিবিআইকে আদেশ দেন।

পিবিআই ঢাকা মেট্রো (উত্তর) তদন্তের দায়িত্ব নিয়ে তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করেন। তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আশরাফুল আলম জানতে পারেন মামলার এজাহারনামীয় আরমান হোসেন ও নজরুল ইসলাম ঘটনার পর থেকে পলাতক। রোববার রাতে অভিযান পরিচালনা করে ঢাকার উত্তরখান থানা এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করেন।

গ্রেপ্তাররা জিজ্ঞাসাবাদে জানান, আরমান হোসেন (১৯) ও নজরুল ইসলাম (১৯) উত্তরখান ও দক্ষিণখান এলাকার শাহীন ওরফে ফরেন শাহীন (২৭) ও মুরাদ হোসেন ওরফে রাব্বি ওরফে টেলি রাব্বির (২৪) নেতৃত্বে ১৫-২০ জন শিশু-কিশোর নিয়ে কিশোর গ্যাং পরিচালনা করে আসছিলেন।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু ইউসুফ জানান, হৃদয় হত্যা মামলার আসামি ও একই এলাকার আক্তারুজ্জামান ছোটন ওরফে বিগবস ওরফে বড় ছোটন (২৬) ১০-১৫ জন শিশু-কিশোর নিয়ে কিশোর গ্যাং পরিচালনা করে এক গ্রুপ অন্য গ্রুপের ওপর প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে প্রকাশ্যে ঘটনাস্থল ও আশপাশের এলাকায় মহড়া দিত। গ্রেপ্তার দুজন হৃদয় মামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িত মর্মে স্বীকার করেন। মামলাটি পিবিআই ঢাকা মেট্রো (উত্তর) এ তদন্তাধীন। গ্রেপ্তার দুজনের জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, একাধিক আসামি শনাক্তকরণ, নাম ও ঠিকানা সংগ্রহসহ গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত আছে।

জেইউ/এসএসএইচ/