দেশের মানুষকে গুজবে কান না দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোববার প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় সমাপনী বক্তব্যে এ পরামর্শ দেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, এখন থেকে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। কিছু লোক আছে যারা এখানে বিভিন্ন অপরাধ করে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছে। সেখানে টাকা পায় কোথা থেকে? সেটাই প্রশ্ন। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করে দিয়েছি এর মাধ্যমেই তারা অপপ্রচার চালায়। কাজেই গুজবে কান না দেওয়া, অপপ্রচারে কান না দেওয়া, তার উপযুক্ত জবাব দেওয়ার ক্ষেত্রে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। সেই সঙ্গে আমাদের উন্নয়নের কথা মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। আমি বিশ্বাস করি আপনারা যদি মানুষের কাছে যান, আর যদি বলেন আপনাদের জন্য এই কাজ করেছি, ভবিষ্যতে এটা করা হবে তাহলে অবশ্যই মানুষ আওয়ামী লীগকে ভোট দেবে।

তিনি বলেন, সামনে আমাদের নির্বাচন, এ ব্যাপারে এখন থেকেই সকলকে প্রস্তুতি নিতে হবে। আমাদের একমাত্র শক্তি জনগণ। জনগণের শক্তিই হচ্ছে আওয়ামী লীগের একমাত্র শক্তি, কারণ আওয়ামী লীগ এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কোনো দিন কারও কাছে মাথা নত করেননি। নিজের জীবনকে কবুল করে তিনি এই দেশের মানুষের মুক্তি এনে দিয়েছেন। আমরা তারই আদর্শের অনুসারী। আমরা কারও কাছে মাথা বিকাই না, মাথা নত করি না।

আরও পড়ুন : যাকে মনোনয়ন দিই, তাকেই জয়ী করবেন

সরকার প্রধান বলেন, আর তাদের মুখে যখন বড় বড় কথা শুনি তখন অবাকই লাগে। তারা নাকি অনেক কিছু করবে, ক্ষমতায় তো ছিল, লুটপাট করেছে, মানিলন্ডারিং করেছে, পাচার করেছে। নিজেদের ভাগ্য তারা গড়েছে, বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য তারা গড়েনি। বাংলাদেশর মানুষের ভাগ্য গড়া হয়েছে শুধুমাত্র আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় এসেছে তখনই।

তিনি বলেন, একটা কথা মনে রাখতে হবে ২০১৪ সালের নির্বাচন ঠেকাতে এই বিএনপি ৫২৫টার মতো স্কুল পুড়িয়েছিল, ৩২৫টা গাড়ি পুড়িয়েছিল, ২৯টা লঞ্চ, ৭০টা সরকারি অফিস, ৬টা ভূমি অফিস, ৩ হাজার মানুষকে আগুন দিয়ে পুড়িয়েছে, ৫০০ মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে।

মানুষ পুড়িয়ে আর বাসে আগুন দিয়ে সরকার পতন হবে না উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, সাধারণ মানুষ বাসে যাচ্ছে, তাদের পুড়িয়ে মারা হচ্ছে, এটা কি এটা তাদের আন্দোলন? তাদের আন্দোলন মানুষকে পুড়িয়ে মারা, মানুষের জন্য কাজ না করা, তারা ভাবছে, মানুষকে আগুন দিয়ে পোড়ালে, গাছ কাটলে আর বাসে আগুন দিলেই সরকার পড়ে যাবে। সরকার এত কাঁচা না, আওয়ামী লীগের শেকড় প্রোথিত এ মাটিতে। আওয়ামী লীগ এ দেশের মাটি ও মানুষের মধ্য থেকে উঠে এসেছে। সেখান থেকে আমরা কাজ করি মানুষের জন্য কারণ মানুষের বিশ্বাস আস্থা আছে।

আরও পড়ুন : মানুষের ভোটের অধিকার সুরক্ষিত করতে আ.লীগই সংগ্রাম করেছে

তিনি বলেন, কিছু দিন আগে আমাদের হুমকি দিল, ১০ ডিসেম্বর নাকি সরকার উৎখাত করবে। কী করতে পেরেছে? কিছু করতে পেরেছে? কেন পারেনি? কারণ মানুষের সমর্থন পায়নি। কিন্তু খালেদা জিয়া ভোট চুরি করার পর আমরা কিন্তু উৎখাত করেছি। সেটা মাথায় আছে, ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি, আর ২০০৬ সালে সেটাও তো নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছিল, ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোট সেটাও কিন্তু করতে পারেনি। উৎখাত হতে হয়েছে। চোরের মায়ের বড় গলা, বড় বড় কথা বলে বিএনপি।

শেখ হাসিনা বলেন, ঘর দিয়েছি, সেখানে কে বিএনপি, কে আওয়ামী লীগ, কে কোন পার্টি করে আমরা কিন্তু তা দেখিনি। সেখানে কে ভূমিহীন আমরা সেটাই দেখেছি। ভূমিহীনদের ঘর দিয়েছি। দল মত সেটা তাদের ইচ্ছা, আমি যখন কাজ করেছি দেশের মানুষের জন্য করেছি। আমাদের উন্নয়নটা সমগ্র বাংলাদেশে; সেখানে কোন অঞ্চলে ভোট পেয়েছি, কোন অঞ্চলে ভোট পাইনি, সেটা দেখিনি।

দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের দায়িত্ব আছে, যেটুকু আমরা করি, সেটুকু মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া। বাংলাদেশের যে পরিস্থিতি ছিল আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে সরকার গঠন করে কী কী পরিবর্তন করেছে। এই সাড়ে ১৪ বছর অগ্নি সন্ত্রাস জ্বালাও পোড়াও, অবরোধ কর্মসূচি অনেক কিছুই বিএনপি করেছে। কিন্তু জনগণের কাছে আমাদের গ্রহণযোগ্যতা কমাতে পারিনি।

তিনি বলেন, এতিমের টাকা আত্মসাৎ করে খালেদা জিয়া  আজ সাজাপ্রাপ্ত, আর ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাকারবারি, দুর্নীতি মানিলন্ডারিং এবং অবৈধ সম্পদের জন্য সাজাপ্রাপ্ত তারেক জিয়া। লন্ডনে তারেক জিয়া এবং তার বউও সাজা পেয়েছে। এ মামলা তো আওয়ামী লীগ করেনি। এ মামলা তো খালেদা জিয়ার প্রিয় ইয়াজউদ্দিন, ফখরুদ্দিন, মইনউদ্দিনরাই করেছে। সেই মামলা চলতে চলতে এত বছরে রায় হয়েছে।

এমএসআই/এসকেডি