‘জানি বাধা আসবে, তাই গত সপ্তাহেই ঢাকায় এসেছি’
‘গতবারের সমাবেশে ঢাকায় ঢুকতে পারিনি। পুলিশ বাধা দিয়েছিল। এবার সেটি মাথায় নিয়ে এক সপ্তাহ আগেই ঢাকায় এসেছি। কারণ, আমাদের প্রাণের দাবি, যেভাবেই হোক এ সরকারকে ক্ষমতা থেকে নামাতে হবে। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে।’
নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে কথাগুলো বলছিলেন লালমনিরহাটের কালিগঞ্জ থেকে আসা বিএনপির সদস্য ফারহান উদ্দিন আহমেদ। শুধু ফারহান উদ্দিন নন, তার মতো হাজার হাজার কর্মী বিএনপির সমাবেশে যোগ দিতে আগেভাগে ঢাকায় পৌঁছেছেন। পথে যাতে পুলিশ কিংবা ক্ষমতাসীন দলের কর্মীদের বাধার মুখে পড়তে না হয়।
বিজ্ঞাপন
সেখানে উপস্থিত বিএনপির নেতাকর্মীরা জানান, ভোগান্তি, হয়রানি এমনকি বিনা বাধায় সমাবেশে যোগ দিতে এক বা দুদিন নয় এক সপ্তাহ আগে ঢাকায় অবস্থান নিয়েছেন বিএনপির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। তাদের একটি অংশ বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) সন্ধ্যার পর দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে হাজির হন।
সরেজমিন দেখা গেছে, দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে বিএনপির নয়াপল্টন কার্যালয়ের সামনে উপস্থিত হওয়া নেতাকর্মীরা কেউ ছবি তুলছেন, কেউ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে লাইফ করছেন। কেউ আবার নিজ দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে খোশগল্পে মেতে উঠেছেন। এছাড়া নিজ নিজ নেতাদের ছবি টানাতে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায় অনেককে।
লালমনিরহাট জেলার কালিগঞ্জ থেকে আসা বিএনপির সদস্য ফারহান উদ্দিন আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘ঢাকার সমাবেশে যোগ দিতে এক সপ্তাহ আগে এসেছি। এখানে এসে এলাকার নেতাকর্মীরা কে কোথায় অবস্থান নিয়েছেন, সে বিষয়ে খোঁজখবর নিয়েছি। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছি। আজ সন্ধ্যার পর সবাইকে নিয়ে সমাবেশস্থলে উপস্থিত হয়েছি।’
আরও পড়ুন- নয়াপল্টনে হাজারো নেতাকর্মী, উৎসবমুখর পরিবেশ
‘গত মঙ্গলবার পর্যন্ত যেসব নেতাকর্মী সমাবেশের উদ্দেশ্যে ঢাকায় এসেছেন, তাদের কোনো ভোগান্তিতে পড়তে হয়নি। কিন্তু যারা গতকাল (বুধবার) ও আজ (বৃহস্পতিবার) ঢাকায় আসার চেষ্টা করেছেন, তাদের বাধা দেওয়া হয়েছে। আগামীকাল শুক্রবার যারা আসবেন, তাদের ঢাকায় ঢুকতেই দেবে না পুলিশ।’
জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার ঘোষেরপাড়া ইউনিয়ন বিএনপির সহ-প্রচার সম্পাদক আব্বাস আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘সমাবেশে যোগ দিতে গত সোমবার ঢাকায় এসেছি। আমরা এই সরকারের হাত থেকে রক্ষা পেতে চাই। যেকোনো মূল্যে এই সরকারের পদত্যাগ চাই।’
নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সদস্য শহিদুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘গত প্রোগ্রামের দিন সকালে রওনা দিয়ে পুলিশের বাধায় আসতে পারিনি। তাই এবার এক দিন আগেই ঢাকায় চলে এসেছি। আজ সারারাত এখানে থাকব। আগামীকাল সমাবেশ শেষে বাড়ি যাব।’
‘আসার সময় দেখেছি, পুলিশ চেকপোস্ট রেডি করছে। আজ রাত কিংবা আগামীকাল সকাল থেকে মোড়ে মোড়ে জনগণকে চেক করা হবে। তাদের ঢুকতে দেওয়া হবে না, হয়রানি করা হবে। আমরা জালিম এ সরকারের হাত থেকে মুক্তি চাই।’
সমাবেশ শুরুর ১৮ ঘণ্টা আগে শহিদুল, আলী আব্বাস ও ফারহানের মতো হাজার হাজার তৃণমূলের নেতাকর্মী নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হয়েছেন। রাতেই জনারণ্যে পরিণত হয়েছে নয়াপল্টন। বহুদিন পর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে যেন উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে— জানান উপস্থিত নেতাকর্মীরা।
এদিকে, বৃহস্পতিবার বিকেলে বিএনপিকে নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করার অনুমতি দেয় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। এ খবর নেতাকর্মীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে ধীরে ধীরে তারা সেখানে জড়ো হতে থাকেন। বিকেলের দিকে নেতাকর্মীরা সড়কে অবস্থান করতে থাকলে পুলিশ তাদের বারবার সরিয়ে দেয়। সন্ধ্যার পর সেই চিত্র পাল্টে যায়।
নেতাকর্মীদের উপস্থিতি বাড়তে থাকায় পুলিশের সক্রিয়তাও কমতে থাকে। একপর্যায়ে তারা নীরব দর্শকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। তবে, মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষায় দলটির কার্যালয়ের সামনের সড়কে বুধবার (২৬ জুলাই) বিকেল থেকে রাখা প্রিজন ভ্যান ও সাঁজোয়া যান তখনও অবস্থান করতে দেখা যায়।
বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, শুক্রবার (২৮ জুলাই) দুপুর ২টায় আনুষ্ঠানিকভাবে নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে মহাসমাবেশ শুরু হবে। প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ, সংসদ ভেঙে দেওয়া, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের এক দফা দাবিতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এ মহাসমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
কারাগারে বিএনপির ৪৭৩ নেতাকর্মী
মহাসমাবেশের এক দিন আগে অর্থাৎ বুধবার সারাদিন ও রাতে অভিযান চালিয়ে বিএনপির ৪৭৩ নেতাকর্মীকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পরে তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
ঢাকার মহানগর ও জেলার বিভিন্ন থানা থেকে গ্রেফতার নেতাকর্মীকে বৃহস্পতিবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ও চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করানো হয়। আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
এমআই/এমএআর