বিএনপির মহাসমাবেশ
পল্টনের প্রতি ইঞ্চি নজরদারিতে থাকবে : পুলিশ
বৈঠকে অংশ নেওয়া পুলিশের আরেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, কঠোর অবস্থানে থাকার নির্দেশনা পেয়েছি। বিশৃঙ্খলার চেষ্টা হলে বা কোনো কারণে যদি অ্যাকশনে যেতে হয় সেক্ষেত্রে মির্জা আব্বাসের বাড়ির ওদিকে বিএনপিকে পালানোর রাস্তা রেখে অ্যাকশনে যাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
আগামীকাল শুক্রবার পল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে বিএনপিকে মহাসমাবেশ করার অনুমতি দিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। এই মহাসমাবেশ ঘিরে নিরাপত্তা নিশ্চিতে নয়াপল্টনসহ আশপাশের এলাকা সর্বোচ্চ নজরদারিতে রাখবে পুলিশ। নাশকতা ও বিশৃঙ্খলার বিষয়টি বিবেচনায় পল্টনের প্রতিটি ইঞ্চি নজরদারিতে থাকবে বলে জানিয়েছেন মাঠ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তারা। কাকরাইল, পল্টন, বিজয়নগর ও ফকিরাপুলের প্রতিটি পয়েন্টে চেকপোস্ট থাকবে। একইসঙ্গে আশপাশের অলিগলিতে থাকবে নজরদারি।
কোনো কারণে মহাসমাবেশ ঘিরে বিশৃঙ্খলা হলে পুলিশ অভিযান চালাবে। সেক্ষেত্রে বিএনপি নেতাকর্মীদের পালানোর রাস্তা রেখে মূল সড়কসহ অলিগলিতে ব্যারিকেড রাখার প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মাঠ পর্যায়ে নিয়োজিত একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
তারা জানিয়েছেন, আবাসিক হোটেল, বিএনপির নেতা-কর্মীদের বাসাসহ সম্ভাব্য সব স্থানে পুলিশের উপস্থিতি থাকবে। রাজধানীর প্রবেশপথগুলোতে পোশাকে ও সাদা পোশাকে থাকবেন পুলিশ সদস্যরা। ঢাকায় প্রবেশমুখের সবকটি পয়েন্টে বিএনপি নেতা-কর্মীদের নানা উছিলায় বাধা দানেরও মৌখিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বিশৃঙ্খলা ও নাশকতার ঘটনা যেন না ঘটে সেজন্য গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সার্ভিলেন্স বাড়ানো হয়েছে। সাদা পোশাকে মোতায়েন থাকবেন বিভিন্ন গোয়েন্দা বাহিনী ও সংস্থার সদস্যরা। বিশৃঙ্খলা মোকাবেলায় প্রস্তুত থাকবে ডিএমপির জলকামান, সাঁজোয়া যান, রেকার গাড়ি ও ব্যারিকেড।
ডিএমপি সূত্রে জানা গেছে, দুই দলের সমাবেশকে ঘিরে অন্তত ৩০ হাজার পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবে। র্যাব, আনসার, এপিবিএনের অন্তত পাঁচ হাজার সদস্য মোতায়েন থাকবে পল্টন, কাকরাইল, ফকিরাপুল, মতিঝিল, গুলিস্তানসহ সমাবেশের নিকটস্থ এলাকায়।
গত বুধবার (২৬ জুলাই) ডিএমপি সদর দপ্তরের কমিশনার কার্যালয়ে ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে র্যাব, বিজিবি, আনসার, এপিবিএন ও গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক হয়।
ওই বৈঠকে অংশ নেওয়া ডিএমপির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা পোস্টকে বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার লক্ষ্যে সমাবেশ ঘিরে একটি সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। র্যাব কোন দিকে থাকবে, পলিটিক্যাল বিশৃঙ্খলা মোকাবেলায় প্রস্তুত করা পুলিশের স্পেশাল ফোর্স কোন দিকে থাকবে, আনসার ও এপিবিএন কোন দিকে থাকবে তা নির্ধারণ করা হয়েছে। ডিএমপির চৌকস সদস্যদের নিয়ে গঠিত স্পেশাল ফোর্স সবসময় প্রস্তুত থাকবে। বড় ধরনের ঝামেলা হলে তারা সরাসরি অ্যাকশনে যাবে।
বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আইজিপি, ডিএমপি কমিশনারসহ ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের মধ্যে বৈঠক হয়েছে। সেখানে কঠোর অবস্থান নেওয়ার বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসে।
ডিএমপির একটি সূত্র জানায়, গত বুধবার ডিএমপি কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে বিজিবি থাকবে স্ট্যান্ডবাই। বিশেষ পরিস্থিতি তৈরি হলে তারা রেসপন্স করবেন। পাশাপাশি ডিএমপি সদর দপ্তরে স্থাপন করা হবে কন্ট্রোল রুম। সেখানে বিজিবি ও আনসারের কয়েক প্লাটুন সদস্য থাকবেন। গোয়েন্দা সংস্থা, আনসার, বিজিবি, র্যাব ও ঢাকা হাইওয়ে রেঞ্জের কর্মকর্তারা কন্ট্রোল রুমে বসে দুই সমাবেশে সার্বক্ষণিক নজরদারি রাখবেন।
বৈঠকে অংশ নেওয়া আরেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, কঠোর থাকার নির্দেশনা পেয়েছি। নির্দেশনার বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ কাল বিএনপি নেতা-কর্মীদের দেওয়া হবে না। বিশৃঙ্খলার চেষ্টা হলে বা কোনো কারণে যদি অ্যাকশনে যেতে হয় সেক্ষেত্রে মির্জা আব্বাসের বাড়ির ওদিকে বিএনপিকে পালানোর রাস্তা রেখে অ্যাকশনে যাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
ডিএমপির একাধিক ক্রাইম বিভাগের কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিশৃঙ্খলা ও নাশকতার ঘটনা যেন না ঘটে সেজন্য গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সার্ভিলেন্স বাড়ানো হয়েছে। সাদা পোশাকে মোতায়েন থাকবেন বিভিন্ন গোয়েন্দা বাহিনী ও সংস্থার সদস্যরা। বিশৃঙ্খলা মোকাবেলায় প্রস্তুত থাকবে ডিএমপির জলকামান, সাঁজোয়া যান, রেকার গাড়ি ও ব্যারিকেড।
নির্বাচনের ঠিক পাঁচ মাস আগে রাজধানীতে আগামীকাল দুই বড় দলের সমাবেশ কর্মসূচিকে ঘিরে নাশকতার চেষ্টা বা বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টাকারীদের খুঁজে খুঁজে কঠোরভাবে আইনের আওতায় নিয়ে আসার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ।
র্যাব সদর দপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক(অপারেশনস্) কর্নেল মো. মাহাবুব আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যেন স্বাভাবিক থাকে সে চেষ্টা আমাদের থাকবে। আমরা নাশকতা ও বিশৃঙ্খলার বিষয়টি মাথায় রেখে কাজ করছি।
সমাবেশ ঘিরে কোনো ধরনের হুমকি রয়েছে কি না জানতে চাইলে বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, আমাদের কাছে বড় ধরনের কোনো হুমকি নেই। তবে কোনো কুচক্রী মহল সুযোগ নিয়ে দুর্ঘটনা বা নাশকতার ঘটনা ঘটাতে পারে। সেটা যেন না পারে সেজন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পর্যাপ্ত পুলিশ সদস্য, আনসার, এপিবিএন, র্যাব ও বিজিবি থাকবে স্ট্যান্ডবাই। আমরা সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় থাকবো। যেন কোনো কুচক্রী মহল আইনশৃঙ্খলা অবনতি বা দুর্ঘটনা ঘটাতে না পারে।
দুই দলের প্রতি অনুরোধ রেখে ডিএমপি কমিশনার বলেন, আইনশৃঙ্খলা অবনতি হওয়ার মতো কোন ধরনের কাজ করবেন না। যেকোনো দলের মধ্যে যদি আমরা এরকম দেখি তাহলে কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
নানা ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে র্যাবের
এদিকে আগামীকালের সমাবেশ ঘিরে র্যাবের ঢাকাস্থ সব কটি ব্যাটালিয়ন সার্ভিল্যান্স বাড়ানো হয়েছে। র্যাব-৪ এর পক্ষ থেকে জানানো হয়, সার্বিক আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে ও অপরাধীদের অপতৎপরতা ঠেকাতে র্যাব-৪ এর আওতাধীন এলাকায় রোবাস্ট পেট্রোলসহ গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে চেকপোস্ট মোতায়েন করে গাড়ি তল্লাশি করা হচ্ছে। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় র্যাব-৪ এর এ ধরনের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
রাজধানীর যাত্রাবাড়ীসহ র্যাব-১০ এর দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় বিশেষ নিরাপত্তা জোরদার করার কথা জানিয়েছে ব্যাটালিয়নটি। দেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক, পেশাজীবী মানুষের যাতায়াত ও নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং ছিনতাইকারী রোধকল্পে ঢাকার যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল, ডেমরা, ধোলাইপাড়, শ্যামপুর, ওয়ারী ও সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালসহ র্যাব-১০ এর দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় নিরাপত্তা প্রদানের লক্ষ্যে বিশেষ রোবাস্ট পেট্রোলের মাধ্যমে পর্যাপ্ত টহল পরিচালনা করা হচ্ছে। এছাড়া সাদা পোশাকে গোয়েন্দা সদস্যরা ডিউটিতে রয়েছেন।
আগামীকালের সমাবেশ ঘিরে র্যাবের কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাইলে র্যাব সদর দপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক(অপারেশনস্) কর্নেল মো. মাহাবুব আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যেন স্বাভাবিক থাকে সে চেষ্টা আমাদের থাকবে। আমরা নাশকতা ও বিশৃঙ্খলার বিষয়টি মাথায় রেখে কাজ করছি।
বায়তুল মোকাররম এলাকা ফাঁকা রাখার সিদ্ধান্ত
জামায়াতে ইসলামীর নেতা-কর্মীরা ব্যানারে নয়, ছদ্মবেশে কাল রাস্তায় নামতে পারে- গোয়েন্দা সংস্থার এমন তথ্য আমলে নিয়ে বাড়তি সতর্কতার নির্দেশনাও দিয়েছে ডিএমপি। জামায়াতে ইসলামী যদি মাঠে নামে তবে তাৎক্ষণিকভাবে বায়তুল মোকাররম এলাকা ফাঁকা করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও চাপে রাখার কৌশল হিসেবে জানানো হয়েছে, কাল যদি নামে-বেনামে মাঠে নামা হয় তবে তাদের আগামী ১ আগস্ট কোনোক্রমেই সমাবেশ কর্মসূচির অনুমতি দেওয়া হবে না।
ডিএমপির মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনার(ডিসি) হায়াতুল ইসলাম খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, পুলিশের পক্ষ থেকে সার্বিক প্রস্তুতি রয়েছে। ২৩ শর্তের কোনো শর্ত যেন অতীতের ন্যায় ভঙ্গ করা না হয় সে ব্যাপারে তাগিদ ও নিজস্ব মনিটরিং থাকবে।
এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সতর্ক করেছেন সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, এক দফার যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে কাল যদি জামায়াত মাঠে নামে তবে রাজনৈতিক মাঠ উত্তপ্ত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। কারণ, বিশৃঙ্খলা বা নাশকতা কিংবা রাজনীতির মাঠে শক্তি প্রদর্শনে জামায়াত কিন্তু পরীক্ষিত। জামায়াত নামলে সতর্কতা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থাও সেরকম হতে হবে।
সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে ডিএমপির মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনার(ডিসি) হায়াতুল ইসলাম খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, পুলিশের পক্ষ থেকে সার্বিক প্রস্তুতি রয়েছে। ২৩ শর্তের কোনো শর্ত যেন অতীতের ন্যায় ভঙ্গ করা না হয় সে ব্যাপারে তাগিদ ও নিজস্ব মনিটরিং থাকবে। ইনডোর সমাবেশের ক্ষেত্রে আর্চওয়ে বসিয়ে চেকিং বা তল্লাশি করা যায়। কিন্তু এরকম দুটি জায়গায় সেটি সম্ভব না। তবে আমাদের সবগুলো সম্ভাব্য গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে চেকপোস্ট ছাড়াও ব্যারিকেড থাকবে। বিশৃঙ্খলা মোকাবিলায় আমাদের বিশেষ টিম প্রস্তুত থাকবে। আশা করছি- শান্তিপূর্ণভাবেই কালকের দিনটি অতিবাহিত হবে। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলাকে কাল ছাড় দেওয়া হবে না।
জেইউ/এমজে