গত কয়েকদিনের নানা নাটকীয়তা শেষে আগামীকাল রাজধানীতে বড় কর্মসূচি করতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। নির্বাচনকে সামনে রেখে সমাবেশ-পাল্টা সমাবেশ ঘিরে হঠাৎ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রাজনীতির মাঠ। জনমনে দেখা দিয়েছে এক ধরনের ভয় ও শঙ্কা। সবার মনে প্রশ্ন- কী হয় কী হয়?

বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসেও আজ ঢাকার রাজপথ ছিল তুলনামূলক ফাঁকা। অন্যান্য সময় বৃহস্পতিবার সড়কে অনেক বেশি চাপ থাকে, আজ সেটা দেখা যায়নি। রাস্তায় যানবাহনের সংখ্যার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের উপস্থিতিও আজ কম ছিল। যেকোনো পরিস্থিতি সামাল দিতে সতর্ক অবস্থায় রয়েছে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট।

শাহবাগ, বাংলামোটর, কারওয়ান বাজার, রামপুরা, বাড্ডা, নতুন বাজার, কুড়িল, খিলক্ষেত ও বিমানবন্দর এলাকায় সরেজমিনে দেখা যায়, রাস্তায় যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। বাস, সিএনজি অটোরিকশা, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস ও পিকআপসহ সব ধরনের যানবাহনই চলাচল করছে। তবে যানবাহনের সংখ্যা তুলনামূলক অনেক কম। সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস হওয়া সত্ত্বেও বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত রাজধানীর কোনো সড়কে যানজটের চিত্র দেখা যায়নি। রাস্তায় শুধু যে গণপরিবহনের সংখ্যা কম এমনটা নয়, অন্য যেকোনো দিনের তুলনায় ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যাও কম। অনেকটা ছুটির দিনের আবহ দেখা গেছে রাজধানীর সড়কগুলোতে।

আরও পড়ুন- ২৩ শর্তে আ.লীগ-বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি

পরিবহন চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে অনেক মালিক রাস্তায় গাড়ি নামাতে চাচ্ছেন না। কালকের বিএনপি ও আওয়ামী লীগের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির আশঙ্কা আছে। তাই আজ থেকেই অনেকে গাড়ি নামাচ্ছে না।

সদরঘাট থেকে দিয়াবাড়িগামী ভিক্টর ক্লাসিক পরিবহনের চালক মো. ফারুক জানান, রাজনৈতিক দলগুলোর সমাবেশকে কেন্দ্র করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হলে সবার নজর বাসের দিকে থাকে। কর্মীরা বাসে আগুন দেয় কিংবা ভাঙচুর করে। তাই আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমাবেশ ঘোষণার পর অনেকেই গাড়ি নামাচ্ছেন না।

রাজধানীর বিমানবন্দর এলাকায় যাত্রীর জন্য অপেক্ষমাণ সিএনজি চালক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, আজ রাস্তায় গাড়ি যেমন কম তেমনি যাত্রীও নাই। আমার গাড়ির গ্যারেজ মিরপুরে। গ্যারেজে ৩০টি সিএনজি আছে, কিন্তু আজ রাস্তায় নামছে মাত্র ১৫টি। রাজনৈতিক দলের মিছিলে কখন কে গাড়ি ভাঙচুর করে ফেলে, এই ভয়ে অনেকে রাস্তায় বের হননি।

আরও পড়ুন- সমাবেশ-পাল্টা সমাবেশ, কী হতে পারে কাল?

যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাস্তায় যানজট না থাকলেও বের হতে অনেকে ভয় পাচ্ছেন। নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছেন তারা।

এ বিষয়ে পারুল আক্তার নামে এক যাত্রী বলেন, আজ দুপুরে ১ ঘণ্টায় নিউমার্কেট থেকে এয়ারপোর্ট এসেছি। রাস্তায় কোনো যানজট ছিল না। তবে গাড়িতে ভয় ভয় লাগছিল, কখন কী ঘটে! পরিস্থিতি খারাপ হলে তো নিরাপদে যাতায়াত করা যাবে না।

বাড্ডা এলাকায় কর্মরত এক ট্রাফিক পুলিশ সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা পোস্টকে বলেন, আজ রাস্তায় তেমন সিগনাল দেওয়া লাগছে না। অন্য যেকোনো বৃহস্পতিবারের তুলনায় আজ রাস্তায় গাড়ি অনেক কম। কোনো যানজট নেই।

এদিকে বর্তমান পরিস্থিতিকে বিবেচনায় নিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় চেকপোস্ট বসিয়েছে পুলিশ। এছাড়া র‍্যাবের একাধিক দল ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় টহল দিচ্ছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে র‍্যাব-৪ এর সহকারী পরিচালক এএসপি মাজহারুল ইসলাম বলেন, সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিশেষ পেট্রোল ও চেকপোস্ট জোরদার করেছি আমরা।

তিনি বলেন, অপরাধীদের ঠেকাতে ও জনগণের নিরাপত্তার জন্য রোবাস্ট পেট্রোলসহ গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি চালানো হচ্ছে।

যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় র‌্যাব এ ধরনের কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে বলে জানান তিনি।

এমএসি/এমজে