এরই মধ্যে প্রকল্পের কাজ ৮৬ শতাংশ শেষ হয়েছে/ ছবি : ঢাকা পোস্ট

>> ট্রায়াল রান শেষে উদ্বোধন হবে চলতি বছরেই
>> ট্রেন স্টেশনে থাকবে আবাসিক হোটেলের সুবিধা
>> সাত ঘণ্টায় ঢাকা থেকে যাওয়া যাবে কক্সবাজার  
>> কমবে যাতায়াত ভোগান্তি ও খরচ
>> এসি চেয়ারের ভাড়া হতে পারে ১২০০ টাকা

চলতি বছরই ঢাকা-কক্সবাজার রুটে ট্রেন চালুর পরিকল্পনা সরকারের। এরই মধ্যে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেল লাইন স্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে। পর্যটন নগরী কক্সবাজারে নির্মাণ করা হয়েছে ঝিনুকের আদলে দৃষ্টিনন্দন আইকনিক রেলস্টেশন। আগামী সেপ্টেম্বরে ট্রায়াল রান শেষ হবে। তারপর দ্রুতই বহুল কাঙ্ক্ষিত এ রুটে যাত্রী পরিবহন করবে বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঢাকা কক্সবাজার রুটে ট্রেন চলাচল চালু হলে পর্যটকদের যাতায়াত ভোগান্তি কমাবে, সাশ্রয় হবে যাতায়াত খরচও। তাই পর্যটক সমাগম বাড়বে। যা কক্সবাজারের আর্থ সামাজিক উন্নয়নে ব্যাপক অবদান রাখবে।

জানা গেছে, পর্যটন নগরীর স্বাতন্ত্র্য ধরে রাখতে সমুদ্রসৈকত থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে নির্মাণ করা হচ্ছে ‘ঝিনুকাকৃতির’ রেলস্টেশন। যার অবস্থান ঝিলংঝা ইউনিয়নের চান্দেরপাড়ায়। চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত নির্মাণাধীন রেলপথের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ কক্সবাজারের এ রেলস্টেশনটি। পুরো স্টেশনটি গড়ে ওঠেছে ২৯ একর জমির ওপর। আইকনিক স্টেশন ভবনটি ১ লাখ ৮৭ হাজার বর্গফুটের। অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধার প্রায় সবই থাকছে স্টেশনটিতে।

এটি দেশের একমাত্র আইকনিক রেলস্টেশন হতে যাচ্ছে বলে দাবি করেছেন দোহাজারী কক্সবাজার রেল লাইন প্রকল্পের অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক আবুল কালাম চৌধুরী।

তিনি বলেন, ‌‘পুরো প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১৮ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে শুধু কক্সবাজার রেলওয়ে স্টেশনটি নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ২১৫ কোটি টাকা। সামগ্রিক প্রকল্পের ৮৬ শতাংশ কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। সামান্য কিছু কাজ বাকি আছে। আশা করছি, সেপ্টেম্বরের ১৫ থেকে ৩০ তারিখের মধ্যে ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত একটি ট্রায়াল রান করা যাবে।’

তিনি বলেন, ‘সড়ক পথে ঢাকা থেকে কক্সবাজার আসতে প্রায় ১১ ঘণ্টা সময় লাগে। ট্রেন চালু হলে ঢাকা থেকে কক্সবাজার আসতে সাড়ে ৬  থেকে ৭ ঘণ্টা সময় লাগতে পারে। আমরা সেপ্টেম্বরে ট্রায়াল রান করলেও বাণিজ্যিকভাবে যাত্রী পরিবহনে যেতে আরও দুই তিন মাস লাগবে। এ বছরের মধ্যেই এই রেলপথে আমরা ট্রেন চালুর চেষ্টা করব।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে দুই জোড়া ট্রেন চলবে। পরে ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানো হবে। ঢাকা থেকে যেসব ট্রেন চট্টগ্রাম পর্যন্ত আসে, সেসব ট্রেনের শেষ গন্তব্য কক্সবাজার হবে। এছাড়া সম্পূর্ণ নতুন একটি ট্রেন চালু হবে। তবে এখনো ট্রেনের নাম নির্ধারণ করা হয়নি।’

ট্রেনের ভাড়া প্রসঙ্গে আবুল কালাম চৌধুরী বলেন, ‘ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে আন্তঃনগর এসি চেয়ারের ভাড়া ৭৮০ থেকে ৮০০ টাকার মতো, এখানে হয়ত ১২০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।’

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১০ সালে। শেষ হবে ২০২৪ সালের জুনে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকার বেশি। দুই পর্যায়ে এই প্রকল্প শেষ হবে। চট্টগ্রাম থেকে ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলাচল করবে। এ জন্য প্রকল্পের আওতায় বিশেষ কোচও কেনা হবে।

রেলওয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, এ রেলপথ চালু হলে পর্যটকরা চাইলে হোটেল ভাড়া না করেই কক্সবাজার ভ্রমণ করে ফিরে আসতে পারবেন।

প্রকল্পের অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক আবুল কালাম চৌধুরী বলেন, ‘প্রথম পর্যায়ে দোহাজারী হতে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০.৮৩১ কিলোমিটার সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ করা হবে। এ অংশেরই ৮৬ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে রামু হতে মিয়ানমারের নিকটে ঘুমধুম পর্যন্ত ২৮.৭৫২ কিলোমিটার সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ করা হবে।’

স্টেশন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ছয়তলা স্টেশন ভবনের চারতলা পর্যন্ত মূল কাঠামোর কাজ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে হয়েছে। স্টেশন ভবন ছাড়াও আরও ১৭টি স্থাপনা তৈরি করার কাজও শেষ, যেগুলো ব্যবহার করা হবে রেলওয়ের পরিচালনা ও বাণিজ্যিক কার্যক্রমে। কেন্দ্রীয়ভাবে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত স্টেশনটিতে যাত্রী প্রবেশ ও বের হওয়ার জন্য রাখা হচ্ছে ভিন্ন ভিন্ন পথ। থাকছে গাড়ি পার্কিংয়ের বড় জায়গা। ঝিনুকাকৃতি বিল্ডিংয়ের স্টেশনটি দূর থেকেই দৃষ্টি আকর্ষণ করছে।

ঝিলংঝা ইউনিয়নের চান্দেরপাড়া গ্রামের রমিজ উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার বাড়ির পাশে এমন সুন্দর, অত্যাধুনিক রেল স্টেশন হবে তা ভাবতে পারিনি। আগে আমরা কল্পনা করতাম যদি ট্রেন আমাদের জেলায় আসত! আর এখন সেই রেল আমাদের ঘরে দরজায়।

তিনি আরও বলেন, রেল স্টেশন হওয়ার কারণে আমাদের এই অঞ্চলের অর্থনীতিতে প্রভাব পড়বে। রেল স্টেশনকে কেন্দ্র করে এখনই জমির দাম বেড়ে গেছে। বড় বড় হোটেল ব্যবসায়ী হোটেলের জন্য জায়গা খুঁজছে। ছোট বড় দোকান তৈরি হচ্ছে। আমাদের জীবনে মোড়টাই পরিবর্তন করে দিয়েছে।

একই এলাকার বাসিন্দার জিল্লুর রহমান বলেন, রেল আমাদের আশীর্বাদ হয়ে আসছে। আমাদের নতুন করে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। যাতায়াত সুবিধা ভালো হলে পর্যটকের সংখ্যা বাড়বে। এতে কক্সবাজারের উন্নয়নের সুফল মানুষ ভোগ করতে পারবে।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শাহীন ইমরান ঢাকা পোস্টকে বলেন,  রেল স্টেশনের অত্যাধুনিক ভবন নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। দেশের অন্যান্য স্টেশনের চেয়ে এখানের যাত্রীরা অনেক বেশি সুযোগ সুবিধা পাবেন। রেল সংযোগ চালুর পর কক্সবাজারের চিত্র বদলে যাবে।

এমএসআই/এসকেডি