ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে হিরো আলমের ওপর হামলার ঘটনায় নির্বাচন কমিশন অসন্তুষ্ট বলে মন্তব্য করেছেন নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মো. আলমগীর।

বৃহস্পতিবার (২০ জুলাই) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।

ইসি মো. আলমগীর বলেছেন, আমরা কিছুটা ডিসপ্লিজড। কেননা ১২৪টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ হয়েছে। সবাই সহযোগিতা করেছেন। সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন হয়েছে। কোনো অশান্তি হয়নি। সোয়া তিনটা থেকে সাড়ে তিনটার মধ্যে একটা ঘটনা ঘটল। এটা নিয়ে আমরা অসন্তুষ্ট। এজন্য ডিএমপি কমিশনারকে বিষয়টি বিস্তারিতভাবে যাচাই করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। কারো না কারো দায়িত্বে অবহেলা ছিল। একজন প্রার্থীর নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব ইসিসহ সবার। পুলিশকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, কে দায়ী তা বের হয়ে আসুক তারপর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কে দায়ী তদন্ত হওয়ার আগে বললে তদন্তে প্রভাবিত হতে পারে।

তিনি বলেন, পরবর্তী নির্বাচনের জন্য যে বার্তা থাকবে তা হালো, ভবিষ্যতে যেন এমন না ঘটে সেজন্য যে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার তার সবই যেন নেওয়া হয়। প্রত্যেক প্রার্থীকে বলা হয়েছে, তারা প্রচারে গেলে যেন আমাদের জানানো হয়। কিন্তু একজন প্রার্থী জানাননি। তারা বলেছেন, এতে প্রচার কৌশলের গোপনীয়তা থাকবে। তো এ ধরনের সহায়তা দেওয়ার নির্দেশনা ছিল, আমাদের পক্ষ থেকে আমাদের কোনো দুর্বলতা ছিল না। দুঃখজনক ঘটনা নিয়ে তারা বিবৃতি দিয়েছে, এটা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিষয়। তবে আমাদের আইনের ব্যত্যয় হয়েছে।

তিনি বলেন, বিদেশিরা যদি আমাদের নিয়ে বলত তাহলে আমাদের ব্যাখ্যা থাকত ১২৪টি কেন্দ্রের বাকিগুলোতে ঝামেলা হয়নি। স্থানীয় সরকারের আরও নির্বাচন ছিল। সেখানে তো এমন হয়নি। পুলিশ, আনসার ও বিজিবিকে নিয়ে নির্বাচন করেছি। তাহলে আপনারা কীভাবে বলছেন যে পুলিশ আমাদের কথা শুনছে না। যেহেতুর আইনে ব্যত্যয় হয়েছে। আইনে সংশ্লিষ্ট ধারায় ব্যবস্থা নিচ্ছি। নির্বাচনে পুলিশের ভূমিকায় অবশ্যই সন্তুষ্ট। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে কতিপয় জায়গায় হয়ত কারো অবহেলা থাকতে পারে, সেক্ষেত্রে আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে বলেছি।

রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন প্রসঙ্গে এ কমিশনার বলেন, যেসব দল নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছিল তাদের মধ্যে ১২টি প্রাথমিক দল বাছাইয়ে টিকেছিল। তার মধ্যে চার দলের মাঠ পর্যায়ের তথ্য যাচাইয়ে সঠিক পাওয়া গিয়েছিল। পরবর্তী সময়ে চারটি দলের জন্য উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়। তারা তদন্ত করলে দুটি তালিকা চূড়ান্তভাবে বাছাই প্রক্রিয়ায় টিকে যায়। আমরা তাদের নিবন্ধন দেওয়া সিদ্ধান্ত নিয়ে অভিযোগ আহ্বান করে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছিল। আইনে শর্ত হচ্ছে কেন্দ্রীয় অফিস, ২২ জেলা অফিস ও ১০০টি উপজেলা অফিস থাকতে হবে। এই শর্ত যারা পূরণ করেছে তারাই বাছাইয়ে টিকেছে।

ইসির তালিকায় থাকা দুটি দলের মধ্যে বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির (বিএসপি) প্রধানের বিরুদ্ধে সম্পত্তি দখল করে অফিস নির্মাণের অভিযোগ আনা হয়েছে, এ নিয়ে ইসির বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি দেওয়ানি আদালতের বিষয়, এটা তারাই দেখবেন। আমাদের আইন অনুযায়ী নিজস্ব বা ভাড়া অফিস হলেও চলবে। যে অভিযোগ আছে, আরও যদি অভিযোগ আসে, সে অভিযোগ আবার তদন্ত করব। দুপক্ষের বক্তব্য শুনব তারপর সিদ্ধান্ত নেব। এখন আমরা তো চূড়ান্তভাবে কাউকে নিবন্ধন দেয়নি। যেসব অভিযোগ আসছে, বা আরও আসবে সেগুলো আমরা গণশুনানি করব। অভিযোগ দেওয়ার জন্য ২৬ জুলাই পর্যন্ত সময় আছে। শুনানিতে যদি দেখা যায় শর্ত পূরণ করেনি বা অভিযোগ প্রমাণিত হয় তাহলে তো নিবন্ধন পাবে না। এছাড়া যদি কমিটি উদ্দেশ্যমূলক রিপোর্ট দিয়ে থাকে তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অভিযোগ সত্যি হলে নিবন্ধন পাবে না। এজন্য আরেকটা তদন্ত না করে তো সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না।

কোনো রাজনৈতিক কার্যক্রম নেই এমন দলকে নিবন্ধন দেওয়া তালিকা রাখা হয়েছে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে, এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ইসি আলমগীর বলেন, একটি পারসেপশনাল সমস্যা আছে আপনাদের মাঝে। মনে করেন একটা দলের অনেক পলিটিক্যাল অ্যাক্টিভিটিজ আছে, কিন্তু অফিস নেই, তাহলে তো নিবন্ধন পাওয়ার সুযোগ নাই। আইনে যদি থাকত কতটা সভা করেছে, আন্দোলন করেছেন, কতটা পোস্টার করেছেন, কতটা বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন তাহলে বলা যেত। কিন্তু আইনে তো আছে একটা কেন্দ্রীয় কমিটি, ২২ জেলা ও ১০০টি উপজেলা কার্যালয় থাকতে হবে।

এসআর/কেএ