যেন আলোর নিচে অন্ধকার! ঝকঝকে, তকতকে হানিফ ফ্লাইওভারের নিচের রাস্তা গর্ত আর খানাখন্দে ভরা। একেবারে চলাচলের অনুপযোগী। নিচের রাস্তা দিয়ে চলাচলকারী যাত্রীদের ভোগান্তির যেন শেষ নেই। গর্তগুলোতে পানি জমে জলজটের সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে নিচের রাস্তায় যানজট যেন নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছে।

দূরপাল্লার বড় বড় বাস, লরি, ট্রাকসহ গণপরিবহনগুলো চালাতে বেগ পেতে হচ্ছে চালকদের। ব্যক্তিগত ছোট গাড়ি ও পিক-আপগুলো খানাখন্দে পড়ে আটকে থাকছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা, অনেক সময় গর্তে পড়ে বিকল হয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন যানবাহন। কখনো আবার রিকশা-ভ্যান, পিক-আপ উল্টে মালামাল পড়ে যাচ্ছে। কারো কারো অভিযোগ, ফ্লাইওভারে এখনো টোল আদায় করা হচ্ছে। যদি নিচের রাস্তা ভালো থাকে, তাহলে টোল দিয়ে অনেকেই ফ্লাইওভারে উঠবেন না। এজন্য রাস্তা সংস্কারে উদ্যোগ কোনো নেই।

শনিবার (১৫ জুলাই) সকালে হানিফ ফ্লাইওভারের কাজলা টোল প্লাজার বামপাশ থেকে কাজলা মোড়, কতুবখালী ও যাত্রাবাড়ী সরেজমিনে ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, হানিফ ফ্লাইওভারের কাজলা টোল প্লাজার বামপাশ থেকে যাত্রাবাড়ী মোড় পর্যন্ত অসংখ্য বড় বড়  গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। জায়গায় জায়গায় পানি জমে রয়েছে। গর্ত কোনটা ছোট, কোনটা বড়। এর কারণে চিটাংগাং রোড দিয়ে আসা ফ্লাইওভারের নিচে চলাচলকারী অসংখ্য যানবাহন আটকে রয়েছে। এতে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র যানজটের।

সরেজমিনে একাধিক বাস, প্রাইভেটকার, পিক-আপ ভ্যানগুলোকে গর্তে পড়ে থাকতে দেখা গেছে। পরে অনেকের সহায়তায় পিছন থেকে ঠেলে গর্ত থেকে উদ্ধার করা হচ্ছে আটকে পড়া এ যানবাহনগুলোকে। সরকারি রাস্তার এ বেহাল দশা দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন যাত্রী, পথচারী, পরিবহন চালক ও এলাকাবাসীরা।

এ এলাকায় ১৫ বছর ধরে রিকশা চালান আবুল কালাম। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমি এ এলাকায় ১৫ বছর ধরে রিকশা চালাই। তিন বছর ধরে রাস্তার এ অবস্থা। রাস্তা ভালো করার কোনো উদ্যোগ দেখি না। মাঝে মধ্যে একটু বালি ফালানো হয়। কয়েকদিন পর আবার একই অবস্থা হয়ে যায়। আবুল কালামের সঙ্গে কথা বলা অবস্থায় গর্তে পড়ে যায় একটি পিক-আপ ভ্যান। তখন তিনি বলেন, দেখেন আপনার সামনেই তো উল্টে পরে গেল। প্রতিদিন অসংখ্য যানবাহন এভাবে গর্তে পরে ঘন্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকে। তীব্র যানজটে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে যান। দ্রুত এ রাস্তা সংস্কারের দাবি জানান আবুল কালামের মতো অনেকেই।

গর্তের কারণে যানজটে আটকে থাকা কুমিল্লা থেকে আসা তিশা পরিবহনের হেলপার মো. হাসান বলেন, একটু ভালো করে ভিডিও করে ওবায়দুর কাদের সাহেবকে দেখান। এত কষ্ট ভোগান্তি আর ভালো লাগে না। সামান্য এ রাস্তাটুকু সংস্কার করলে আমরা চলাচল করতে পারতাম।

লক্ষ্মীপুর থেকে হাইস গাড়ি দিয়ে ঢাকায় যাত্রী নিয়ে এসেছেন চালক মামুন। ফ্লাইওভারের নিচের রাস্তায় গর্তে পড়ে আটকে গেছে তার গাড়ি। যাত্রীরা সবাই নেমে পড়েছেন। এরপর গর্ত থেকে গাড়ি উঠছেই না। ক্ষোভ প্রকাশ করে মামুন বলেন, কয়েক মিনিট ধরে আমার গাড়ি এখানে আটকে আছে। আর কতক্ষণ এভাবে থাকতে হবে একমাত্র আল্লাহ ভালো জানেন। সরকার কেন এ রাস্তা ঠিক করে না আমার বুঝে আসে না। সাধারণ মানুষকে এত কষ্ট দিয়ে লাভটা কী?

পথচারী বেলাল আহমেদ বলেন, রাস্তার এ অবস্থা দেখে নিজের কাছেই খারাপ লাগে। গর্তে আর খানাখন্দে কত মালামাল বোঝাই করা ভ্যান, পিক-আপ পড়ে যেতে দেখেছি তার হিসেব নেই। বৃষ্টি নামলে তো এ রাস্তার অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যায়। এ সামান্য রাস্তাটুকু ভালো করার কোনো উদ্যোগ আজ পর্যন্ত চোখে পড়ল না। আমার কাছে মনে হয়, হানিফ ফ্লাইওভার কর্তৃপক্ষের স্বার্থ রক্ষা করতেই এ রাস্তা সংস্কারে কোনো উদ্যোগ নেই।

এ বিষয়ে জানতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান প্রকৌশলী আশিকুর রহমানকে কয়েকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রকৌশল বিভাগের এক কর্মকর্তা এ বিষয়ে বলেন, কিছুদিন টানা বৃষ্টির কারণে এ সড়ক কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সড়ক সংস্কারসহ পথচারীদের দুর্ভোগ লাঘবে ডিএসসিসি দ্রুতই কাজ শেষ করবে। এ সড়কের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত অন্যান্য সড়কেও আমাদের কাজ শুরু হবে।

এমএইচডি/এফকে