১৮ নির্দেশনা বাস্তবায়নে মাঠে নামছে ডিএনসিসি-ডিএসসিসি
করোনাভাইরাসের ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ পরিস্থিতিতে এর লাগাম টেনে ধরতে নতুন করে ১৮টি দফা নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। এসব নির্দেশনার মধ্যে সিটি করপোরেশনের আওতাধীন যেসব নির্দেশনা রয়েছে তা পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়নে মাঠে নামছে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি ও ডিএসসিসি)।
দুই সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, খুব দ্রুত তারা নিজেদের মধ্যে বৈঠকের মাধ্যমে এসব নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে মাঠে নামবে। প্রয়োজনে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়ন করবে সংস্থা দুটি।
বিজ্ঞাপন
এদিকে, দেশে গেল কয়েকদিন ধরে করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি দেখা যাচ্ছে। এ অবস্থায় রাত ৮টার মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) এলাকার আওতাধীন সব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, দোকান বন্ধ করতে অনুরোধ জানিয়েছিলেন মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।
মেয়রের এমন অনুরোধ এবং সরকারের ১৮ নির্দেশনার পর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন পক্ষ থেকে সকল আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যাতে করে তারা ১৮ দফা নির্দেশনা বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপসহ রাত ৮টার পর দোকানপাট বন্ধ নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেন।
মেয়র ফজলে নূর তাপস এ বিষয়ে নগরবাসীর প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বলেছেন, যেহেতু করোনা সংক্রমণ আবার বৃদ্ধি পাচ্ছে, সেহেতু রাত ৮টার মধ্যে আপনারা সব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, দোকান-পাট অবশ্যই বন্ধ করে দেবেন। আমাদের এটা করা অত্যন্ত প্রয়োজন। আমরা চাই রাত ৮টার মধ্যে সব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হোক, এতে করে করোনার সংক্রমণ অনেকাংশেই কমে আসবে। যেন রাতে আমরা ঢাকা শহরকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে স্বাস্থ্যবিধি পরিপালন পূর্বক কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারি।
সরকারের দেওয়া ১৮ নির্দেশনার বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা বলেন, সরকারের ১৮ নির্দেশনা বাস্তবায়নে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে আমরা মাঠে নামব। গতবছরও করোনার সময়ে আমারা উত্তর সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে মাঠে কাজ করেছি। এবারও আমরা মাঠে থাকব। এই নির্দেশনা বাস্তবায়নে আমাদের আওতায় যে বিষয়গুলো আছে, আমরা সে বিষয়গুলো বাস্তবায়নে খুব তাড়াতাড়ি মাঠে নামব আবারও।
সরকারের দেওয়া নির্দেশনাগুলো হলো-
১. সবধরনের জনসমাগম (সামাজিক/রাজনৈতিক/ধর্মীয়/অন্যান্য) সীমিত করতে হবে। উচ্চ সংক্রমণযুক্ত এলাকায় সবধরনের জনসমাগম নিষিদ্ধ করা হলো। বিয়ে/জন্মদিনসহ যেকোনো সামাজিক অনুষ্ঠান উপলক্ষে জনসমাগম নিরুৎসাহিত করতে হবে।
২. মসজিদসহ সব ধর্মীয় উপাসনালয়ে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি পরিপালন নিশ্চিত করতে হবে।
৩. পর্যটন/বিনোদনকেন্দ্র সিনেমা হল/থিয়েটার হলে জনসমাগম সীমিত করতে হবে এবং সবধরনের মেলা আয়োজন নিরুৎসাহিত করতে হবে।
৪. গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে এবং ধারণক্ষমতার ৫০ ভাগের বেশি যাত্রী পরিবহন করা যাবে না।
৫. সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাতে আন্তঃজেলা যানচলাচল সীমিত করতে হবে। প্রয়োজনে বন্ধ রাখতে হবে।
৬. বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের ১৪ দিন পর্যন্ত প্রাতিষ্ঠানিক (হোটেলে নিজ খরচে) কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করতে হবে।
৭. নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী খোলা/উন্মুক্ত স্থানে স্বাস্থ্যবিধি পরিপালনপূর্বক ক্রয়-বিক্রয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। ওষুধের দোকানে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিশ্চিত করতে হবে।
৮. স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলো মাস্ক পরিধানসহ যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি পরিপালন নিশ্চিত করতে হবে।
৯. শপিং মলে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়েরই যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিশ্চিত করতে হবে।
১০. সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক, মাদরাসা, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয়) ও কোচিং সেন্টার বন্ধ থাকবে।
১১. অপ্রয়োজনীয় ঘোরাফেরা/আড্ডা বন্ধ করতে হবে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া রাত ১০টার পর বাইরে বের হওয়া নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
১২. প্রয়োজনে বাইরে গেলে মাস্ক পরিধানসহ সবধরনের স্বাস্থ্যবিধি পরিপালন নিশ্চিত করতে হবে। মাস্ক পরিধান না করলে কিংবা স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘিত হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।
১৩. করোনায় আক্রান্ত/করোনার লক্ষণযুক্ত ব্যক্তির আইসোলেশন নিশ্চিত করতে হবে। করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তির ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে আসা অন্যদেরও কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করতে হবে।
১৪. জরুরি সেবায় নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান ছাড়া সব সরকারি-বেসরকারি অফিস/প্রতিষ্ঠান শিল্প কারখানাগুলো ৫০ ভাগ জনবল দ্বারা পরিচালনা করতে হবে। গর্ভবতী/অসুস্থ/বয়স ৫৫-ঊর্ধ্ব কর্মকর্তা/কর্মচারীর বাড়িতে অবস্থান করে কর্মসম্পাদনের ব্যবস্থা নিতে হবে।
১৫. সভা, সেমিনার, প্রশিক্ষণ, কর্মশালা যথাসম্ভব অনলাইনে আয়োজনের ব্যবস্থা করতে হবে।
১৬. সশরীরে উপস্থিত হতে হয়, এমন যেকোনো ধরনের গণপরীক্ষার ক্ষেত্রে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি পরিপালন নিশ্চিত করতে হবে।
১৭. হোটেল-রেস্তোরাঁগুলোতে ধারণক্ষমতার ৫০ ভাগের বেশি মানুষের প্রবেশ বন্ধ করতে হবে।
১৮. কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ এবং অবস্থানকালীন সর্বদা বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক পরিধানসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি পরিপালন নিশ্চিত করতে হবে।
এ নির্দেশনাগুলো অবিলম্বে কার্যকর হবে এবং পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত বলবৎ থাকবে (কমপক্ষে ২ সপ্তাহ) বলে সরকারি আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে।
এএসএস/এফআর