স্ত্রীর নামে বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে পাঁচ কোটি টাকার বেশি জমা রেখে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চার্জশিটভুক্ত আসামি হয়েছেন গণপূর্ত অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী উৎপল কুমার দে।

বেসরকারি ৮টি ব্যাংকের মাধ্যমে স্ত্রী গোপা দে’র নামে ওই টাকা সঞ্চয় করলেও কোনো বৈধ উৎস দেখাতে পারেননি উৎপল দম্পতি। এমনকি আইনি বৈধতা পেতে স্ত্রীকে ইলেকট্রনিক্স ব্যবসায়ী দেখানোর চেষ্টা করেও শেষ রক্ষা হয়নি। ৬ কোটি ৬২ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে স্বামী ও স্ত্রীকে আসামি করে চার্জশিট অনুমোদন দিয়েছে কমিশন।

বুধবার (১২ জুলাই) কমিশন সভায় এ অভিযোগপত্র দাখিলের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির উপ-পরিচালক (জনসংযোগ) মুহাম্মদ আরিফ সাদেক।

তিনি বলেন, সাড়ে ছয় কোটি টাকা মূল্যের অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় তাদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিলের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সংস্থাটির সহকারী পরিচালক নেয়ামুল আহসান গাজী শিগগিরই সেটি আদালতে দাখিল করবেন।

তদন্ত প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, আসামিরা অসৎ উপায়ে দুর্নীতির মাধ্যমে ৬ কোটি ৬২ লাখ ৬৮ হাজার ৭৫৪ টাকার জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ অবৈধ সম্পদ অর্জন করে তা নিজেদের ভোগ দখলে রাখেন। পরে এসব সম্পদ বৈধ করার অসৎ উদ্দেশ্যে বিভিন্ন সময়ে রূপান্তর/স্থানান্তর/হস্তান্তর করে মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭(১) ধারায় এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২)(৩) ধারাসহ দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।

আরও বলা হয়, গোপা দে’র নামে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ৫ কোটি ১ লাখ ৯৯ হাজার ৫৪৯ টাকার অস্থাবর সম্পদ গচ্ছিত পাওয়া গেছে। কিন্তু সম্পদের তথ্য মিসেস গোপা দে’র আয়কর নথিতে প্রদর্শন না করে গোপন করেছেন। অনুসন্ধানকালে ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থের কোনো বৈধ উৎস পাওয়া যায়নি।

এছাড়া ২০১৮-২০১৯ করবর্ষ পর্যন্ত আয়কর নথিতে প্রদর্শিত নিট ১ কোটি ৬০ লাখ ৬৯ হাজার ২০৫ টাকার যে তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যায় তার সমর্থনে কোনো বৈধ উৎস দেখাতে পারেননি তিনি। যদিও গোপা দে’র আয়কর নথিতে তার নামে পটিয়া ইলেকট্রনিক্সের নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দেখিয়েছেন। যার কোনো বাস্তব অস্তিত্ব মেলেনি।

২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে ক্যাসিনোকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর ধারাবাহিকতায় ৩০ সেপ্টেম্বর ক্যাসিনো ও অন্যান্য অবৈধ মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে অনুসন্ধানে নামে দুদক। এই অনুসন্ধানের সময় নাম আসে গণপূর্ত অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী উৎপল কুমার দের।

২০২০ সালের ৫ আগস্ট দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ এ তাদের স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়।

আরএম/এমজে