এক আসন ফাঁকা রেখে ট্রেন যাত্রা : শুরুতেই উপেক্ষিত নির্দেশনা
দেশে করোনাভাইরাসে সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি রোধে ট্রেনে ৫০ শতাংশ আসন ফাঁকা রেখে যাত্রার নির্দেশনা দিয়েছিল বাংলাদেশ রেলওয়ে। যদিও প্রথম দিন মঙ্গলবার (৩০ মার্চ) এ নির্দেশনা পরিপালিত হয়নি রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনে। এদিন অধিকাংশ যাত্রীকেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে ভ্রমণ করতে দেখা যায়নি।
সরেজমিনে মঙ্গলবার দুপুরে কমলাপুর রেলস্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে আছে বনলতা এক্সপ্রেস। বেলা দেড়টায় ট্রেনটি ছেড়ে যাবে চাঁপাইনবাবগঞ্জের উদ্দেশে। ট্রেনের ভেতরে পাশাপাশি বসে আছেন যাত্রীরা। তাদের অনেকের মুখেই মাস্ক নেই। রেলস্টেশনে ঢোকার সময় তাদের প্রায় সবাই মাস্ক পরেই ঢুকেছেন। কিন্তু আসনে বসার পর মাস্ক খুলে ফেলেন তারা।
বিজ্ঞাপন
ট্রেনযাত্রী শহীদুল ইসলাম বলেন, গরমে মুখে মাস্ক রাখা যায় না। করোনাকালে পাশাপাশি বসে কেন যাচ্ছেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগাম টিকিট কেটেছি। ফেরত দিলে কিভাবে যাবো? এক আসন ফাঁকা রেখে যে ট্রেনে চড়তে হবে নতুন এই নির্দেশনার বিষয়ে আমি কিছুই জানি না।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণরোধে ট্রেনে ৫০ শতাংশ যাত্রী পরিবহনের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। কিন্তু বিক্রিত আগাম টিকিটের ৫০ শতাংশ ফেরত আসেনি রেলওয়ের কাছে। এ কারণে প্রতিটি ট্রেনে বিক্রিত টিকিটের বিপরীতে ৫০ শতাংশ যাত্রী পরিবহনের নির্দেশনা শুরুতেই বাস্তবায়ন করা রেলওয়ের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না।
মঙ্গলবার সকাল থেকে বেলা দুইটা পর্যন্ত বিভিন্ন রুটে কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে ছেড়ে গেছে ২৮টি ট্রেন। ছেড়ে যাওয়া অধিকাংশ ট্রেনেই পাশাপাশি বসিয়ে যাত্রী পরিবহন করতে দেখা গেছে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিচালন) সরদার শাহাদাত আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, ৪ এপ্রিল পর্যন্ত আগাম টিকিট বিক্রি করা হয়েছে। আমরা নতুন নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য ৫০ শতাংশ টিকিট বিক্রি করছি। এছাড়া স্বাস্থ্যবিধি মানাতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, আগে বিক্রিত টিকিট ফেরত না এলে ৫০ শতাংশ যাত্রী পরিবহনের নির্দেশনা পুরো বাস্তবায়ন করা যাবে না। ৫০ শতাংশ যাত্রী পরিবহনের নির্দেশনা পুরোপুরি বাস্তবায়নে কয়েকদিন সময় লেগে যেতে পারে।
কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের মাস্টার রফিকুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, রেলওয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই ট্রেন পরিচালনা করে আসছে। সোমবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ করোনাকালীন নির্দেশনা বাস্তবায়নের কথা বলেছেন। নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা অর্ধেক টিকিট বিক্রি করছি। একটি আসন পর পর যাত্রীরা বসে ট্রেনে ভ্রমণ করবেন।
তিনি বলেন, আমরা মাস্ক ব্যবহার করে ট্রেনে যাত্রীদের ভ্রমণ করতে বারবার অনুরোধ করছি। পাশাপাশি তাদের শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করা হচ্ছে। স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে, পুরো রেলস্টেশনে জীবাণুনাশক ছিটানো হয়েছে।
কমলাপুর রেলস্টেশনের ব্যবস্থাপক মো. মাসুদ সারোয়ার বলেন, ৪ এপ্রিল পর্যন্ত আগাম টিকিট বিক্রি করা হয়েছে। তার মধ্যে জোড় সংখ্যার টিকিট বিক্রি যতোটা সম্ভব আটকানো হয়েছে। আজ থেকে ৫০ শতাংশ টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে। এছাড়া করোনাকালীন সময়ে সব ধরনের স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণে জন্য আমরা সব ব্যবস্থা রেখেছি।
তিনি বলেন, কেউ যদি মাস্ক পরার অভিনয় করে তাহলে আমরা কি করতে পারি? আমাদের চোখের সামনে দিয়ে কেউ মাস্ক ছাড়া ট্রেনে উঠতে পারছেন না। আশা করবো সবাই সচেতনতার পরিচয় দেবেন।
উল্লেখ্য, করোনা সংক্রমণরোধে ৫০ শতাংশ যাত্রী পরিবহনের জন্য সোমবার (২৯ মার্চ) বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্ব ও পশ্চিম অঞ্চলের সব রেলস্টেশনের ব্যবস্থাপকসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে নির্দেশনা পাঠানো হয়।
পিএসডি/এসকেডি