২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরের পরিকল্পনা সরকারের। এ জন্য শহর থেকে গ্রাম সর্বত্র ডিজিটাল সেবার আওতা বাড়ানো হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় পঞ্চগড়ের প্রতিটি ইউনিয়নকে ক্যাশলেস ইউনিয়ন করতে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে জেলা প্রশাসন। জেলার ৪৩টি ইউনিয়ন পরিষদ ও ৩টি পৌরসভার নাগরিকরা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে ঘরে বসে পাচ্ছেন নানা সেবা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে ইউনিয়ন ও পৌরসভা পর্যায়ে ডিজিটাল সেন্টার গড়ে ওঠলেও ইউনিয়ন পরিষদের নানা সেবা নাগরিকদের সনাতন পদ্ধতিতে দেওয়া হতো। অনেক সময় সেবা পাওয়ার জন্য চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টদের অপেক্ষায় থাকতেন নাগরিকরা। অধিকাংশ ক্ষেত্রে সরকার নির্ধারিত সেবামূল্যের বাড়তি অর্থ আদায়ের অভিযোগ পাওয়া যেত। এতে হয়রানি ও ভোগান্তির শিকার হতেন সেবাগ্রহীতারা। ক্যাশলেস সেবা চালু হওয়ায় এসব ভোগান্তি শূন্যে নেমেছে। তাই দ্রুতই জনপ্রিয় হচ্ছে ক্যাশলেস পদ্ধতি।

পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ৪৩টি ইউনিয়ন ও তিনটি পৌরসভার নাগরিকরা যাতে ঘরে বসেই বিভিন্ন সেবা পেতে পারেন সে জন্য আমরা ক্যাশলেস ইউনিয়ন সেবা চালু করেছি। এতে পঞ্চগড় মডেল হিসেবে ইতিমধ্যে সারাদেশে পরিচিতি পাচ্ছে।

তিনি বলেন, প্রান্তিক মানুষ যাতে ঘরে বসেই জন্ম সনদ, মৃত্যু সনদ, ওয়ারিশ সনদ, অবিবাহিত সনদসহ অন্য যেসব সেবা রয়েছে সেগুলো পেতে পারেন সেই ব্যবস্থাই আমরা করছি।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ক্যাশলেস ইউনিয়ন ট্যাক্স এবং সেবা সিস্টেম বাস্তবায়নে ইউনিয়নট্যাক্স ডট গভ ডট বিডি (uniontax.gov.bd) এবং পৌরসভা ডট গভ ডট বিডি (pouroseba.gov.bd) নামে দুটি সফটওয়্যার তৈরি করেছে। এ দুটি সফটওয়্যারের মাধ্যমে জেলার ৭০ হাজার নাগরিককে বিভিন্ন সেবা দেওয়া হচ্ছে। এতে সেবা গ্রহণে তাদের সময়, অর্থ খরচ ও ভ্রমণ সাশ্রয় হয়েছে। এছাড়া ইউনিয়ন পরিষদ বা পৌরসভা কর্তৃক প্রস্তুতকৃত সেবায় (সনদ, রশিদ) কিউআর (QR) কোড থাকায় সেবার সঠিকতা যাচাই করা সম্ভব হচ্ছে। এ উদ্যোগটি চালুর ফলে হয়রানিমুক্তভাবে সেবা প্রদান সম্ভব হচ্ছে। বিশেষ করে সনাতন পদ্ধতিতে সেবা প্রদানকালে রশিদের মাধ্যমে নগদ অর্থ ইউনিয়ন পরিষদ গ্রহণ করত। নগদ অর্থ হওয়ায় তা নিয়মিত ইউনিয়ন পরিষদের ব্যাংক হিসাবে সঞ্চয় করা হতো না, বা অনেক সময় আদায় রেজিস্টারে তা রেকর্ড করা হতো না। কিন্তু ডিজিটাল এবং ক্যাশলেস ইউনিয়ন সেবা চালুর পর ডিজিটাল পেমেন্ট গেটওয়ের মাধ্যমে সেবামূল্য পরিশোধ করার ফলে সরাসরি ইউনিয়ন পরিষদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা হচ্ছে। ফলে ইউনিয়ন পরিষদের অর্থ তছরুপের কোন সুযোগ নেই।

যেহেতু সেবা গ্রহণের জন্য সেবা গ্রহীতাকে ইউনিয়ন পরিষদে আসার প্রয়োজন নেই, ফলে এই উদ্যোগটির বড় ধরনের আর্থ সামাজিক প্রভাব রয়েছে। এছাড়া ইউনিয়ন পরিষদে সবচেয়ে বেশি সেবাগ্রহীতা সেবা গ্রহণের জন্য আসেন, এই উদ্যোগের ফলে তাদের উপস্থিতি হ্রাস পেয়েছে বা ক্ষেত্রবিশেষে শূন্য হয়েছে।

তেঁতুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মনসুর আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের ১৯টি সেবা আমরা ক্যাশলেসের মাধ্যমে দিয়ে থাকি। এতে সাধারণ মানুষের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। আমাদের কোন সার্টিফিকেট নিতে এখন আর নগদ টাকা দিতে হচ্ছে না। অনলাইন ডিজিটাল সেবা পাওয়ার জন্য সরাসরি মোবাইলে আবেদন করা যাচ্ছে। নগদ কিংবা বিকাশের মাধ্যমে সরকারি অ্যাকাউন্টে সরাসরি এ অর্থ চলে যায়। টাকা কম বেশি নেওয়ার কোনো সুযোগ আর নেই। হোল্ডিং ট্যাক্সও ক্যাশলেসের মাধ্যমে গ্রহণ করা হচ্ছে।

তেঁতুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ক্যাশলেস সেবাগ্রহণকারী মাজহারুল আনোয়ার সেলিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি এ ইউনিয়ন পরিষদ থেকে একটি ট্রেড লাইসেন্স করেছি। অনলাইনে আবেদন করে সে আবেদনের অর্থও বিকাশে পেমেন্ট করেছি। নগদ কোনো টাকা পেমেন্ট করতে হয়নি। ক্যাশলেস করার মাধ্যমে আমরা অনেকগুলো সমস্যা থেকে সমাধান পেয়েছি। এখন আর বাড়তি টাকা রাখার সুযোগ নেই। প্রধানমন্ত্রী দূরদর্শী চিন্তার কারণে আমরা এ সফল ভোগ করছি।

তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহাগ চন্দ্র সাহা বলেন, বর্তমানে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ট্রেড লাইসেন্স, চারিত্রিক সনদপত্র, ভূমিহীন সনদপত্র, ওয়ারিশান সনদপত্র, অবিবাহিত সনদপত্র, প্রত্যয়নপত্র, অসচ্ছল প্রত্যয়নপত্র, নাগরিক সনদপত্র, উত্তরাধিকার সনদপত্র ইত্যাদি সেবা প্রদান করা হয়। বহুল প্রচলিত এসব সেবাকে জনবান্ধব করার জন্য একটি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম অত্যাবশ্যকীয় হয়ে পড়ে। সে লক্ষ্যে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে প্রদত্ত সেবাসমূহকে জনগণের কাছে স্বল্প খরচে, স্বল্প সময়ে এবং হয়রানিমুক্তভাবে প্রদান নিশ্চিত করার জন্য একটি অ্যাপ্লিকেশন থেকে সকল সেবা প্রদানের নিমিত্তে ২০১৯-২০ অর্থবছরে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের মাধ্যমে uniontax.gov.bd নামে একটি অনলাইন সিস্টেম কার্যক্রম চালু করা হয়।

তিনি আরও বলেন, সফটওয়্যারটি ২০২০-২০২১ অর্থবছরে ৩নং তেঁতুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদে পাইলটিং হিসেবে চালু করার পর আশাব্যঞ্জক সাড়া পাওয়া যায়। ২০২১ সালের ৫ অক্টোবর রংপুর বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার মো. আব্দুল ওয়াহাব ভূঞা uniontax.gov.bd অনলাইন সিস্টেমটির উদ্বোধন করেন। 

এমএসআই/এসকেডি