দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৬ লাখ ছাড়াল
দেশে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। সোমবার স্বাস্থ্য অধিদফতর যে তথ্য দিয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে, দেশে প্রথমবারের মতো একদিনে আক্রান্তের সংখ্যা ৫ হাজার ছাড়িয়েছে। আর এর মধ্যে দিয়ে দেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৮৯৫ জনে।
বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাস রোগী শনাক্ত হয় ২০২০ সালের ৮ মার্চ। এরপরের দুই মাস দৈনিক শনাক্তের সংখ্যা তিন অংকের মধ্যে থাকলেও সেটা বাড়তে বাড়তে জুলাই মাসে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়। তখন প্রাণঘাতী এ ভাইরাসের বিস্তার রোধে নানা পদক্ষেপ নিয়েছিল সরকার। দুইমাসেরও বেশি সময় ধরে সে দফায় বাংলাদেশে সাধারণ ছুটি ছিল। পরে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক ধারায় ফিরতে শুরু করে মানুষের জীবন।
চলতি বছরে জানুয়ারির শেষের দিকে এসে দেশে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু দুটিই কমে আসে। কিন্তু মার্চের প্রথম সপ্তাহের পর থেকে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে শুরু করে সংক্রমণ।
বিজ্ঞাপন
স্বাস্থ্য অধিদফতরের আজকের তথ্য অনুযায়ী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশে আরও ৪৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে ভাইরাসটিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৮ হাজার ৯৪৯ জনে।
দেশে করোনা ভাইরাসের দৈনিক সংক্রমণ চিত্র বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে একদিনে আক্রান্তের সংখ্যা ৩০০-এর নিচেও নেমেছিল। এরপর মার্চের ১ তারিখ থেকে প্রায় প্রতিদিনই বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা।
মার্চের ২৩ তারিখ থেকে প্রতিদিনই আক্রান্তের সংখ্যা সাড়ে ৩ হাজারের বেশি ছিল। এরইমধ্যে আজ একদিনে আক্রান্তের সংখ্যা ৫ হাজার ছাড়িয়ে গেল।
করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির এ চিত্র কেবল বাংলাদেশেই নয়। প্রতিবেশি ভারতেও লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। গেল সপ্তাহে করোনা সংক্রমণের সাপ্তাহিক হিসাবের আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে দেশটি। ভারতে শেষ ১০ লাখ মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন মাত্র ৩৫ দিনে। তার আগের ১০ লাখ মানুষ আক্রান্ত হয়েছিলেন এর প্রায় দ্বিগুণ সময়ে, ৬৫ দিনে।
করোনা সংক্রমণ রোধে সরকারের ১৮ দফা জরুরি নির্দেশনা
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়তে থাকায় বিদ্যমান পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকার নতুন করে ১৮ দফা নির্দেশনা দিয়েছে। এর মধ্যে বেশি সংক্রমিত এলাকায় জনসমাগম নিষিদ্ধসহ রাত ১০টার পর প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হওয়া নিয়ন্ত্রণের মতো নির্দেশনাও রয়েছে।
জনসমাগম নিষিদ্ধ ঘোষণা, গণপরিবহনে ধারণক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী পরিবহন, শপিংমল বন্ধসহ আরও কিছু প্রস্তাবসহ গত ২৫ মার্চ এ সংক্রান্ত চিঠি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠায় স্বাস্থ্য অধিদফতর। পরে তা সিদ্ধান্তের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়।
এ সপ্তাহে নতুন ৪০ আইসিইউ যোগ হবে
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, দেশে করোনা সংক্রমণের হার ব্যাপক আকারে বেড়েছে। হাসপাতালগুলোতে আইসিইউয়ের (নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র) সংকট দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় চলতি সপ্তাহের মধ্যেই রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে নতুন ৪০টি আইসিইউ যোগ হবে।
আজ দুপুরে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল (এনআইসিভিডি) আয়োজিত হাসপাতালের সম্প্রসারিত ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, গত মার্চ মাসে সংক্রমণের হার ২ শতাংশ ছিল, কিন্তু বর্তমানে এ হার ১৩ শতাংশে চলে এসেছে। করোনা প্রায় ৮/৯ গুণ বেড়ে গেছে। এ আক্রান্ত রোগীরা যদি একসঙ্গে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসে, তাহলে সেবা দেওয়া দুরূহ হয়ে যাবে।
ঢাকার ৫ হাসপাতালকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ
করোনা সংক্রমণের হার বেড়ে যাওয়ার পরিস্থিতি মোকাবিলায় রাজধানীর পাঁচটি হাসপাতালকে প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
হাসপাতালগুলো হচ্ছ-
১. লালকুঠি হাসাপাতাল, মিরপুর
২. ঢাকা মহানগর হাসপাতাল, বাবুবাজার
৩. শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শেরে বাংলা নগর
৪. ডিএনসিসি কোনা আইসোলেশন সেন্টার, মহাখালী
৫. সরকারি কর্মচারী হাসপাতাল, ফুলবাড়িয়া
এনএফ