করোনা সংক্রমণ রোধে সরকারের ১৮ দফা জরুরি নির্দেশনা
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় বিদ্যমান পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকার নতুন করে ১৮ দফা নির্দেশনা দিয়েছে। এর মধ্যে বেশি সংক্রমিত এলাকায় জনসমাগম নিষিদ্ধসহ রাত ১০টার পর প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হওয়া নিয়ন্ত্রণের মতো নির্দেশনাও রয়েছে।
সোমবার (২৯ মার্চ) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব ড. আহমেদ কায়কাউস এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে সই করেছেন।
বিজ্ঞাপন
দুপুরে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল (এনআইসিভিডি) আয়োজিত 'হাসপাতালের সম্প্রসারিত ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় আংশিক লকডাউন, বিনোদনকেন্দ্র বন্ধ, জনসমাগম সীমিত করাসহ সরকারের কাছে বেশ কিছু সুপারিশ দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
জানা যায়, জনসমাগম নিষিদ্ধ ঘোষণা, গণপরিবহনে ধারণক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী পরিবহন, শপিংমল বন্ধসহ আরও কিছু প্রস্তাবসহ গত ২৫ মার্চ এ সংক্রান্ত চিঠি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। পরে তা সিদ্ধান্তের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়।
নির্দেশনাগুলো হলো-
১. সব ধরনের জনসমাগম (সামাজিক/রাজনৈতিক/ধর্মীয়/অন্যান্য) সীমিত করতে হবে। উচ্চ সংক্রমণযুক্ত এলাকায় সব ধরনের জনসমাগম নিষিদ্ধ করা হলো। বিয়ে/জন্মদিনসহ যে কোনো সামাজিক অনুষ্ঠান উপলক্ষে জনসমাগম নিরুৎসাহিত করতে হবে;
২. মসজিদসহ সব ধর্মীয় উপাসনালয়ে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি পরিপালন নিশ্চিত করতে হবে;
৩. পর্যটন/বিনোদন কেন্দ্র সিনেমা হল/থিয়েটার হলে জনসমাগম সীমিত করতে হবে এবং সব ধরনের মেলা আয়োজন নিরুৎসাহিত করতে হবে;
৪. গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে এবং ধারণক্ষমতার ৫০ ভাগের বেশি যাত্রী পরিবহন করা যাবে না;
৫. সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাতে আন্তঃজেলা যান চলাচল সীমিত করতে হবে; প্রয়োজনে বন্ধ রাখতে হবে;
৬. বিদেশ হতে আগত যাত্রীদের ১৪ দিন পর্যন্ত প্রাতিষ্ঠানিক (হোটেলে নিজ খরচে) কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করতে হবে;
৭. নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী খোলা/উন্মুক্ত স্থানে স্বাস্থ্যবিধি পরিপালনপূর্বক ক্রয়-বিক্রয়ের ব্যবস্থা করতে হবে; ওষুধের দোকানে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিশ্চিত করতে হবে;
৮. স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলো মাস্ক পরিধানসহ যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি পরিপালন নিশ্চিত করতে হবে;
৯. শপিং মলে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়েরই যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিশ্চিত করতে হবে;
১০. সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক, মাদরাসা, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয়) ও কোচিং সেন্টার বন্ধ থাকবে;
১১. অপ্রয়োজনীয় ঘোরাফেরা/আড্ডা বন্ধ করতে হবে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া রাত ১০টার পর বাইরে বের হওয়া নিয়ন্ত্রণ করতে হবে;
১২. প্রয়োজনে বাইরে গেলে মাস্ক পরিধানসহ সব ধরনের স্বাস্থ্যবিধি পরিপালন নিশ্চিত করতে হবে। মাস্ক পরিধান না করলে কিংবা স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘিত হলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে;
১৩. করোনায় আক্রান্ত/করোনার লক্ষণযুক্ত ব্যক্তির আইসোলেশন নিশ্চিত করতে হবে। করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তির ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে আসা অন্যদেরও কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করতে হবে;
১৪. জরুরি সেবায় নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান ছাড়া সব সরকারি-বেসরকারি অফিস/প্রতিষ্ঠান শিল্প কারখানাগুলো ৫০ ভাগ জনবল দ্বারা পরিচালনা করতে হবে। গর্ভবতী/অসুস্থ/বয়স ৫৫-ঊর্ধ্ব কর্মকর্তা/কর্মচারীর বাড়িতে অবস্থান করে কর্মসম্পাদনের ব্যবস্থা নিতে হবে;
১৫. সভা, সেমিনার, প্রশিক্ষণ, কর্মশালা যথাসম্ভব অনলাইনে আয়োজনের ব্যবস্থা করতে হবে;
১৬. সশরীরে উপস্থিত হতে হয় এমন যেকোনো ধরনের গণপরীক্ষার ক্ষেত্রে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি পরিপালন নিশ্চিত করতে হবে;
১৭. হোটেল-রেস্তোরাঁগুলোতে ধারণক্ষমতার ৫০ ভাগের বেশি মানুষের প্রবেশ বন্ধ করতে হবে;
১৮. কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ এবং অবস্থানকালীন সর্বদা বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক পরিধানসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি পরিপালন নিশ্চিত করতে হবে।
এ নির্দেশনাগুলো অবিলম্বে কার্যকর হবে এবং পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত বলবৎ থাকবে (কমপক্ষে ২ সপ্তাহ) বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে।
রোববার (২৮ মার্চ) পর্যন্ত দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আট হাজার ৯০৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। মোট আক্রান্তের সংখ্যা পাঁচ লাখ ৯৫ হাজার ৭১৪ জন। গত বছরের (২০২০ সাল) ৮ মার্চ দেশে প্রথম তিনজনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়। এর ঠিক ১০ দিন পর ১৮ মার্চ দেশে ভাইরাসটিতে প্রথম মৃত্যু হয়।
এইউএ/এসএম/এমএমজে