সাত সকালে মহাখালী বাস টা‌র্মিনা‌লের এনা বাস কাউন্টা‌রে টি‌কিটের জন‌্য অপেক্ষমাণ যাত্রীদের বিশাল জটলা। দীর্ঘসময় কয়েকজন যাত্রীর স‌ঙ্গে বাগ-বিতণ্ডা হয় কাউন্টা‌রের টি‌কিট মাস্টা‌রের। বাগ-বিতণ্ডা চলার ম‌ধ্যে কাউন্টা‌রের ১০ থে‌কে ১৫ জ‌নের ম‌তো স্টাফ এসে ক‌য়েকজন যাত্রীকে মারধর শুরু করেন। যাত্রীরা পা‌লি‌য়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও তা‌দের মারধর করা হয়।

মঙ্গলবার (২৭ জুন) সকাল ৯টায় মহাখালী বাস টার্মিনালে গিয়ে এমন চিত্র দেখা যায়। 

মার খাওয়া যাত্রী‌দের একজন মো. রা‌সেল। তার গন্তব্য ময়মন‌সিংহের বা‌সিন্দা। রা‌সেল অভিযোগ ক‌রেন, ময়মন‌সিংহে গ্রা‌মের বা‌ড়ি‌তে যাব। সকাল ৬টায় কাউন্টা‌রে এসেছি। কাউন্টার থে‌কে টি‌কিট দি‌চ্ছে না। কাউন্টা‌রে গা‌ড়ি আছে, তারপরও কেন টি‌কিট দি‌চ্ছে না; এটা নি‌য়ে তর্কাত‌র্কি হ‌য়ে‌ছে। কেন চুপ ক‌রে দাঁড়িয়ে থাকলাম এটাই আমার অপরাধ। এজন‌্য আমার ম‌তো আরও ক‌য়েকজ‌নের গা‌য়ে ওরা হাত তু‌লে‌ছে।

যাত্রী‌দের মারধরের সম‌য় নারী কাউন্টা‌রে টি‌কিটের জন‌্য দাঁড়ি‌য়ে‌ছি‌লেন ময়মন‌সিংহগামী সোমা আক্তার। তিনি জানান, কাউন্টার থে‌কে কেন টি‌কিট দেওয়া হ‌চ্ছে না, এটা নি‌য়ে প্রথ‌মে এক যাত্রী প্রতিবাদ ক‌রেন। এরপর আরও ক‌য়েকজন যাত্রী তার স‌ঙ্গে প্রতিবাদ ক‌রেন। এটা‌কে কেন্দ্র ক‌রেই যাত্রী‌দের মারধর করেন এনা কাউন্টা‌রের  লোকজন। মানুষ জিম্মি। তাদের কিছু বলা যা‌বে না। প্রতিবাদ কর‌তে গে‌লেই গা‌য়ে হাত তুল‌বে।

আরেক প্রত‌্যক্ষদর্শী লিমন ব‌লেন, আমি কাউন্টারে টি‌কি‌টের জন‌্য দাঁড়া‌নো এলাকার এক ভাই‌য়ের কা‌ছে টাকা দি‌তে যাই। হঠাৎ দূর থে‌কে দে‌খি, মানু‌ষের জটলা। কা‌ছে গি‌য়ে দে‌খি, এনা কাউন্টা‌রের ১৫ জ‌নের ম‌তো ৪ থে‌কে ৫ জন যাত্রীর গা‌য়ে হাত তুল‌ছেন।

যাত্রী‌দের অভিযোগ উ‌ড়ি‌য়ে দি‌য়ে ভিন্ন কথা ব‌লেন কাউন্টা‌রের কর্মকর্তারা। টিকিট মাস্টার মো. শহীদুল ইসলাম ব‌লেন, একজন যাত্রী ভা‌র্সি‌টির গরম দেখায়। হুম‌কি দিয়ে বি‌ভিন্ন ধর‌নের কথা বলায় এক যাত্রীর স‌ঙ্গে কথা কাটাক‌াটি হয়েছে। অন‌্য কিছু না।

এদিকে মহাখালী বাস টা‌র্মিনা‌লে বাংলা‌দেশ সড়ক প‌রিবহন কর্তৃপক্ষের (‌বিআর‌টিএ) পর্যবেক্ষক দলের কা‌ছে বিষয়‌টি জানান মারধরের শিকার রা‌সেল। ত‌বে তারা অভি‌যোগ আম‌লে না নি‌য়ে কাউন্টা‌রের প‌ক্ষে সাফাই গান ব‌লে জানান রা‌সেল।

আজ (মঙ্গলবার) সকাল থে‌কে মহাখালীর বাস টা‌র্মিনা‌লে স‌রেজ‌মিনে দেখা গে‌ছে, গ্রা‌মের বা‌ড়ি‌তে কোরবা‌নির ঈদ কর‌তে ঢাকা ছাড়ছেন কর্মব্যস্ত মানুষ। বাস কাউন্টারগু‌লো‌তে সকা‌লের দি‌কে বৃ‌ষ্টির কার‌ণে সেই অর্থে যাত্রীদের তেমন চাপ ছিল না। বেলা নয়টার পর থে‌কে যাত্রী‌র প‌রিমাণ বাড়‌তে থা‌কে। ত‌বে বৃ‌ষ্টির দু‌র্ভো‌গে বেশ ঝামেলায় পড়‌তে হয় যাত্রী‌দের।

বাস কাউন্টার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বেসরকা‌রি অ‌ফিস ছু‌টি হলে বিকে‌লে ও রা‌তের দি‌কে যাত্রীর চাপ বাড়বে। 

মহাখালী থেকে নর‌সিংদীর চালাকচরের উদ্দেশে ছেড়ে যায় সম্রাট প‌রিবহন। বাস‌টির কাউন্টার মাস্টার আব্দুর রউফ জানান, সকা‌লে তেমন যাত্রী ছিল না। সকাল ৯টার পর থে‌কে যাত্রী বাড়‌তে শুরু ক‌রে‌ছে। বৃ‌ষ্টির কার‌ণে যাত্রীরা দু‌র্ভো‌গে প‌ড়ে‌ছে। সব কাউন্টা‌রে অতটা জায়গাও নেই যে যাত্রীদের দাঁড়া‌তে দে‌বে। ফলে যাত্রীদের বৃ‌ষ্টি‌তে ভিজতে হচ্ছে। 

কিশোরগঞ্জগামী অনন্যা প‌রিবহনের কাউন্টারের বা‌ইরে বৃ‌ষ্টি‌তে ভি‌জেই বা‌সের জন‌্য অপেক্ষা কর‌ছি‌লেন শিপন। তি‌নি ব‌লেন, সকাল সকাল বের হতে চেয়েছি। কিন্তু বৃষ্টির জন‌্য বের হইনি। কিন্তু লাভ হ‌লো না, সেই বৃ‌ষ্টিতে ভি‌জেই গা‌ড়ির জন‌্য অপেক্ষা কর‌তে হ‌চ্ছে। যত দু‌র্ভোগই হোক, বা‌ড়ি‌তে যাব এটাই বড় আনন্দ।

মহাখালী বাস টা‌র্মিনা‌লের সাম‌নের সড়‌কে দা‌য়িত্বরত পুলিশ কন‌স্টেবল জিয়াউল ব‌লেন, সকা‌লে লোকজন কম দেখা গে‌ছে। সকালে রাস্তা ফাঁকা ছিল। এখন লোকজনও বাড়‌ছে, গা‌ড়িও বাড়‌ছে। ত‌বে কো‌নো যানজট নেই।

এনআই/কেএ