যাত্রীতে ঠাসা টার্মিনাল, কাউন্টার থেকে বলছে ‘যাত্রী কম’
মো. বাবু একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। পরিবারের সঙ্গে তিন বছর কোরবানির ঈদ করা হয়ে উঠেনি তার। এবার বাড়িতে ঈদ করতে পারার সুযোগ এবং একদিন আগে ছুটি মিলিয়ে তার চোখে-মুখে আনন্দের ছাপ।
রাজধানীর মহাখালী বাস টার্মিনালে বাবুর সঙ্গে কথা হয় ঢাকা পোস্টের। তিনি বলেন, গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহে ঈদ করতে যাব। এক ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে এখনো এনা বাসের টিকিট হাতে পাইনি। কষ্ট হলেও ঈদে বাড়িতে যাব, এটাই বড় আনন্দ।
বিজ্ঞাপন
পরিবার নিয়ে ঈদ করতে গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছেন ময়মনসিংহের আরেক বাসিন্দা মো. ইয়াকুব ভূঁইয়া। তিনি বলেন, পুরুষ যাত্রীদের চাপ দেখে আমার স্ত্রীকে দিয়ে নারী যাত্রীদের কাউন্টার থেকে টিকিট নিয়েছি। আমি লাইনে দাঁড়ালে এক ঘণ্টায়ও টিকিট পেতাম কি না সন্দেহ আছে।
রাজধানীর মহাখালী বাস টার্মিনালে ময়মনসিংহ রুটের এনা ট্রান্সপোর্টের সামনে দেখা গেল যাত্রীদের দীর্ঘ সারি। চলছে টিকিট বিক্রির ধুম। দম ফেলার ফুসরত পাচ্ছেন না কাউন্টারের টিকিট মাস্টার। অথচ কাউন্টারের লোকজন বলছেন, যাত্রী কম।
এনার টিকিট মাস্টার মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, গাড়ি কম আসছে বলেই যাত্রীর চাপ বেশি মনে হচ্ছে। রাস্তায় কিছুটা যানজট থাকায় গাড়ি মুভ করতে পারছে কম। সকাল থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত এনার ময়মনসিংহ রুটে বাস গেছে ১১৮টা।
সোমবার (২৬ জুন) মহাখালী বাস টার্মিনালে সরেজমিনে দেখা গেছে, ঢাকা ছাড়ছেন কর্মব্যস্ত মানুষ। গ্রামের বাড়িতে ঈদ করতে সরকারি চাকরিজীবীদের পাশাপাশি অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবীরাও ঢাকা ছাড়ছেন।
বাস কাউন্টার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সোমবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত সেই অর্থে যাত্রীর দেখা মেলেনি। তবে দুপুর ১টার পর থেকে যাত্রীর দেখা পায় বাস কাউন্টারগুলো। বিকেলের দিকে যাত্রীর চাপ বাড়তে থাকলেও ঈদে যে পরিমাণ যাত্রীর ভিড় দেখা যায়, সেটি এখনো শুরু হয়নি। রাতের দিকে যাত্রীর চাপ কিছুটা বাড়বে বলে প্রত্যাশা তাদের।
সিরাগঞ্জগামী এস আই এন্টারপ্রাইজের কাউন্টারের সামনে যাত্রীদের ভিড় দেখা যায়। কিন্তু টিকিট মাস্টারের সহযোগী মো. সামছু বললেন, যাত্রী নাই ভাই। সারা দিনে আমাদের ১০টা গাড়ি গেছে। রাতে যাত্রী বাড়বে।
সিরাগঞ্জের বাসিন্দা মির্জা গালিব এস আই এন্টারপ্রাইজের বাসে বাড়তি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ করেন। একই অভিযোগ করেন আরও কয়েকজন যাত্রী। গালিব জানান, অন্য সময় এ বাসের ভাড়া ৩৫০ টাকা হলেও ঈদ উপলক্ষ্যে নেওয়া হচ্ছে ৫০০ টাকা। ১৫০ টাকা বেশি নিচ্ছে। কিন্তু প্রতিবাদ করেও কোনো লাভ হবে না, যাত্রীরা তো জিম্মি।
যাত্রীদের অভিযোগ নিয়ে জানতে চাইলে টিকিট মাস্টারের সহযোগী মো. সামছু বলেন, গাড়ি তেল পুড়িয়ে খালি আসে।
বাস টার্মিনালে বগুড়া-নওগাঁগামী একতা ও শাহ ফাতেহ আলী বাসের জন্য অপেক্ষমান যাত্রীদের বিড়ম্বনায় পড়তে দেখা যায়। আগাম টিকিট বিক্রি হয়ে যাওয়ায় যাত্রীদের এ দুর্ভোগে পড়তে হয়। মো. রকিবুল নামের এক যাত্রী অভিযোগ করেন, গতকাল এসে বলেছিলাম টিকিট দিতে। কাউন্টার থেকে বলেছে, কালকে এলে পাবেন কিন্তু এখন বলছে টিকিট শেষ।
গণমাধ্যমকর্মী পরিচয় দিয়ে যাত্রীদের অভিযোগ নিয়ে কথা বলতে চাইলে একতা ও শাহ ফাতেহ আলী বাসের কোনো কর্মকর্তা কথা বলতে রাজি হননি।
বাস টার্মিনালের সামনের সড়কে দুপুর ২টার পর থেকে দায়িত্ব পালন করছেন কনস্টেবল মোহাম্মদ ইমরান। তিনি জানান, গাড়ির যথেষ্ট চাপ আছে। যাত্রী বেশি বলেই তো গাড়ির চাপ বেশি। রাস্তায় যানজটও হচ্ছে মাঝে মাঝে।
এনআই/এসএসএইচ/