বিভিন্ন সময় নিখোঁজ বাবাদের আগামী ঈদের আগেই ফিরিয়ে দেওয়ার আকুতি জানিয়েছে তাদের সন্তানরা। তাদের আকুতি, ঈদের আগেই বাবাকে ফিরিয়ে দিন। বাবার হাত ধরে আমরা ঈদগাহে যেতে চাই। বাবার সঙ্গে স্কুলে যেতে চাই। তাদের স্ত্রী ও স্বজনদের দাবি, নিখোঁজ ব্যক্তিরা জীবিত আছেন কী না অন্তত এ তথ্যটুকু যেন তাদের জানানো হয়।

রোববার (২৫ জুন) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে গুম হয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের সংগঠন ‘মায়ের ডাক’ এ মানববন্ধনে বাবা হারানো শিশুরা এসব কথা বলেন। আগামীকাল ২৬ জুন জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক নির্যাতনবিরোধী দিবস। দিবসটিকে সামনে রেখেই এ মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়।

মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা জানান, তাদের পরিবারের কেউ গুম হয়েছেন ৫ বছর, ৭ বছর, ১০ বছর এমনকি এক যুগ পেরিয়ে গেছে। দীর্ঘ এ বছরগুলোতেও প্রিয়জনকে ফিরে পাননি তারা।

তারা বলেন, আমাদের প্রিয়জনেরা অপরাধী হলে আইনি প্রক্রিয়ায় তাদের বিচার করুন।

বাবা হারা এক কিশোরী কান্না করতে করতে বলেন, আমি আর কিছুই চাই না। আপনারা আমার বাবাকে ফিরিয়ে দিন। আমার বাবা জীবিত নাকি মৃত, তার উত্তর আমি আমার ভাইকে দিতে পারি না। আমার ভাই যখন বলে বাবা কোথায়? আমি তখন নীরব হয়ে যাই।

এ কিশোরী আরও বলেন, কিছুদিন আগে আমার মা যখন একটি অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, আমার স্বামীকে আপনারা মেরে ফেলেছেন কী? তাহলে তার মরদেহ কোথায়। এটা শুনে আমার ভাই মাকে বলেন, তুমি এতোদিন বলেছিলে বাবা চলে আসবে। তুমি কেন মিথ্যা কথা বলেছ?

গুম–খুনের সঙ্গে যুক্তদের জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত না করার আহ্বান জানান মায়ের ডাকের অন্যতম সমন্বয়কারী সানজিদা আক্তার। তিনি বলেন, জাতিসংঘের শান্তিরক্ষাবিষয়ক প্রতিনিধিদের গুম-খুনের শিকার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে তাদের প্রতি যে অমানবিক আচরণ করা হচ্ছে, তার প্রতিকারের ব্যবস্থা নেওয়া হোক।

মানবাধিকার কর্মী নুর খান বলেন, এক যুগের বেশ সময় ধরে বলে আসছি- এ গুম হওয়া মানুষের পরিবারগুলো দুর্বিষহ যন্ত্রণায় জীবন যাপন করছেন। এখন তাদের কাছেই গুমের তথ্য চেয়ে তাদের নিদারুণ উপহাস করা হচ্ছে। যেসব মানবাধিকার কর্মী ও সংগঠন এসব পরিবারের পাশে দাঁড়াচ্ছেন তাদের নানাভাবে চাপের মধ্যে রাখা হচ্ছে। এ অবস্থার অবসান হওয়া দরকার।

নুর আলমের স্ত্রী রিনা আলম বলেন, তাদের বাড়িতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লোকেরা কয়েক দফায় গিয়ে জানতে চান নুর আলম কোথায়? আমাদের প্রতি এ নিষ্ঠুর আচরণের করা হচ্ছে কেন? অনেকে বলেন গুম হওয়া মানুষটির খোঁজ নিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীদের কাছে গেলে তাদের বলা হয় তিনি বিদেশ চলে গেছেন, অবৈধভাবে বিদেশ যাওয়ার সময় সাগরে ডুবে মরেছেন। এভাবে তাদের উপহাস করা হচ্ছে।

নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজনদের নিয়ে গঠিত মায়ের ডাক সংগঠনের সমন্বয়কারী আফরোজা আক্তার এর সভাপতিত্ব করেন। আর সঞ্চালনা করেন মায়ের ডাকের অপর সমন্বয়কারী মনজুর হোসেন। এতে নিখোঁজ বাবাকে ফিরিয়ে দেওয়ার আকুতি জানিয়ে কথা বলেন ২০১৪ সাল গুম হওয়া চঞ্চল হোসেনের ছেলে আহাদ হোসেন, ২০১৬ সালে গুম হওয়া আনোয়ার হোসেনের মেয়ে রাইসা, ২০১৩ সালে গুম হওয়া কাওসার হোসেনের মেয়ে লামিয়া আক্তার, ২০১৪ সালে গুম হওয়া মফিজুল ইসলামের ছেলে সহিদুল ইসলাম, ২০১৯ সালে গুম হওয়া আনিস ইসলামের ছেলে ইনাশা সোহেল হোসেন ও মেয়ে শাফা হোসেন, সাজেদুল ইসলামের মেয়ে অররা ইসলাম, ২০১৫ সালে গুম হওয়া নুর আলমের স্ত্রী রিনা আলম এবং ২০১৯ সালে গুম হওয়া ইসমাইল হোসেনে স্ত্রী নাসরিন জাহান।

এএইচআর/এফকে