কল্যাণপুরে হচ্ছে আরেক নান্দনিক হাতিরঝিল
ইট-পাথরের এ শহরে বুকভরে শ্বাস নেওয়ার জায়গা অনেক কম। তবুও ব্যস্ততার মাঝে একটু স্বস্তি পেতে প্রাণভরে নিশ্বাস নেওয়ার জায়গা খোঁজেন নগরবাসী। এমন মানুষদের কাছে বেশ পছন্দের একটি স্থান রাজধানীর হাতিরঝিল। যেখানে চারপাশে রয়েছে বাহারি গাছগাছালি, বসার সুব্যবস্থা, আলোকসজ্জা, পানির নৃত্যসহ নিরিবিলি পরিবেশে বসে একটু সময় কাটানোর সুযোগ।
নগরবাসীর জন্য হাতিরঝিলের মতো কল্যাণপুরে আরেকটি বিনোদনের জায়গা গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি)। এটি হবে মূলত জলকেন্দ্রিক ইকোপার্ক।
বিজ্ঞাপন
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, কল্যাণপুরের রিটেনশন পন্ড বা জলাধারকে হাতিরঝিলের মতো করে গড়ে তোলা হবে। এটি রাজধানীর জলাবদ্ধতা দূর করতেও কাজ করবে। এর ৫৩ একর জায়গা ঘিরে গড়ে তোলা হবে হাইড্রো ইকোপার্ক বা জলকেন্দ্রিক ইকোপার্ক।
এখানে থাকবে হাঁটার রাস্তা, সাইকেল লেন, শিশুদের খেলার জায়গা, কৃষি উদ্যান, প্রজাপতি ও পাখির অভয়ারণ্য, জীববৈচিত্র্যময় দ্বীপসহ নানা আয়োজন। এ প্রকল্পে মোট ১০টি অঞ্চল থাকবে। যার মধ্যে পাঁচটিতে থাকবে প্রকৃতির ছোঁয়া লাগানো পরিবেশ। যেখানে রাখা হবে প্রজাপতির উন্মুক্ত স্থান, জীববৈচিত্র্যময় দ্বীপ, পাখির আশ্রয়স্থল, জলজ পার্ক– সবগুলোতে থাকবে জলপথ। পর্যটকরা ১০টি অঞ্চলেই নৌযানে ঘুরতে পারবেন।
১৪টি পয়েন্ট দিয়ে এ হাইড্রো ইকোপার্কে সাধারণ মানুষ প্রবেশ করতে পারবেন। দিতে হবে না কোনো প্রবেশ মূল্য। পানির ওপর দিয়ে এবং পাশ দিয়ে থাকবে হাঁটার রাস্তা, সাইকেল লেন। তার পাশে থাকবে কৃষিজমি, কোল্ড স্টোরেজ, সৌর জল শোধনাগার।
ডিএনসিসি সংশ্লিষ্টরা জানান, কল্যাণপুরে তাদের রিটেনশন পন্ড বা জলাধারের জায়গায় এ হাইড্রো ইকোপার্ক গড়ে তোলা হবে। জলাধারের প্রায় ৫৩ একর জায়গা দীর্ঘদিন ধরে দখল অবস্থায় ছিল। গড়ে উঠেছিল অবৈধ বসতি ও স্থাপনা। যে কারণে রিটেনশন পন্ড জলাধার হিসেবে কাজ করতে পারছিল না।
তারা জানান, মোহাম্মদপুর, আদাবর, শ্যামলী, ধানমন্ডি, মিরপুর, কল্যাণপুরের বৃষ্টির পানি আগে এ জলাধারে এসে জমা হতো। কিন্তু সেটি সঠিকভাবে না হওয়ায় বৃষ্টি হলেই এসব এলাকায় জলাবদ্ধতা লেগে থাকে। পদ্ধতি অনুযায়ী, এখানে জমে থাকা পানি পাম্প করে নদীতে ফেলা হতো। জলাধারটি আগে ঢাকা ওয়াসার মালিকানাধীন ছিল। দুই বছর আগে এটি ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
কল্যাণপুরের রিটেনশন পন্ড বা জলাধারকে হাতিরঝিলের মতো করে গড়ে তোলা হবে। এটি রাজধানীর জলাবদ্ধতা দূর করতেও কাজ করবে। এর ৫৩ একর জায়গা ঘিরে গড়ে তোলা হবে হাইড্রো ইকোপার্ক বা জলকেন্দ্রিক ইকোপার্ক
রিটেনশন পন্ড কেন্দ্রিক হাইড্রো ইকোপার্ক নির্মাণ হলে রাজধানীর একটি বড় অংশের জলাবদ্ধতার পানি গিয়ে এখানে জমা হবে। পরে এগুলো পাম্প করে তুরাগ নদে ফেলা হবে। ফলে রাজধানীর বড় একটি অংশে আর জলাবদ্ধতা হবে না। পাশাপাশি নগরবাসী হাতিরঝিলের মতো নান্দনিক একটি হাইড্রো ইকোপার্ক পাবে— বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা গেছে, জলাধারের ৫৩ একর জায়গা অবৈধ দখলমুক্ত করা হয়েছে। এখন সেখানে মাটি খনন ও নকশা তৈরির কাজ চলছে। ভেকু মেশিনের সাহায্যে মাটি খননের কাজ হচ্ছে, পাশাপাশি আশপাশের সব ময়লা-আবর্জনা অপসারণ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে প্রায় ৩০ লাখ ঘনফুট মাটি ও বর্জ্য অপসারণের কাজ করেছে ডিএনসিসির প্রকৌশল বিভাগ।
এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, কল্যাণপুর রিটেনশন পন্ডে হাইড্রো ইকোপার্ক নির্মাণের লক্ষ্যে আমরা এখানে খনন কাজ শুরু করেছি। এটি করতে গিয়ে আমাদের অনেক ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছে। সব বয়সের মানুষের জন্য এ ইকোপার্ক করা হবে। শিশু, নারী, পুরুষ ও বয়স্ক– সব মানুষের জন্য সুবিধা থাকবে। এখানে আমরা সিটি ফরেস্ট গড়ে তুলব।
‘প্রকৃতি নির্ভর ইকোপার্ক হবে। ফলে এটি যেমন সাধারণ মানুষের বিনোদনকেন্দ্রে পরিণত হবে, তেমনি রাজধানীর একটি বড় অংশের জলাবদ্ধতা নিরসন করবে। এ জলাধারে সব পানি গিয়ে জমা হবে, এরপর আমরা পাম্প করে তুরাগ নদে পার করে দেব।’
জানা গেছে, বর্তমানে হাইড্রো ইকোপার্কের নকশাসহ নির্মাণের প্রাথমিক প্রস্তুতি চলছে। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান দিয়ে নকশা প্রণয়নের কাজ করছে সংস্থাটি। আগামী দুই বছরের মধ্যে এ জলকেন্দ্রিক ইকোপার্কের কাজ শেষ করতে চায় তারা।
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের শেষের দিকে ঢাকা ওয়াসা ১৩টি খাল ও জলাশয় ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের কাছে হস্তান্তর করে। এগুলোর মালিকানা ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পায় ডিএনসিসি। পরে জলাবদ্ধতা নিরসনে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করে সংস্থাটি। সর্বশেষ কল্যাণপুরের এ রিটেনশন পন্ডের ৫৩ একর জায়গার ওপর জলকেন্দ্রিক ইকোপার্ক বা হাইড্রো ইকোপার্ক নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে তারা।
থাকবে হাঁটার রাস্তা, সাইকেল লেন, শিশুদের খেলার জায়গা, কৃষি উদ্যান, প্রজাপতি ও পাখির অভয়ারণ্য, জীববৈচিত্র্যময় দ্বীপসহ নানা আয়োজন। এ প্রকল্পে মোট ১০টি অঞ্চল থাকবে। যার মধ্যে পাঁচটিতে থাকবে প্রকৃতির ছোঁয়া লাগানো পরিবেশ। যেখানে রাখা হবে প্রজাপতির উন্মুক্ত স্থান, জীববৈচিত্র্যময় দ্বীপ, পাখির আশ্রয়স্থল, জলজ পার্ক– সবগুলোতে থাকবে জলপথ। পর্যটকরা ১০টি অঞ্চলেই নৌযানে ঘুরতে পারবেন
১৯৮৯ সালে এ জলাধারের জায়গা অধিগ্রহণ করে ঢাকা ওয়াসা। অধিগ্রহণের পরও ওই জায়গা নানাভাবে দখল করে রাখেন স্থানীয় প্রভাবশালীসহ অধিগ্রহণের সময় টাকা পাওয়া জমির মালিকরাও। সম্প্রতি ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করে দখলদার উচ্ছেদ করে।
কল্যাণপুরের রিটেনশন পন্ডের পাশের এলাকার বাসিন্দা মোখলেছুর রহমান। তিনি বলেন, আমরা আগে দেখেছি রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার পানি এখানে এসে জমা হতো। পরে বিভিন্ন সময় এ জায়গা দখল করে নানা ভবন, অবৈধ স্থাপনা গড়ে ওঠে। তখন আর সেভাবে কাজ হচ্ছিল না। গত মাসে উত্তর সিটি কর্পোরেশন এখানে বড় ধরনের উচ্ছেদ অভিযান চালায়। যারা দখল করে রেখেছিল তারা নানাভাবে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে। মানববন্ধন ও আন্দোলন করে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সিটি কর্পোরেশন এ জায়গা দখলমুক্ত করতে সক্ষম হয়।
‘এখন সেখানে ভেকু দিয়ে মাটির খনন কাজ চলছে। সব ধরনের বর্জ্য অপসারণ করা হচ্ছে। সিটি কর্পোরেশনের লোকজন বলছে, এখানে পানির ওপরে পার্ক গড়ে তোলা হবে। পাশাপাশি রিটেনশন পন্ড হিসেবেও কাজ করবে এটি। ফলে শহরের বিভিন্ন এলাকার বৃষ্টি পানি এখানে জমা হবে, জলাবদ্ধতা থাকবে না। এখানে যদি দৃষ্টিনন্দন একটি পার্ক গড়ে ওঠে তাহলে এলাকাবাসী উপকৃত হবে। পাশাপাশি সাধারণ মানুষও একটি বিনোদনকেন্দ্র পাবে। স্থানীয় হিসেবে আমরাও চাই এমন কিছু হোক এখানে।’
এএসএস/এসএসএইচ/