বরগুনায় হাটে গরু আনতে ভয় পাচ্ছেন খামারিরা
পবিত্র ইদুল আজহার বাকি আর মাত্র চার দিন। ক্রেতা সমাগম থাকলেও কাঙ্ক্ষিত গরু নেই বরগুনার পশুর হাটগুলোতে। লাম্পি স্কিন ডিজিজ নামে ভাইরাসঘটিত রোগের কারণে বাজারে গরু আনছেন না খামারিরা। এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে জেলার ৪০ ভাগ গরু। আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ৫ শতাধিক গরু। এ কারণে বিপাকে খামারি ও বিক্রেতারা।
শনিবার (২৪ জুন) বিকেলে পৌরসভার শিশু সদন মাঠে জেলার প্রধান পশুর হাট ঘুরে দেখা যায়, হাটে বিগত বছরের চেয়ে তুলনামূলক কম গরু এসেছে। মাঝারি ধরনের বেশ কিছু গরু থাকলেও বড় সাইজের গরু হাতেগোনা কয়েকটি। ভাইরাসের কারণে গরু হাটে আনছেন না বিক্রেতারা। লাম্পি স্কিন ডিজিজ প্রতিরোধে হাটে বসানো হয়েছে অস্থায়ী মেডিকেল টিম।
বিজ্ঞাপন
জানা গেছে, জেলার অধিকাংশ গরু এখন লাম্পি স্কিন ডিজিজ রোগে আক্রান্ত, মারাও গেছে প্রায় ৫ শতাধিক গরু। এতে গরু সংকটের কারণে বেড়েছে দাম। গরুর এই রোগ মহামারি আকার ধারণ করায় খামারিরা সুস্থ গরু বাজারে নিচ্ছেন না। তারা চেষ্টা চালাচ্ছেন খামারেই গরু বিক্রি করতে। এই রোগের ভয়ে উন্নত জাতের গরু বাজারে আনছেন না খামারিরা।
সদর উপজেলার খামারি শাকিল আরমান বলেন, আমার খামারে ১৫টি কোরবানির গরু আছে। ছোঁয়াচে লাম্পি স্কিন ডিজেস নামের রোগের কারনে গরু বাজারে আনিনি এতদিন। আজ বাজারে কয়েকটি গরু এনেছি। এখন পর্যন্ত কাঙ্ক্ষিত ক্রেতা পাচ্ছি না। বাজারে এসে দেখি আক্রান্ত গরুও এসেছে। এ অবস্থায় গরু নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছি।
খামারি মোতালেব হোসেন বলেন, লাম্পি স্কিন ডিজিজ রোগে আমার একটি গরু মারা গেছে। এখন আরেকটি গরুর অবস্থাও সংকটাপন্ন। এ অবস্থায় কোরবানির জন্য গরু লালন-পালন করে আমার প্রায় পাঁচ লাখ টাকা লোকসানে পড়তে হয়েছে। গরু দুটি কোরবানির হাটে বিক্রি করার কথা ছিল।
ইউসুফ আলী নামে এক ক্রেতা বলেন, এ বছর গরু অনেক কম। যা উঠেছে তার দাম অনেক চড়া। আগে বাজারে বড় বড় গরু আসতো, এ বছর ২-৩ টি ছাড়া কোনো বড় গরু নেই। আরও ২-১ দিন দেখবো, তারপর ভালো গরু পেলে কিনবো। নয়তো ছাগল কোরবানি দেব।
বরগুনা পৌর পশুর হাটের ইজারাদার তৌহিদুল ইসলাম বলেন, এবার গরু নেই বললেই চলে। তারপরও যেসব গরু এসেছে তা বিক্রি হচ্ছে না। ভাইরাসের কারণে এই ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে সকলকে। আক্রান্ত গরু যাতে অন্য গরুকে সংক্রমিত করতে না পারে সেজন্য আমরা সতর্ক রয়েছি।
হাটে মেডিকেল টিমের দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সোহেল মিয়া বলেন, আমরা নিবিড়ভাবে হাট মনিটরিং করছি। কয়েকটি গরুর শরীরে লাম্পি স্কিন ডিজিজের উপসর্গ দেখেছি। ওসব গরুকে আলাদা করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ভ্যাকসিন না থাকায় এ রোগ প্রতিরোধে বেগ পেতে হচ্ছে। হাটে যাতে রোগাক্রান্ত গরু নিয়ে কেউ না আসে সেজন্য সকলকে সচেতন করা হচ্ছে। জেলায় চাহিদার তুলনায় বেশি কোরবানির গরু থাকার পরও লাম্পি স্কিন ডিজিজ রোগের কারণে সংকট তৈরির সম্ভাবনা রয়েছে।
প্রসঙ্গত, চলতি বছর বরগুনায় কোরবানির জন্য ৩৫ হাজার গরুর চাহিদা রয়েছে। জেলায় কোরবানি যোগ্য গরু রয়েছে ৩৬ হাজার। চাহিদার তুলনায় বেশি গরু থাকা সত্ত্বেও লাম্পি স্কিন ডিজিজের কারণে দুই হাজার গরুর সংকট দেখা দিতে পারে। এ কারণে গরুর দাম বৃদ্ধির শঙ্কা রয়েছে। এছাড়াও এ রোগের কারণে খামারিরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
খান নাঈম/আরএআর