ঘুষের টাকাসহ গৌতম ভট্টাচার্য গ্রেপ্তার
কাউকে ছাড় নয়, জঞ্জাল পরিষ্কারের দাবি দুদক কর্মকর্তাদের
রাজধানীর মতিঝিলে এক সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ঘুষের টাকা নেওয়ার সময় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) স্টেনোগ্রাফার পদের গৌতম ভট্টাচার্য গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন। গৌতম দুদক মহাপরিচালক (মানি-লন্ডারিং) মোকাম্মেল হকের ব্যক্তিগত সহকারী (পিএ) পদে কর্মরত ছিলেন।
ঘুষের টাকাসহ আটক গৌতমের বিষয়ে কঠোর অবস্থানের কথা জানিয়েছে দুদকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। কর্মকর্তাদের দাবি, গৌতম যদি অভিযুক্ত হয় তাহলে সেটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ এবং এ ধরনের জঞ্জাল থেকে দুদক মুক্তি পাক।
বিজ্ঞাপন
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দুদক কমিশনার (অনুসন্ধান) মোজাম্মেল হক খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, অভিযোগ যতটুকু শুনেছি এবং সেটা যদি প্রমাণিত সত্য হয় তাহলে দুদক কাউকেই ছাড় দেবে না। নিজেদের কর্মচারী হলেও দুর্নীতির প্রশ্নে দুদক সব সময় কঠোর অবস্থানে থাকবে।
অন্যদিকে গৌতমের সহকর্মী ও দুদকের একাধিক কর্মকর্তা বলছেন, দুদক কর্মকর্তাদের নাম ব্যবহার করে বেশকিছুদিন ধরেই এক শ্রেণির প্রতারক চক্র সক্রিয় রয়েছে, যারা অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে কিংবা ভুয়া চিঠি দিয়ে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। আমাদের নিজস্ব একটি টিম এ বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে ও পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে। কারণ প্রতারণার ধারাটি আমাদের তফসিলভুক্ত নয়।
তিনি বলেন, আমরা নিজেরাই এ বিষয়টি নিয়ে বিব্রত। কারণ দুর্নামের দায়ভার আমাদের ওপর বর্তায়। আমাদের নিজেদের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী যদি জড়িত থাকে, তাদের আইনের আওতায় আনা হোক। আমরা জঞ্জালমুক্ত দুদক চাই।
গৌতম ভট্টাচার্য সাঁটলিপিকার-কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে দুদকে যোগ দেন। তার গ্রামের বাড়ি মৌলভীবাজার।
শুক্রবার (২৩ জুন) মতিঝিলের একটি হোটেল থেকে ওই ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ঘুষের টাকা আনতে যান গৌতমসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার হওয়াদের মধ্যে রয়েছেন- গৌতম ভট্টাচার্য, হাবিবুর রহমান, পরিতোষ মন্ডল ও পুলিশের চাকরিচ্যুত কনস্টেবল মো. এসকেন আলী খান। গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে মিষ্টির ৪টি প্যাকেট, নগদ দেড় লাখ টাকা, ৪টি মোবাইল ফোন, দুদকের মনোগ্রাম সম্বলিত খাকি রঙের একটি খাম ও দুদকের একটি নোটিশ জব্দ করা হয়েছে বলে পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন।
হারুন অর রশীদ বলেন, ভিকটিম আশিকুজ্জামান একজন সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ী। বায়তুল মোকাররম মসজিদের কার্পেটের দোকানে ইমপোর্ট করা কার্পেট ও জায়নামাজ সরবরাহ করেন তিনি। গত ২০ জুন আশিকুজ্জামানের উত্তরার বাসায় দুদকের মনোগ্রাম সম্বলিত খাকি রঙের খামে একটি নোটিশ নিয়ে একজন কথিত দুদক অফিসার যান। কথিত চিঠিতে আশিকুজ্জামানের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয় ব্যবসার আড়ালে স্বর্ণের চোরাচালান ও মানিলন্ডারিং নিয়ে। এই ভয়ানক অভিযোগ শুনে ঘাবড়ে যান আশিকুজ্জামান।
ভিকটিমের এই ভয়ের সুযোগ নিয়ে কথিত দুদক অফিসার তাকে বলেন, আপনি মোবাইল ফোন বন্ধ করে আত্মগোপনে চলে যান। আপনাকে ডিবি, সিআইডি ও দুদকসহ বিভিন্ন সংস্থা গ্রেপ্তারের জন্য খুঁজছে।
ডিবি প্রধান বলেন, ভিকটিমের বাসায় আসা কথিত দুদক অফিসার আশিকুজ্জামানকে হোয়াটসঅ্যাপে দুদকের কথিত আরেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলিয়ে দেন। ওই কথিত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ভিকটিমকে আরও ভয় পাওয়ানোর জন্য তাকে বলেন, শূন্য থেকে সে আজ কোটি কোটি টাকার মালিক। দুদকের জিম্মায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সব প্রমাণ পাওয়া যাবে। এমতাবস্থায় প্রচলিত আইন অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। ঘাবড়ে যাওয়া আশিকুজ্জামানকে দফায় দফায় ফোন দেওয়া হয় হোয়াটসঅ্যাপে। ভয় দেখানো হয় সম্পত্তি ক্রোক করা, যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের ব্যবস্থা করা, প্রিন্টেড ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মাধ্যমে বেইজ্জতি করার।
তিনি আরও বলেন, এক পর্যায়ে দুদকের কথিত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আশিকুজ্জামানকে মতিঝিলের হিরাঝিল হোটেলের দ্বিতীয় তলায় এসে সমঝোতার জন্য নির্দেশ দেন। প্রথমে তার কাছে ৫ কোটি টাকা দাবি করা হয়। পরে সমঝোতা অনুসারে প্রথমে দুই কোটি টাকা দিতে বলা হলেও পরবর্তী সময়ে দিতে বলা হয় এক কোটি টাকা। বিনিময়ে সব অভিযোগ থেকে অব্যাহতির নিশ্চয়তা দেওয়া হয়।
এই কথা অনুযায়ী গত শুক্রবার (২৩ জুন) ভিকটিমকে এক কোটি টাকার মধ্যে প্রথম কিস্তিতে ২০ লাখ টাকা দিতে বলা হয়। বাকি টাকা রোববার ব্যাংকের মাধ্যমে দেওয়ার জন্য বলা হয়।
সন্দেহ হলে ভিকটিম বিষয়টি ডিবি লালবাগ বিভাগকে জানান। পরে গতকাল ডিবি লালবাগের টিম হোটেল হিরাঝিলের আশপাশে অবস্থান নেয়। সমঝোতা অনুসারে ভিকটিম আশিকুজ্জামান চারটি মিষ্টির প্যাকেটে দেড় লাখ টাকা নিয়ে হোটেল হিরাঝিলে যান। তার কাছ থেকে মিষ্টির প্যাকেটে সংরক্ষিত টাকা গ্রহণের সময় পাশে অবস্থান নেওয়া ডিবি পুলিশ তাদের হাতেনাতে গ্রেপ্তার করে।
আরএম/এসএম