গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের বিদ্যুৎ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ইব্রাহিম খলিলের বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে বেতন-ভাতার টাকা ছাড়াও ৮ কোটি ৭১ লাখ ৪১ হাজার টাকার বেশি সন্দেহভাজন লেনদেনের প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এছাড়াও সংস্থাটির অনুসন্ধানে প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে ১ কোটি ৪৬ লাখ টাকার বেশি অবৈধ সম্পদ এবং তার স্ত্রী মনোয়ারা বেগমের ২৫ লাখ ৯৩ হাজার টাকার বেশি অবৈধ সম্পদের প্রমাণ পাওয়া গেছে।

এ বিষয়ে রাষ্ট্রীয় দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রকৌশলী ইব্রাহিম খলিল ও তার স্ত্রী মনোয়ারা বেগম এসব সম্পদ ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জন করেছেন। যে কারণে তাদের বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার (২২ জুন) মামলার অনুমোদন দিয়েছে কমিশন। যেকোনো সময় দুদকের গাজীপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয় থেকে মামলাটি দায়ের করা হবে।

দুদকের উপপরিচালক (জনসংযোগ) মুহাম্মদ আরিফ সাদেক ঢাকা পোস্টকে মামলা অনুমোদনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এ বিষয়ে দুদকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম না প্রকাশ শর্তে ঢাকা পোস্টকে বলেন, ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে ঘুষ ও অনিয়ম-দুর্নীতি করে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) ইব্রাহিম খলিলের বিরুদ্ধে বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জন ও বিদেশে পাচার সংক্রান্ত একটি অভিযোগ জমা পড়ে দুদকে। কমিশন অভিযোগটি অনুসন্ধানের জন্য দুদকের গাজীপুর জেলা সমন্বিত কার্যালয়ের উপপরিচালক মোজাহার আলী সরদারকে দায়িত্ব দেয়। তার সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতেই প্রকৌশলী ইব্রাহিম খলিল ও তার স্ত্রী মনোয়ারা বেগমের বিরুদ্ধে মামলার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। 

অন্যদিকে অনুসন্ধান কর্মকর্তা উপ-পরিচালক মোজাহার আলী সরদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, আজ বিকেলে মামলা অনুমোদনের চিঠি পেয়েছি। আগামী সপ্তাহের প্রথমদিকে মামলা দায়ের হবে।

অনুসন্ধান প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, প্রকৌশলী ইব্রাহিম খলিল ও তার স্ত্রীর সম্পদের হিসাব দাখিলের জন্য গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে দুদক থেকে নোটিশ জারি করা হয়। ওই নোটিশ পেয়ে তারা সম্পদের হিসাব বিবরণী দুদকে দাখিল করেন। প্রকৌশলী ইব্রাহিম খলিলের সম্পদ বিবরণী পর্যালোচনা ও অন্যান্য নথিপত্র যাচাই করে দেখা যায়, তিনি অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে ১ কোটি ৪৬ লাখ ৪৯ হাজার ৩৫ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। তারই প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় স্ত্রী মনোয়ারা বেগম ২৫ লাখ ৯৩ হাজার ৯১৮ টাকার অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছেন। 

প্রতিবেদন সূত্রে আরও জানা যায়, ইব্রাহিম খলিল গাজীপুর পৌরসভায় ১৯৯৩ সালে সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে যোগ দেন। গাজীপুর পৌরসভাকে সিটি করপোরেশনে রূপান্তর করার পর ২০১৩ সাল থেকে তিনি বিদ্যুৎ বিভাগে কর্মরত। চাকরিকালীন সময়ে তার ব্যাংক হিসাবে বেতন-ভাতার টাকা জমা হওয়া ছাড়াও ৮ কোটি ৭১ লাখ ৪১ হাজার ৮১ টাকার সন্দেহজনক লেনদেন হয়েছে। এসব টাকা কোথা থেকে এসেছে এবং তা পরে কোথায় স্থানান্তর করা হয়েছে তার আরও অনুসন্ধান করা প্রয়োজন। প্রকৌশলী ইব্রাহিম খলিল গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনে চাকরিকালীন সময়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জন করে তা স্বামী-স্ত্রীর ভোগ দখলে রাখা এবং ব্যাংক হিসাবে অস্বাভাবিক লেনদেন করায় প্রযোজ্য ধারায় মামলা দায়ের করার অনুমোদন দেওয়া হয়। তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন-২০০৪ এর ২৭ (২) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।

এ বিষয়ে প্রকৌশলী ইব্রাহিম খলিলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।

আরএম/জেডএস