নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে সরকারের আগ্রহ কম থাকায় এবারের বাজেটে তা গুরুত্ব পায়নি। এছাড়া বিদ্যুৎ ও জ্বালানির সংকট অবশ্যম্ভাবী পরিণতিতে রূপ নিতে চলেছে।

বৃহস্পতিবার (২২ জুন) হোটেল লেকশোরে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) উদ্যোগে আয়োজিত ‘জ্বালানি ও বিদ্যুৎ বিষয়ক সমস্যা এবং প্রস্তাবিত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এ কথা বলেন। 

সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ শামসুল আলম, বদরুল ইমাম ও এজাজ হোসেইন।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ইজাজ আহমেদ বলেন, দেশে বর্তমান বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২৭ হাজার মেগাওয়াট। বাজেটে বলা হয়েছে, ভবিষ্যতে তা ৬০ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করা হবে। একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে, মেগাওয়াট কিন্তু পাওয়ার। জ্বালানি ছাড়া মেগাওয়াট কিছুই উৎপাদন করতে পারবে না। সুতরাং জ্বালানি নিশ্চিত না করে মেগাওয়াট বাড়িয়ে কোনো লাভ নেই।

তিনি বলেন, এটা সুস্পষ্ট যে, নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে সরকারের কোনো আগ্রহ নেই। এবারের বাজেটে নবায়নযোগ্য জ্বালানির জন্য তেমন কিছুই বরাদ্দ রাখা হয়নি। যদি রাখা হতো তাহলে সংকট মোকাবিলার একটি পথ তৈরি হতো। নবায়নযোগ্য জ্বালানির পাশাপাশি নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কারেও সরকারের কর্মক্ষমতা লক্ষ্য করা যায় না। আমরা বলেছি যে, প্রতি বছর নতুনভাবে ২৫টি গ্যাসকূপ আবিষ্কার করা দরকার, যা করা হচ্ছে না। অন্যদিকে এলএনজির ওপর নির্ভরশীলতা বাড়ানো হচ্ছে।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. শামসুল আলম বলেন, এখন যে জ্বালানি সংকট... শিল্প কারখানায় জ্বালানি না দিতে পারার কারণে যে ইফেক্ট তৈরি হচ্ছে, কারখানায় উৎপাদন ঠিকমতো হচ্ছে না। এছাড়া বিদ্যুতের দাম বাড়ার কারণে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে ও ব্যয় কমাতে কর্মচারী ছাঁটাই হচ্ছে। সংকট নিয়ে আমরা এর আগে যে কথাগুলো বহুদিন ধরে বলে আসছি, এখন সেগুলো পরিণতিতে পরিণত হচ্ছে।

শামসুল আলম বলেন, বড় বাজেট সরকার অনেক আনন্দ উৎসব করে পেশ করে, তারা যত বেশি আনন্দিত হয়, আর আমরা শঙ্কিত হই। এবারের বাজেটের অবস্থা দেখে আমার প্রথম মনে হচ্ছিল, সরকারের কর্তা ব্যক্তিরা যখন বলছিলেন আমরা অনেক বড় বাজেট দিতে পেরেছি, এত বড় বাজেট দেওয়া একটা বিরাট সাহসের ব্যাপার। কিন্তু সেখানে ৭ শতাংশের বেশি জিডিপি প্রবৃদ্ধি, সেখানে মুদ্রাস্ফীতি ৬ শতাংশ, আমাদের ক্যাবের হিসেবে তা ১০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে।

তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির দাম বাড়বে, কারণ যারা বিক্রি করে বা রপ্তানি করে, সেই কৌশল তাদের জানা আছে। আন্তর্জাতিক বাজারে যদি দাম নাও বাড়ে তারপরও তো আমাদের মুদ্রাস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করার জন্য জ্বালানি বা বিদ্যুতের দাম বাড়াতে হবে। তাহলে আমি এতবড় বাজেট দেখে কেন আতঙ্কিত হব না?

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বদরুল ইমাম বলেন, আমাদের এখন মূল সমস্যা হচ্ছে জ্বালানি সংকট ও গ্যাসের সংকট। এ সংকট সহসাই কেটে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই, বরং সামনে তা আরও বাড়তে পারে। বর্তমানে জ্বালানি আমদানি করতে ১০ বিলিয়ন ডলারের প্রয়োজন হয়। ২০৩০ সাল নাগাদ সেই খরচ ২০ বিলিয়নে পৌঁছাবে। জ্বালানির এই চাহিদা কীভাবে মেটানো হবে? এখনো সময় ও সম্ভাবনা রয়েছে দেশীয় খাতে নজর দেওয়ার। যদি যথাযথ অনুসন্ধান করা হয়, বছরে তিন থেকে চারটি নতুন গ্যাসক্ষেত্র পাওয়া যাবে। এলএনজি আমদানি করতেই হবে। কিন্তু দেশীয় সম্ভাবনা থাকার পরেও ডলার সংকটের মধ্যে কেন আমরা আমদানিতে নির্ভরশীল হব?

বক্তারা বলেন, শেভরনের অধীন বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্র এবং সরকারের অধীন তিতাস গ্যাসক্ষেত্র একই মজুদ ও উৎপাদনক্ষম গ্যাসকূপ। অথচ বিবিয়ানা প্রতিদিন ১২০০ এমএমসিএফ গ্যাস উত্তোলন করে, অপরদিকে তিতাস উত্তোলন করে ৩০০ এমএমসিএফ গ্যাস। উৎপাদনের এই ব্যর্থতার কারণ হলো কারিগরি সমস্যা। এদিকেও নজর দিতে হবে।

বক্তারা আরও বলেন, বাপেক্স তার সক্ষমতা অনুসারে বছরে তিনটি কূপ খনন করতে পারে। কিন্তু অর্থনৈতিক সংকটের কারণে তারা সেটা করতে পারে না। তাদের চেয়ে থাকতে হয় মন্ত্রণালয়ের দিকে। জ্বালানি মন্ত্রণালয় গ্যাস ডেভলপমেন্ট ফান্ড তৈরি করেছিল শুধুমাত্র বাপেক্সের অনুসন্ধান ও উত্তোলন কাজের জন্য। সেই ফান্ডে ১৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা জমা পড়েছে। দুঃখের বিষয় হলো, বাপেক্স সেই টাকা পায়নি। বরং সেই ফান্ড থেকে ২ হাজার কোটি টাকা নিয়ে এলএনজি আমদানি করা হয়েছে।

ওএফএ/কেএ