ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল হোসেন আলম (হিরো আলম) তার প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন। ফলে এই নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন তিনি। প্রাথমিক বাছাইয়ে হিরো আলমের মনোনয়নপত্র বাতিল করেছিল নির্বাচন কমিশন।

ইসির সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে আপিল করেন হিরো আলম। ওই আপিলের শুনানি করে আজ তার মনোনয়নপত্র বৈধ বলে সিদ্ধান্ত দেয় ইসি।

বৃহস্পতিবার (২২ জুন) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে আপিল শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। পরে সাংবাদিকদের এ বিষয়ে ব্রিফ করেন ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ। 

অতিরিক্ত সচিব বলেন, আপিল শুনানিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিরো আলম ও জাকের পার্টির কাজী মো. রাশিদুল হাসান মনোনয়ন ফিরে পেয়েছেন। ফলে এই দুই প্রার্থী ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন। আগামী রোববার এ বিষয়ে আদেশ জারি হবে।

অন্য দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী তারিকুল ইসলাম ভুঁঞা এবং আসাদুজ্জামান জালাল প্রার্থিতা ফিরে পাননি বলে জানান তিনি।

ইসিতে আস্থা ফিরে পেয়েছি : হিরো আলম

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) প্রতি আস্থা ফিরে পেয়েছেন হিরো আলম। বৃহস্পতিবার (২২ জুন) নির্বাচন ভবনে আপিল শুনানির পর প্রার্থীতা ফিরে পেয়ে এ কথা বলেন তিনি।

তিনি বলেন, আমার ভেতরে একটা নিরাশা ছিল যে ইসিতে বোধহয় রায় পাবো না। আসলে যে সত্যের জয় অলটাইম হয়। আমি জোর গলায় বলেছিলাম যে আমাদের সমর্থকদের স্বাক্ষর ঠিক আছে, রিটার্নিং কর্মকর্তা যেদিন যাচাই করেছে তাদের সিদ্ধান্তটা ভুল ছিল। ওখানে আমার ভোটাররা উপস্থিত ছিল, আমি জিজ্ঞেস করতে বলেছিলাম, তিনি জিজ্ঞেস করেন নাই। এবং তিনি বলেছিলেন আমার সমর্থকদের স্বাক্ষর মিল নাই। এখানে ইসি দেখেছে স্বাক্ষর মিল আছে। এখানে সবকিছু মিল করে দেখেছে আমি সঠিক আছি। সবকিছু বিবেচনা করে ইসি আমাকে বৈধ ঘোষণা করেছে।

আস্থা ফিরে পেলেন কি-না, এমন প্রশ্নের জবাবে হিরো আমল বলেন, আস্থার জায়গাটা তো অবশ্যই ভালো। এই যে দেখেন আমি কিন্তু বারবার বলেছি আমি ফিরে পাবো না। আজকে এখানে আমি ফিরে পেয়েছি। এই রকম আজকে হিরো আলম একটা ফিরে পেয়েছে। আরো যখন দশটা হিরো আলম ফিরে পাবে, আস্তে আস্তে আমাদের ইসির ওপর যে মানুষের ভুল ধারণা আছে এগুলা দূর হয়ে যাবে। মানুষের ইসির ওপর আস্থা আসবে, সেই হিসেবে জনগণ সুষ্ঠু নির্বাচনের আশা করবে। যেরকম আজকে আমি এখানে সুষ্ঠু বিচার পেয়েছি। দেশবাসী দোয়া করবেন যেন ঢাকা-১৭ আসনে সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে পাই। আজকে যেহেতু আমি সুষ্ঠু বিচার পেয়েছি, সেহেতু আশা রাখতেছি নির্বাচনের দিনে সুষ্ঠু একটা নির্বাচন হবে। 

তিনি আরও বলেন, আমি জানি দেশবাসী আমার এই নির্বাচনের দিকে আশা রাখবে। আপনারা ভোট দেন, না দেন, কেন্দ্রে আসবেন। কেউ যদি সিল মারে, আমার কথা হচ্ছে যদি দশজন সিল মারে আপনারা বিশজন বের হবেন যাতে সিল না মারতে পারে। এরকম করে যদি সবাই রুখে দাঁড়ান তাহলে কেউ আর সিল মারতে পারবে না। আমাদের আসন ছিনিয়ে নিতে পারবে না। আপনাদের নিরবতার কারণেই কিন্তু জোর করে আমাদের আসন ছিনিয়ে নেয়। জোর করে অন্য প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। ব্যালটেই আমার বেশি আস্থা। এর আগে আমি ভোট করেছি, যেহেতু ছয়-নয় করেছে, তাই ইভিএমের প্রতি আমার আস্থা নেই।

হিরো আলম আরও বলেন, প্রতিদ্বন্দ্বিতা বলতে কী, এমপি-মন্ত্রী খোঁজ নিয়ে দেখেন। কেউ ঢাকা শহরে ছিল না। গ্রাম থেকে এসে ঢাকা শহরে বাসা নিয়েছে। তারপর জনপ্রিয়তা অর্জন করে নিয়েছে। তো আমাকে, হিরো আলমকে তো সারাবিশ্ব চেনে। জনপ্রিয়তা এবং সেই ভালোবাসায় জনগণ আমাকে ভোট দেবে। এখানে ক্ষমতাশালী বা মার্কা কী, তা দেখে ভোট দেবে না। এখানে প্রার্থী দেখে ভোট দেবে। লুটপাট করবে না, জনগণের জন্য কাজ করবে এরকম একটা ছেলেকে নিয়ে আসবে। বেশি কিছু করতে পারবো না। কারণ সময় পাওয়া যাবে ছয় মাস। বস্তিবাসীর রাস্তাঘাট খুব খারাপ, এগুলো কাজ করতে হবে।

এর আগে, রিটার্নিং কর্মকর্তা হিরো আলমসহ আটজন প্রার্থীর প্রার্থীতা বাতিল করেছিল। তখন হিরো আলম বলেছিল, ইসিতে তিনি তার প্রার্থীতা ফিরে পাবে না ৯৯% নিশ্চিত। তবে নির্বাচন কমিশনের কাছে আপিল করে তার প্রার্থীতা ফিরে পেলে কমিশনের প্রতি আস্থার বিষয়ে অভিমত ব্যক্ত করেন হিরো।

গত ১৮ জুন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে হিরো আলমসহ আটজনের মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. মুনীর হোসাইন খান।


 
যাদের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছিল : জাকের পার্টির কাজী মো. রাশিদুল হাসান, জাতীয় পার্টির রওশন এরশাদপন্থী মো. মামুনূর রশিদ, মো. তারিকুল ইসলাম ভূঞাঁ ( স্বতন্ত্র), আবু আজম খান (স্বতন্ত্র), মুসাউর রহমান খান (স্বতন্ত্র), বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের (বিএনএফ) মো. মজিবুর রহমান ও শেখ আসাদুজ্জামান জালাল।

গত ১৫ মে চিত্রনায়ক আকবর হোসেন পাঠানের (ফারুক) মৃত্যু হলে আসনটি শূন্য হয়। সংসদের কোনো আসন শূন্য হলে নব্বই দিনের মধ্যে উপনির্বাচন করতে হয়। সে হিসেবে আসনটিতে ১২ আগস্টের মধ্যে উপনির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। 

এসআর/এনএফ