ছবি : সংগৃহীত

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নিচতলায় স্থাপিত ভারতীয় প্রতিষ্ঠান স্যান্ডরে ডায়ালাইসিস সেবা বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। বৃহস্পতিবার (২২ জুন) এ সেবা আপাতত বন্ধ রাখা হবে বলে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

এ বিষয়ে ডায়ালাইসিস সেন্টারের সামনে তারা একটি নোটিশ সাঁটিয়েছে। সেখানে তারা উল্লেখ করেন, ‘অত্যন্ত পরিতাপের সাথে জানানো যাচ্ছে যে আগামী বৃহস্পতিবার ২২ জুন থেকে স্যান্ডর ডায়ালাইসিস সার্ভিস সংক্রান্ত সকল কার্যক্রম স্থগিত থাকবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (অর্থ) কর্তৃক সার্ভিস পেমেন্ট পরিশোধে বারবার অনাকাঙ্ক্ষিত বিলম্ব ও অসহযোগিতার কারণে হঠাৎ করে এ চরম সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছি। তিনি এ ধরনের স্বাস্থ্য সেবা নিরবচ্ছিন্নভাবে চালাতে তিনি আন্তরিক নন।’

‘দীর্ঘদিন ধরে একই যুদ্ধ করে আমরা সম্পূর্ণভাবে ক্লান্ত, কেন হঠাৎ করে সেবা বন্ধ হলো। ডায়ালাইসিস এর মতো জরুরি সেবা বন্ধ করার কোন উদ্দেশ্যে আমাদের নেই কিন্তু এমন বিরূপ পরিস্থিতিতে সেবা চালু রাখা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। চলমান সমস্যার স্থায়ী সমাধান না হওয়া পর্যন্ত সকল রোগীদেরকে বিকল্প ব্যবস্থা রাখার জন্য বিনীতভাবে অনুরোধ করা হলো।’

চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান বলেন, স্যান্ডর কর্তৃপক্ষ হঠাৎ করে সেবা বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে। বিষয়টি মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে। আমি যতটুকু জেনেছি তারা আজকেও ১ কোটি ৬৩ লাখ টাকার বিল পাচ্ছে। আর বকেয়া থাকবে ১৯ কোটি টাকা। সেটিও ধাপে ধাপে পরিশোধ করা হবে। এ জন্য সেবা তো বন্ধ করতে পারে না। এটি এমন সেবা যা বন্ধ করলে জীবনহানির সম্ভাবনা রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, স্যান্ডর কর্তৃপক্ষ যে ভাষায় নোটিশ দিয়েছে, সেটিও আপত্তিজনক। তারা অধিদপ্তরের একজন সিনিয়র কর্মকর্তার নাম উল্লেখ করেছে। একই সঙ্গে তার মোবাইল নম্বর উল্লেখ করেছে।

বিষয়টি নিয়ে জানতে স্যান্ডর ডায়ালাইসিস সার্ভিসেস বাংলাদেশ প্রাইভেট লিমিটেডের সিনিয়র ম্যানেজার (ব্যবসা ও প্রশাসন) মোহাম্মদ মনজুর রহমানকে ফোন করা হয়। তবে তিনি রিসিভ না করে মিটিংয়ে আছেন জানিয়ে একটি খুদে বার্তা পাঠান।

এদিকে হঠাৎ করে এ সেবা বন্ধ ঘোষণায় বিপাকে পড়েছেন প্রতিষ্ঠান থেকে সেবা গ্রহণকারী রোগীরা। এর আগে চলতি বছরের শুরুতে ফি বাড়ানোর ঘোষণা নিয়ে চমেক হাসপাতালে ব্যাপক আন্দোলন হয়। আন্দোলনে পুলিশের সঙ্গে রোগীর স্বজনদের সংঘর্ষ হয়। এ নিয়ে মামলা এবং মোস্তাকিম নামে এক রোগীর ছেলে পাঁচলাইশ থানা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে কারাভোগ করেন। পরবর্তীতে সেই মোস্তাকিম জামিনে বের হয়ে তাকে পুলিশ হেফাজতে নির্যাতন করা হয়েছে অভিযোগ করে আদালতে পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজিম উদ্দিন ও এসআই আব্দুল আজিজের বিরুদ্ধে মামলা করেন। সেটি তদন্ত পরবর্তীতে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয়।

জানা গেছে, পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) প্রকল্পের আওতায় ২০১৫ সালে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান স্যান্ডর ম্যাডিকেইডস প্রাইভেট লিমিটেড স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের টেন্ডারে অংশ নেয়। এতে সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে প্রতিষ্ঠানটি ১০ বছরের জন্য কাজ পায়। এরপর বাংলাদেশের জয়েন্ট স্টকে স্যান্ডর ডায়ালাইসিস সার্ভিসেস বাংলাদেশ প্রাইভেট লিমিটেড নামে প্রতিষ্ঠানটি নিবন্ধিত হয়। এই কোম্পানি ২০১৬ সালের অক্টোবরে জাতীয় কিডনি রোগ ও ইউরোলজি ইনস্টিটিউটে ডায়ালাইসিসের কার্যক্রম শুরু করে। এরপর ২০১৭ সালের ৪ মার্চ চমেক হাসপাতালে কার্যক্রম শুরু করে। হাসপাতালের নিচ তলার একটি অংশে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছিলেন তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম উদ্দিন।

চুক্তির শর্তানুযায়ী দুই হাসপাতালের কর্তৃপক্ষের নির্দেশে স্যান্ডর কিডনি রোগীদের এক বছরে মোট ১৯ হাজার ৫০০ সেশন ভর্তুকি মূল্যে ডায়ালাইসিস করাবে। এর মধ্যে জাতীয় কিডনি রোগ ও ইউরোলজি ইনস্টিটিউটে ১৩ হাজার এবং চমেক হাসপাতালে করা হবে সাড়ে ছয় হাজার। এর চেয়ে বেশি সেশন ভর্তুকি মূল্যে করালে বাকি টাকা মন্ত্রণালয় প্রদান করে থাকে।

এমআর/এসকেডি