কুকিচিনের নির্বিঘ্ন যাতায়াত বন্ধে নির্মাণ হবে পাঁচ বিওপি
বম, খুমি, খেয়াং, লুসাই, ম্রো ও পাংখুয়া জনগোষ্ঠীর অধিকার আদায়ের নামে দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে সশস্ত্র আন্দোলন করছে কুকিচিন ন্যাশনাল আর্মি (কেএনএফ)। কুকিচিনের কারণে চট্টগ্রাম পার্বত্য অঞ্চলের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে। বিশেষ করে বান্দরবানে দুর্গম পাহাড়ের সীমান্তের একটি বড় জায়গা জুড়ে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) নেই নজরদারি। নেই কোনো বর্ডার অবজারভেশন পোস্ট (বিওপি)। এজন্য সেসব এলাকা দিয়ে নির্বিঘ্নে যাতায়াত করতে পারে উগ্রবাদী সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সদস্যরা।
কেএনএফ অন্যত্র চলে যাওয়ার পর তারা যেন সীমান্ত এলাকা দিয়ে ফিরে না আসে এজন্য বিজিবির পাঁচটি বিওপি স্থাপন করা হবে বলে জানিয়েছেন বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল এ কে এম নাজমুল হাসান।
বিজ্ঞাপন
বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) বিকেলে বিজিবি সদরদপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
বিজিবি প্রধান বলেন, পাহাড় থেকে কেএনএফমুক্ত হওয়ার পরে ওই জায়গাগুলো কীভাবে রক্ষিত হবে তা অপারেশন পরিকল্পনা করেছি। পাশাপাশি যেসব এলাকা দুর্গম সেসব এলাকায় বিজিবির বর্ডার অবজারভেশন পোস্ট (বিওপি) ছিল না। চৈক্ষ্যং পাড়া থেকে দোপানিছড়া পর্যন্ত বিজিবির ৫টি বিওপি করার পরিকল্পনা করেছি। ইতোমধ্যে চৈক্ষ্যং পাড়া কেএনএফমুক্ত করেছি আমরা। সেখানে আমাদের বিজিবি বর্তমানে অবস্থান করছে। পরবর্তী সময়ে অরক্ষিত যে জায়গাগুলো আছে সেগুলো যেন যথাযথভাবে সুরক্ষা করা সম্ভব হয়।
দেশের সীমান্ত এলাকা দিয়ে কোনো কুকি-চিন প্রবেশ কিংবা বাইরে যেতে না পারে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে বলেও দাবি করেন তিনি।
কেএনএফ প্রধান নাথান বমকে ভারত থেকে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, এটি সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে আলোচনার বিষয়। নাথান বমের হস্তান্তরের বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি বিএসএফের সঙ্গে।
কেএনএফ যে অস্ত্র ব্যবহার করছে তা ভারত কিংবা মিয়ানমার থেকে আসছে। অস্ত্র না প্রবেশের বিষয়ে জানতে চাইলে বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, আমাদের যে তথ্যগুলো ছিল সেগুলো আমরা বিএসএফকে জানিয়েছি। বিএসএফও যেন তাদের সীমানা সিল করে সে বিষয়েও তাদের বলা হয়েছে এবং বিএসএফ আশ্বস্ত করেছে।
মেজর জেনারেল এ কে এম নাজমুল হাসান আরও বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তিরক্ষায় দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে বিজিবি। কেএনএফের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর সঙ্গে যৌথভাবে অপারেশন করছি। ইতোমধ্যে কেএনএফের একটি ক্যাম্প দখল করেছে বিজিবি। সেই ক্যাম্প থেকে বেশকিছু আগ্নেয়াস্ত্র, কেএনএফের ইউনিফর্ম ও ওয়াকিটকি উদ্ধার করা হয়েছে।
এখানে উল্লেখ্য যে, পাহাড়ের নতুন সশস্ত্র সংগঠন ২০২২ সালের মে-জুন থেকে ভারত ও মিয়ানমার সীমান্ত সংলগ্ন রাঙামাটির বিলাইছড়ি উপজেলার বড়থলি ইউনিয়ন, বান্দরবানের রোয়াংছড়ি, রুমা ও থানচি উপজেলার দুর্গম এলাকার পাহাড়ে তাদের সশস্ত্র তৎপরতা শুরু করে। ইতোমধ্যে পাহাড়ের অন্য দুটি সশস্ত্র দলের সঙ্গেও কেএনএফের একাধিক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। কেএনএফের সশস্ত্র তৎপরতার কারণে রুমা, রোয়াংছড়ি ও থানচি উপজেলায় পর্যটক ভ্রমণে সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকায় থমকে গেছে বান্দরবানের পর্যটন শিল্প। শতাধিক হোটেল-মোটেল রিসোর্টের হাজারো শ্রমিক কর্মহীন অবস্থায় আছে। কুকিচিনের তৎপরতা বন্ধে অভিযান পরিচালনা করতে গিয়ে মারা গেছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কয়েকজন সদস্য।
জেইউ/এসএম