বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচন যেন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়, তা নিশ্চিত করতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছে চিঠি লিখেছেন ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ছয় সদস্য। নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন আয়োজনের জন্য ইইউয়ের ভূমিকাও প্রত্যাশা করা হয় চিঠিতে।   

সোমবার (১২ জুন) ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভাইস প্রেসিডেন্ট জোসেপ বোরেলের কাছে লেখা চিঠির বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছে ঢাকা পোস্ট। চিঠিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে ইইউ পার্লামেন্ট সদস্য ইভান স্টেফানেক চিঠির বিষয়টি ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছেন। 

দুই পৃষ্ঠার চিঠিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন সম্পর্কে আমাদের উদ্বেগ প্রকাশ করতে চাই এবং বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন পুনরুদ্ধারের আহ্বান জানাই। আমরা বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের ওপর গুরুত্ব দিতে চাই, যা চলতি বছরের শেষ নাগাদ অথবা আগামী বছরের শুরুতে অনুষ্ঠিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। 

আরও পড়ুন : বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের বিষয়ে যাচাই-বাছাই বাড়ানোর আহ্বান

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য কোনো ব্যবস্থা নেই। এটি একটি সমস্যা। কারচুপি, কারসাজি এবং ভোটারদের অনুপস্থিতি দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।

চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, বিএনপিসহ প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো দশম জাতীয় নির্বাচন বর্জন করার কারণে সেটি অংশগ্রহণমূলক ছিল না। পরবর্তী তথা ১১তম জাতীয় নির্বাচন মধ্য রাতের নির্বাচন হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে, যা আগের রাতে সমাপ্ত হয়েছিল। তারই ফলস্বরূপ নির্বাচিত সরকার বাংলাদেশের জনগণের কাছ থেকে সামান্য ম্যান্ডেট পায়নি এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অনুমোদন পেতে ব্যর্থ হয়েছে।

জোসেপ বোরেলকে উদ্দেশ করে বলা হয়েছে, আমরা আপনাকে বাংলাদেশে একটি নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ সাধারণ নির্বাচন নিশ্চিত করার আহ্বান জানাচ্ছি। এছাড়া মানবাধিকার লঙ্ঘনের অবসান, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং চলমান সংকটের টেকসই ও গণতান্ত্রিক সমাধান খুঁজে বের করতে বিএনপিসহ অন্যান্য প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। 

আরও পড়ুন : ‘ছয় কংগ্রেসম্যানের চিঠি’র সত্যতা নেই, তবু যাচাই করছে মন্ত্রণালয়

চিঠিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তথা বর্তমান সরকার ২০০৯ সাল থেকে ক্ষমতায়। এতে করে নাগরিকদের জন্য গণতান্ত্রিক অবস্থান সংকুচিত হয়েছে। ক্ষমতা সুসংহত করার জন্য বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে বিচারবহির্ভূত হত্যা, অপহরণ, নির্যাতন ও মিথ্যা মামলার আশ্রয় নিচ্ছে সরকার।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিষয়ে চিঠিতে বলা হয়, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশে সংবাদপত্রের স্বাধীনতাসহ মত প্রকাশের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন হয়েছে। বিশেষ করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রণয়নের পর থেকে।

র‌্যাবের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ করে চিঠিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে র‌্যাব দ্বারা হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। 

আরও পড়ুন : ‘ভিসা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষণা তাদের নিজস্ব ব্যাপার’

চিঠির শেষাংশে বলা হয়েছে, আমরা বিশ্বাস করি যে ইইউয়ের বাংলাদেশের জনগণের পাশে দাঁড়ানোর কারণ রয়েছে। কেননা, বাণিজ্য ও উন্নয়ন সহযোগিতায় আমাদের দীর্ঘ সময়ের অংশীদারিত্ব রয়েছে।

সুতরাং, ইইউকে শুধুমাত্র বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মানবাধিকার এজেন্ডা নিয়ে সংলাপে থাকাই নয়, বাস্তব ফলাফলও আনতে হবে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়ী এবং জড়িতদের ইইউ অঞ্চলে প্রবেশের নিষেধাজ্ঞার মতো সম্ভাব্য ব্যবস্থা বা জিএসপি প্লাস প্রণোদনার শর্তগুলো নিয়মিত স্মরণ করিয়ে দিতে হবে।  

চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন- ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্য ইভান স্টেফানেক, মাইকেলা সোজড্রোভা, আন্দ্রে কোভাতচেভ, কারেন মেলচিওর, জাভিয়ের এনএআরটি এবং হেইডি হাউটালা।

এনআই/এনএফ