পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী
এটি ট্রায়াল প্রত্যাবাসন, বিরোধিতার সুযোগ নেই
পাইলট প্রকল্পের অধীনে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনকে ট্রায়াল উল্লেখ করে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেছেন, এটা নিয়ে কারও বিরোধিতা করার কোনো কারণ দেখছি না। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রোহিঙ্গাদের রাখাইনে পাঠানো হবে। তারা যদি সেখানে অস্বস্তিবোধ করে আবার ফিরিয়ে আনার সুযোগ রয়েছে।
রোববার (১১ জুন) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রত্যাবাসনের পাইলট প্রকল্প নিয়ে জাতিসংঘের বিরোধিতা নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন প্রতিমন্ত্রী।
বিজ্ঞাপন
শাহরিয়ার আলম বলেন, এটি একটি ট্রায়াল প্রক্রিয়া। বড় ধরনের কোনও প্রত্যাবাসন নয়। এটি যদি সফল না হয়, তাহলে আমরা তাদের ফেরত নিয়ে আসতে পারব। সেক্ষেত্রে এটির বিরুদ্ধে যাওয়ার আমরা কোনো যুক্তি দেখি না।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গারা স্বেচ্ছায় যাচ্ছেন। এটি দেখার জন্য জাতিসংঘের সঙ্গে যে প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে, সেটি বলবত আছে। তবে জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার সার্টিফিকেট নিয়ে রোহিঙ্গাদের যেতে হবে এ ধরনের কোনো চুক্তি করা হয়নি। কিন্তু আমাদের প্রচেষ্টা সম্পর্কে তাদের জানানো হয়েছে।
জাতিসংঘের মিয়ানমারের পরিস্থিতি বিষয়ক বিশেষ র্যাপোর্টিয়ের টম অ্যান্ড্রুস বিবৃতি প্রসঙ্গে শাহরিয়ার আলম বলেন, তিনি মিয়ানমার-বিষয়ক র্যাপোর্টিয়ার। তার কার্যক্রম মিয়ানমারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকা উচিত। তিনি কক্সবাজার ঘুরে গেছেন। কিন্তু যে বিষয়গুলো তিনি বলেছেন এবং যে ভাষায় বলেছেন, এটি আমাদের প্রচেষ্টাকে খাটো করে এবং অসম্মান প্রকাশ করে। আমরা বিষয়টি জাতিসংঘকে জানাব।
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা-ইউএনএইচসিআরের চার রোহিঙ্গা পরিবারের খাবার সরবরাহ বন্ধ করার বিষয়ে দুঃখজনক হিসেবে আখ্যা দেন প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, ট্রানজিট ক্যাম্পে রাখা রোহিঙ্গারা জাতিসংঘ থেকে খাবার পায়নি। জাতিসংঘের সদর দপ্তর এটি নজরে নেবে। পরবর্তীতে এ ধরনের দুঃখজনক ঘটনা যেন না ঘটে।
গত বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের বিশেষ র্যাপোর্টিয়ের এক বিবৃতিতে রোহিঙ্গাদের পাইলট প্রকল্পের বিরোধিতা করে এক বিবৃতি দেন।
বিশেষ র্যাপোর্টিয়ের বলেন, মিয়ানমারের রাখাইনে এখনও রোহিঙ্গাদের জীবন ও চলাচলের স্বাধীনতা ঝুঁকিতে রয়েছে। মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ফেরত যাওয়ার মতো পরিবেশ বিরাজ করছে না। এমন পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গারা ফিরে গেলে আন্তর্জাতিক আইনে বাংলাদেশের বাধ্যবাধকতার লঙ্ঘন হবে। কারণ রাখাইনে ফিরে গেলে রোহিঙ্গারা মানবাধিকার লঙ্ঘনের পাশাপাশি ভবিষ্যতে আবারও নৃশংসতার শিকারে পরিণত হতে পারে।
তিনি বলেন, তাই বাংলাদেশকে আমি শিগগিরই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের পাইলট প্রকল্প স্থগিত করার অনুরোধ করছি। পাশাপাশি আমি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে কথায় ও কাজে রোহিঙ্গাদের পাশে থাকার অনুরোধ জানাচ্ছি।
টম অ্যান্ড্রুস অভিযোগ করেন যে, শরণার্থীদের মিয়ানমারে ফিরে যেতে বাধ্য করার জন্য বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ প্রতারণামূলক ও জবরদস্তিমূলক পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে আমাদের কাছে খবর রয়েছে। বাংলাদেশের কর্মকর্তারা সুনির্দিষ্টভাবে কোনো তারিখ উল্লেখ না করলেও প্রাথমিকভাবে ১ হাজার ১৪০ জন রোহিঙ্গা শরণার্থীকে পাঠানোর কথা উল্লেখ করেছেন। চলতি বছরের শেষ নাগাদ আরও ছয় হাজার রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠানোর কথা। বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপ থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যায়, প্রথম দফায় লোকজনকে পাঠানোর বিষয়টি শিগগির ঘটতে পারে।
বিশেষ র্যাপোর্টিয়ের বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীরা ফিরে যেতে রাজি হলে তাদের বিপুল অর্থ দেওয়ার প্রতিশ্রুতির খবর প্রকাশ পেয়েছে। এমনও অভিযোগ এসেছে যে, প্রতিদিন প্রত্যেক রোহিঙ্গার খাবারের বরাদ্দ যখন কমছে, তখন অর্থ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হচ্ছে।
এনআই/এসকেডি