সুবর্ণজয়ন্তীতে উন্নয়ন যাত্রায় ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন
লাল সবুজের পতাকা উড়িয়ে পূর্ণ হলো স্বাধীনতা ঘোষণার অর্ধশত বছর। স্বাধীনতাকালে ঢাকা ছিল পৌরসভা, পরবর্তীতে ১৯৭৮ সালে সিটি করপোরেশনে উন্নীত এবং সর্বশেষ ২০১১ সালে দুই সিটিতে বিভক্ত হয় শহরটি। ৫০ বছরে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার জনসংখ্যা বেড়েছে, উন্নয়ন আর রূপে বদলে গেছে অবকাঠামো, সব মিলিয়ে নানা পরিবর্তন ঘটেছে এই শহরের।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে এসে নগরবাসীকে সর্বোচ্চ নাগরিক সেবা দিতে কাজ করে যাচ্ছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। নানা অভিযোগ, অব্যবস্থাপনা, প্রত্যাশিত সেবা না পাওয়ার মতো অভিযোগ থাকার পরও নানান পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে সংস্থা দুইটি।
বিজ্ঞাপন
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)
নাগরিক সেবা দিতে নানা প্রকল্প হাতে নিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। কিছু প্রকল্প সুবর্ণজয়ন্তীতেই বাস্তবায়ন হবে। এছাড়া অন্যগুলোর কাজও চলমান। চলমান প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে ৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়ন, ১৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নবসংযুক্ত শ্যামপুর, দনিয়া, মাতুয়াইল ও সারুলিয়া এলাকায় সড়ক অবকাঠামো ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন, ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে মাতুয়াইল সেনেটারি ল্যান্ডফিল সম্প্রসারণসহ ভূমি উন্নয়ন।
১৯০ কোটি ব্যয়ে নবসংযুক্ত নাসিরাবাদ, দক্ষিণগাঁও, ডেমরা ও মান্ডা এলাকার সড়ক অবকাঠামো ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন। ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ, ৩৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে ডিএসসিসি এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক পুনর্বাসনসহ নর্দমা ও ফুটপাত উন্নয়ন প্রকল্প, ১৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে ঢাকা সিটি নেইবারহুড আপগ্রেডিং প্রজেক্ট, ২৬.৫৯ কেটি টাকা ব্যয়ে মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়ন করা।
এছাড়া রয়েছে ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে সমন্বিত মশক নিয়ন্ত্রণ প্রকল্প। ২৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন অন্তর্ভুক্ত ১৮টি ওয়ার্ডে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য যান-যন্ত্রপাতি সংগ্রহ ও অবকাঠামো উন্নয়ন। ৩১.৪৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন ১৮টি ওয়ার্ডে আউটসোসিংয়ের মাধ্যমে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজ। ২৯০ কোটি টাকা ব্যয়ে ডিএসসিসির বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য যানবাহন ও যন্ত্রপাতি সংগ্রহ প্রকল্প। ৪৪.৯২ কোটি টাকা ব্যয়ে আধুনিক পদ্ধতিতে বিভিন্ন সড়কের মেরামত ও ট্রাফিং ব্যবস্থাপনা উন্নয়নের লক্ষ্যে যান-যন্ত্রপাতি সংগ্রহ।
২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ভূ-গর্ভস্থ বর্জ্য অপসারণ ব্যবস্থা, ম্যাকানাইজড পার্কিং স্থাপন ও সড়ক মেরামতে আধুনিক যান-যন্ত্রপাতি সংগ্রহের মাধ্যমে যানজট নিরসন। ৩০০ কোটি ব্যয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শাহবাগ কেন্দ্রীয় শিশুপার্ক আধুনিকায়ন, ১৮৩.৫৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ওয়ার্ড ভিত্তিক সামাজিক অনুষ্ঠান কেন্দ্র নির্মাণ।
পাশাপাশি ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে কামরাঙ্গীচর নতুন শহর আধুনিকায়ন প্রকল্প। ২৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে বুড়িগঙ্গার জমি অবমুক্ত, রাস্তা ও নান্দনিক পার্ক নির্মাণ। ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে খাল, জলাশয়, পার্ক ও উদ্যান সৌন্দর্য বাড়ানোর মাধ্যমে সুন্দর ও নান্দনিক ঢাকা বিনির্মাণ। ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ডিএসসিসি আওতাধীন আঞ্চলিক অফিস নির্মাণ প্রকল্প, ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে দক্ষিণ সিটি এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প। ১৫০ কোটি ব্যয়ে ডিএসসিসি আওতাধীন আধুনিক গাড়ি পাকিং ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন প্রকল্প চলমান রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এগুলো বাস্তবায়ন হলে বদলে যাবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন এলাকা।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)
অন্যদিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনও উন্নয়নের নানান উদ্যোগ ও পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। কয়েকটি স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতেই বাস্তবায়ন হবে, বাকিগুলোর কাজও চলমান রয়েছে। উন্নয়ন প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে ডিএনসিসির আওতাধীন এলাকায় তিনটি পাইকারি কাঁচা বাজার নির্মাণ প্রকল্প। এছাড়া ১৩৯ কোটি টাকা ব্যয়ে আরবান রেজিলিয়েন্স প্রজেক্ট। ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ডিএনসিসির বিভিন্ন ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক অবকাঠামো উন্নয়ন নর্দমা ও ফুটপাত নির্মাণ। এছাড়া ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়কের কাজের জন্য অ্যাসফল্ট প্লান্টে যান-যন্ত্রপাতি ক্রয় করা হচ্ছে।
অন্যদিকে ২৫৮ কোটি টাকা ব্যয়ে এলইডি সড়কবাতি সরবরাহ ও স্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে। ১৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে গাবতলী সিটি পল্লীতে ডিএনসিসির পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের আবাসিক ভবন নির্মাণ। ১৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে উন্মুক্তস্থান আধুনিকায়ন, উন্নয়ন ও সবুজায়ন প্রকল্প। ১৭ কোটি ৪৫ টাকা ব্যয়ে তেজগাঁও সাতরাস্তা মোড় থেকে উত্তরা হাউজবিল্ডিং পর্যন্ত ১১টি ইউটার্ন নির্মাণ। ৩০ কোটি ৬৫ লাখ টাকা ব্যয়ে সমন্বিত ঢাকা শহর উন্নয়ন প্রকল্প। ৬৬৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা ব্যয়ে ইসিবি চত্বর হতে মিরপুর পর্যন্ত সড়ক প্রশস্তকরণ, উন্নয়ন ও কালশী মোড়ে ফ্লাইওভার নির্মাণের কাজ চলছে।
পাশাপাশি ৩৮৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন অঞ্চল সড়ক, নর্দমা, ফুটপাতসহ পরিবেশ উন্নয়ন ও সড়ক নিরাপত্তা প্রকল্প নিয়ে কাজ করছে ডিএনসিসি। ৪০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ডিএনসিসির নতুনভাবে অন্তর্ভুক্ত ১৮টি ওয়ার্ডের সড়ক অবকাঠামো ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা নির্মাণ ও উন্নয়ন প্রকল্পও যুক্ত হয়েছে।
এছাড়া আরও রয়েছে পাঁচ কোটি টাকা ব্যয়ে মিরপুর দারুসসালাম সড়ক থেকে কাকলী ও ভাষানটেক বাজার হয়ে মাটিকাটা পর্যন্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণ। এছাড়া বাড্ডা এলাকায় বহুতল সেবক নিবাস নির্মাণ প্রকল্প। ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে আমিনবাজার ল্যান্ডফিল সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়ন। ৪৭ কোটি টাকা ব্যয়ে আধুনিক যান-যন্ত্রপাতি সংগ্রহের মাধ্যমে সড়ক পরিষ্কার ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। ১৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে ডিএনসিসির সম্প্রসারিত এলাকার জন্য সমন্বিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আধুনিকায়ন ও উন্নয়ন। পাঁচ কোটি টাকা ব্যয়ে জলনিসর্গ-ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আওতায় দীগুনা মৌজাধীন জলাধার সংরক্ষণ জলজ ও স্থলজ জীব বৈচিত্র্য সমন্বিত উন্নয়ন।
পাশাপাশি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আওতায় ২৬ ও ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডে বহুতল আধুনিক কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এছাড়াও উত্তর সিটির করপোরেশন এলাকায় ট্রাফিক অবকাঠামো উন্নয়নসহ সড়ক নিরাপত্তা প্রকল্প। ২৪ কোটি ২৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ঢাকা নর্থ নেইবারহুড আপগ্রেডিং প্রজেক্ট।
ডিএনসিসি এলাকায় আন্ডারপাস নিমার্ণ ও পাবলিক টান্সপোর্ট উন্নয়ন প্রকল্প। ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে ডিএনসিসির অঞ্চল-২ ও অঞ্চল-৪ এর ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক অবকাঠামোসহ অঞ্চল-২ ও অঞ্চল-৫ এর সার্ভিস প্যাকেজ উন্নয়ন প্রকল্প। এছাড়া ৩৮ কোটি ৮৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ডিএনসিসিরি জন্য স্মার্ট সিটি পরিকল্পনার কাজ চলমান রয়েছে।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে এসে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের এসব উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পরিকল্পনা অনুযায়ী এসব উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকার চিত্রই পাল্টে যাবে।
এএসএস/ওএফ