রাজধানীর শান্তিনগর থেকে মালিবাগ মোড় হয়ে মগবাজার রেলগেট পর্যন্ত যাত্রী নিয়ে এসেছেন এরশাদ আলী নামে এক রিকশাচালক। যাত্রী নামিয়েই তিনি রিকশার সিটের কভার তুলে বের করলেন পানির বোতল। চোখে-মুখে পানি ছিটিয়ে ঢক ঢক করে লিটার খানেক পানি খেয়ে নিলেন। তার শার্টের বোতামগুলো খোলা, পুরো শার্টই ঘামে ভেজা। নিজে নিজেই অপন মনে বলে উঠলেন, ‘এই গরমে আর পারি না।’ 

শুধু এরশাদ আলীই নয়, এমন অসহ্য গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা খেটে খাওয়া সব মানুষের। কড়া রোদ আর অসহ্য গরমে ওষ্ঠাগত তাদের প্রাণ। গরম, অতিমাত্রার দাবদাহে জনজীবনে নাভিশ্বাস অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে গত কয়েকদিনে। বিশেষ করে অতিরিক্ত গরমে রাজধানীতে কাজে বের হওয়া কর্মজীবী মানুষ, খেটে খাওয়া মানুষরা সবচেয়ে বেশি কষ্টে আছেন, দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে তাদের জীবনযাত্রা।

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে দাবদাহের মধ্যেই জীবিকার তাগিদে কাজ করছেন নিম্ন অয়ের মানুষগুলো।  

রাজধানীর গুলশান সংলগ্ন লেকপাড় এলাকায় একটি নির্মাণাধীন ভবনে ইট ভাঙার কাজ করছিলেন ফরিদ আহমেদ নামে এক শ্রমিক। তিনি বলেন, এই গরমে এসব ইটের কাজ করা যে কতটা কষ্টের তা বলে বোঝানো যাবে না। গরমে এমনিতেই গা-হাত-পা সব জ্বলছে। মনে হয় সব বাদ দিয়ে গোসল করি, ফ্যানের নিচে গিয়ে শুয়ে থাকি। কিন্তু কিছু করার নেই, এসব সহ্য করেই কাজ করতে হচ্ছে। গরম হোক আর যাই হোক, দিনশেষে তো বাজার নিয়ে যেতে হবে ঘরে। পরিবার আছে, বাচ্চা আছে, তিন বেলা খেতে হবে।  

আরও পড়ুন : হঠাৎ যে কারণে ঢাকায় বেড়েছে ডায়রিয়া 

রামপুরা এলাকা থেকে রিকশায় যাত্রী নিয়ে শাহজাদপুর এসেছেন রিকশাচালক আব্দুল মালেক মিয়া। তিনি বলেন, ঘামে পুরো গোসল হয়ে গেছে। যাত্রী টানতে টানতে গাড়ি থামিয়ে বিশ্রাম নেওয়া লাগছে, পানি খাওয়া লাগছে। ঢাকা শহরে এত গরম কখনো দেখিনি। দম নিতে কষ্ট হচ্ছে। গরমে বেশি কষ্ট হচ্ছে এবার।  জীবিকার তাগিদে ঘামের শরীর নিয়েই রিকশা চালাচ্ছি, উপায় নেই। যেই মেসে থাকি সেখানেও কষ্ট। কারণ, কারেন্ট থাকে না, তিন দিন ধরে পানি নেই। যে কারণে রাতে ঘুমও হয় না। সব মিলিয়ে ক্লান্ত শরীরে গরমের যন্ত্রণা সহ্য করে রিকশা চালিয়ে যেতে হচ্ছে।

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ২১ নম্বর ওয়ার্ডে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় বর্জ্য অপসারণের কাজ করেন সাইদুল ইসলাম। তিনি বলেন, বাসা বাড়ির ময়লা টানা আমাদের কাজ। ভ্যান লোড করে ময়লা নিয়ে আমরা ফেলে আসি। কিন্তু গত দুই তিন ধরে এত গরম যে ঠিকমতো কাজ করতে পারছি না। ময়লার তীব্র গন্ধের সঙ্গে নিজের শরীর দিয়েও ঘাম ঝড়ে ভিজে যাচ্ছে, পিপাসা লাগছে, থামছি একটু। আবার কাজ করে যেতে হচ্ছে। গরমে এত কষ্ট আগে কখনও পাইনি। গায়ে জামা-কাপড় রাখা যাচ্ছে না। কিন্তু দিনের ময়লা দিনেই সরিয়ে ফেলা আমাদের কাজ। তাই বাধ্য হয়ে গরমের যন্ত্রণার মধ্যেই এসব কাজ করতে হচ্ছে। অভাব অনটনের সংসার না হলে এত গরমের মধ্যে এই কষ্টের কাজ করতাম না। 

আরও পড়ুন : তপ্ত রোদে ত্রাহি অবস্থা ট্রাফিক পুলিশের

গুলশান-বাড্ডা লিংক রোডের পাশে ভ্যানে সবজি বিক্রি করেন শফিকুল ইসলাম নামের একজন সবজি বিক্রেতা। তিনি বলেন, রাস্তায় আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছি না গরমে। সবজিগুলোও সব গরমে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এত গরম আগে কখনও দেখিনি। এর মধ্যেই রাস্তায় দাঁড়িয়ে আমাকে বিক্রি করতে হচ্ছে, এটাই আমার জীবিকা। সংসারে স্ত্রী, দুই সন্তান আছে। আমার রোজগারের ওপরেই সংসার চলে, তাই ঘেমে ভিজে রোদের মধ্যে ভ্যান নিয়ে ঘুরে সবজি বিক্রি করতে হচ্ছে। গরমে গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছে। তাই একটু পর পর পানি খাই কিন্তু পানিও গরম। বাসায় গিয়েও দেখছি পানি নেই লাইনে, তখন আর গোসল, বাথরুম কিছুই হয় না। সেই সঙ্গে একটু পর পর বিদ্যুৎও চলে যায়। সব মিলিয়ে কষ্টের শেষ নেই। 

এএসএস/এআর/এনএফ