ইউএনএইচসিআর বাংলাদেশ প্রধানকে তলব, প্রত্যাবাসনে প্রতিবন্ধকতা ‘নয়’
মিয়ানমারে স্বেচ্ছায় ফিরে যেতে রাজি হওয়ায় চার পরিবারের ২৪ রোহিঙ্গা সদস্যকে খাবার সরবরাহ বন্ধ করেছে জাতিসংঘ। তারই পরিপ্রেক্ষিতে জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআরের বাংলাদেশ প্রধান জোহানেস ভ্যান ডার ক্লকে তলব করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ঢাকার পক্ষ থেকে স্পষ্ট বার্তায় ইউএনএইচসিআরকে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন সংশ্লিষ্ট কর্মকাণ্ডে যেন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করা হয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং কূটনৈতিক সূত্রগুলো ঢাকা পোস্টকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।
বিজ্ঞাপন
কূটনৈতিক একটি সূত্র জানায়, প্রত্যাবাসনে রাজি হওয়ায় ২৪ রোহিঙ্গা শরণার্থীর খাবার সরবরাহ বন্ধ করেছে জাতিসংঘ। প্রত্যাবাসনে রাজি হওয়া রোহিঙ্গাদের খাবার বন্ধ করা প্রত্যাবাসনে বাধার অংশ বিবেচনায় ইউএনএইচসিআরের বাংলাদেশ প্রধানকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে হাজির হতে বলা হয়। বিকেলে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মো. খুরশেদ আলমের দপ্তরে আসেন ডার ক্লক। ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে প্রতিবন্ধকতা তৈরি না করার জন্য জাতিসংঘকে সতর্ক করেন। পাশাপাশি তিনি ইউএনএইচসিআরের ঢাকা প্রধানকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে সংস্থাটির সঙ্গে হওয়া চুক্তির কথা মনে করিয়ে দেয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা ইউএনএইচসিআরের বাংলাদেশ প্রধানকে আলোচনার সমন করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ইউএনএইচসিআরের বাংলাদেশ প্রধানকে আলোচনার জন্য আসতে বলা হয়েছে। তিনি এসেছেন। ইউএনএইচসিআরের সঙ্গে আমাদের যে চুক্তি হয়েছে, সেখানে রোহিঙ্গাদের যেন ভালো হয় সে সংক্রান্ত চুক্তির কথা বলা হয়েছে। তাদের বলা হয়েছে, রোহিঙ্গারা স্বেচ্ছায় মিয়ানমারে ফিরতে রাজি হলেই তাদের প্রত্যাবর্তন করা হবে। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে সবার সহযোগিতা দরকার। সেজন্য তাদের সহযোগিতা মনোভাব রাখার অনুরোধ করা হয়েছে।
চীনের ত্রিপক্ষীয় উদ্যোগে পাইলট প্রকল্পের আওতায় হাজার খানেকের বেশি রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন করতে চায় সরকার। সেই লক্ষ্যে চলতি বছরের এপ্রিলের মাঝামাঝিতে চীনের কুনমিংয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারকে নিয়ে বৈঠক করেছে চীন। ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় রোহিঙ্গাদের একটি দল নিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা রাখাইন সফর করবেন।
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, গত ৫ মে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি ও রোহিঙ্গা প্রতিনিধিরা রাখাইন ঘুরে আসে। ফিরতি সফরে রোহিঙ্গাদের মনোবল বৃদ্ধির জন্য এক সপ্তাহের মধ্যে মিয়ানমারের প্রতিনিধিদলের বাংলাদেশে আসার কথা ছিল। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় মোখার কারণে প্রতিনিধিদলটির সফর পিছিয়ে যায়। পরে গত ২৫ মে পাইলট প্রকল্পের আওতায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনার জন্য মিয়ানমারের একটি প্রতিনিধিদল কক্সবাজার ঘুরে গেছে।
এদিকে সরকারের উদ্যোগে মিয়ানমার যেতে রাজি হওয়ায় চার পরিবারের ২৪ রোহিঙ্গা সদস্যকে সোমবার থেকে খাবার দেওয়া বন্ধ রেখেছে ইউএনএইচসিআর। উপায় না পেয়ে এসব শরণার্থীদের আরআরআরসির অফিস থেকে খাবারের ব্যবস্থা করা হয়।
তবে চার রোহিঙ্গা পরিবারের খাবার বন্ধের বিষয়ে ইউএনএইচসিআর ভিন্ন কথা বলছে। সংস্থাটির ভাষ্য, রোহিঙ্গাদের খাবার সরবরাহ বন্ধ করা হয়নি। এ প্রসঙ্গে সংস্থাটির ঢাকা কার্যালয়ের তথ্য কর্মকর্তা মোস্তফা মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ইউএনএইচসিআর কুতুপালংয়ের সরকার পরিচালিত প্রত্যাবাসন সাইটে বর্তমানে অবস্থানরত চারটি রোহিঙ্গা শরণার্থী পরিবারকে খাদ্য, স্বাস্থ্যসেবা এবং প্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহ করা অব্যাহত রাখবে। কোনো শরণার্থীকে খাদ্য এবং মৌলিক সহায়তা থেকে বঞ্চিত করা হবে না।
জানা গেছে, প্রত্যাবাসনে রাজি হওয়া চার রোহিঙ্গা পরিবার ভাসানচরে অবস্থান করছিল। প্রত্যাবাসনে রাজি হওয়ায় তাদের কক্সবাজারে নিয়ে আসা হয়।
এনআই/জেডএস