দেশজুড়ে বইছে তাপপ্রবাহ। এর মধ্যে চলছে লোডশেডিং। তীব্র গরমে জনজীবনে যখন নাভিশ্বাস অবস্থা, সেই সময়ে পানির সরবরাহও নেই ঢাকার বিভিন্ন এলাকায়। ত্রিমুখী সমস্যায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন নগরবাসী।

লোডশেডিংয়ের কারণে পানি সরবরাহে ঘাটতি থাকায় গৃহস্থালি, গোসল বা বাথরুমে পানি ব্যবহার করতে পারছেন না অনেকে। এতে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে তাদের।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর বাড্ডা এলাকায় চার দিন ধরে পানি নেই। বনশ্রী, ডিআইটি প্রজেক্ট ছাড়াও রাজধানীর আদাবর, শেখেরটেক, মিরপুর, মগবাজার, রায়ের বাজার, মেহেদীবাগ, মোহাম্মাদিয়া হাউজিং, মান্ডা, কুসুমবাগ এলাকার কিছু অংশে পানির সংকট দেখা দিয়েছে। এছাড়া রাজধানীর মোহাম্মদপুর, ভাষানটেক, মাটিকাটা, উত্তরা, আফতাবনগর, ভাটারাসহ বেশ কিছু এলাকায় মাঝে মধ্যে পানির সংকট দেখা দিচ্ছে।

রাজধানীর বাড্ডার কুমিল্লা পাড়া এলাকার বাসিন্দা চাঁদ মিয়া বলেন, আজ প্রায় চার দিন ধরে পানি নেই। রাতে মাঝে মাঝে পানি আসে অল্প পরিমাণে, এতে চাহিদা পূরণ হয় না। সারা দিন ধরে পানির জন্য অপেক্ষা করতে হয়, ওয়াসার গাড়িতে ফোন দিলেও তারা ঠিকভাবে আসে না। একদিনে ৮/১০ বার করে লোডশেডিং হয়, গরমে খুব খারাপ অবস্থা। এর মধ্যে যদি পানি সরবরাহ না থাকে তাহলে এর চেয়ে বড় বিপদ আর হয় না।

একই এলাকার বাসিন্দা বেলাল হোসেন বলেন, আজ তিন দিন ধরে গোসল করতে পারি না। খাওয়ার পানি বাজার থেকে কিনে নিয়ে যেতে হচ্ছে। গরমে অসহ্য অবস্থা। এই সময় পানি না থাকলে জীবনযাপন প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ছে। এত অসহ্য গরম কখনো অনুভূত হয়নি, সেই সঙ্গে ঘণ্টার পর ঘণ্টা, বলতে গেলে সারা দিন ধরেই চলছে লোডশেডিং। এর চেয়েও বড় দুঃখ পানি নেই বাসায় বাসায়। পানি ছাড়া গোসল, বাথরুম, রান্না কিছুই করা যাচ্ছে না।

রাজধানীর বনশ্রীর একটি বাসার মালিক শাহীন আহমেদ বলেন, পানি না থাকায় অসহনীয় কষ্টের মধ্যে আছি আমরা। ভাড়াটিয়ারা বারবার পানির জন্য তাগিদ দিচ্ছে। আমিও টাকার বিনিময়ে পানি সরবরাহ করার জন্য ওয়াসার গাড়িকে ফোন করছি। কিন্তু সংকটের কারণে তারাও পানি দিতে পারছে না। ফোন করলে সিরিয়ালও দিতে পারছে না তারা।

সার্বিক বিষয়ে ঢাকা ওয়াসার উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম সহিদ উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঢাকায় পানির যে চাহিদা তার চেয়েও বেশি উৎপাদন সক্ষমতা আছে আমাদের। কিন্তু অতিরিক্ত গরমের কারণে পানির সংকট সৃষ্টি হয়েছে। কারণ লোডশেডিংয়ের কারণে আমাদের পাম্পগুলো কাজ করতে পারছে না। এখন গরম কমলে এই সংকট কিছুটা দূর হবে। আমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি যেন গরমটা কমে। সেইসঙ্গে বিদ্যুৎ থাকলে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। এখানে আমাদের কোনো দুর্বলতা বা সমস্যা নেই। অতিরিক্ত গরম আর পানির লেয়ারের কারণে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। আর একটু পর পর বিদ্যুৎ থাকছে না। এতে করে পাম্প চালানো যাচ্ছে না। এমন পরিস্থিতি ঠিক হলে পানি সরবরাহেও আর কোনো সমস্যা থাকবে না।

ঢাকা ওয়াসা সূত্রে জানা গেছে, শীতকালে রাজধানীতে দৈনিক পানির চাহিদা থাকে ২১০ কোটি লিটার, কখনো কখনো ২৩০/২৪০ কোটি লিটারের। কিন্তু গরমকাল এলে এটা বেড়ে ২৬০ কোটি লিটারে গিয়ে দাঁড়ায়। বর্তমানে ঢাকা ওয়াসার প্রতিদিন প্রায় ২৯০ কোটি লিটার পানির উৎপাদনের সক্ষমতা আছে। কিন্তু চাহিদা অনুযায়ী প্রতিদিন এখন গড়ে ২৬০ কোটি লিটার পানি উৎপাদন করছে ঢাকা ওয়াসা।

বর্তমানে ঢাকা ওয়াসার পানি শোধনাগার রয়েছে পাঁচটি। তবে সংস্থাটি পানি পাচ্ছে চারটি শোধনাগার থেকে। চলতি বছরে উপরিতলের পানির উৎপাদন ৭০ শতাংশে উন্নীত করার কথা থাকলেও সেই লক্ষ্য এখনো পূরণ করতে পারেনি ঢাকা ওয়াসা। বর্তমানে উপরিতলের পানি পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ৩৫ শতাংশ। আর বাকি ৬৫ শতাংশ সরবরাহ করার পানি তারা পাচ্ছে ভূগর্ভস্থ থেকে।

এএসএস/এসএসএইচ/