বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে বিদ্যুৎ বিভাগ
একদিকে চলছে জ্যৈষ্ঠের তাপপ্রবাহ, অন্যদিকে লাগামছাড়া লোডশেডিং। দুইয়ে মিলে বেহাল দশা মানুষের। এই অবস্থা থেকে সহসা মুক্তির আশাও দেখা যাচ্ছে না।
ঢাকায় এখন লোডশেডিং হচ্ছে গড়ে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা করে। কোথাও কোথাও ৮ ঘণ্টা লোডশেডিংও হচ্ছে। বর্তমানে দেশে বিদ্যুতের দৈনিক চাহিদা ১৬ হাজার মেগাওয়াটের বেশি। কিন্তু উৎপাদন হচ্ছে ১৩ হাজারের কাছাকাছি। ফলে ঘাটতি থাকছে তিন হাজার মেগাওয়াটের। মধ্যরাতে সাড়ে তিন হাজার থেকে চার হাজার মেগাওয়াট পর্যন্ত লোডশেডিং হচ্ছে। বিতরণ কোম্পানিগুলো বলছে, প্রচণ্ড গরমে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়লেও সেই তুলনায় উৎপাদন হচ্ছে না। ফলে বাধ্য হয়ে লোডশেডিং করতে হচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
বিতরণ কোম্পানি ডেসকোর রোববারের চাহিদা ছিল এক হাজার ৩৮৬ মেগাওয়াট, সরবরাহ করা হয়েছে এক হাজার ১৩৬ মেগাওয়াট, লোডশেডিং করা হয়েছে ২৫০ মেগাওয়াট।
অপরদিকে ডিপিডিসির বিতরণ অঞ্চলে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ২ হাজার মেগাওয়াট, সরবরাহ করা হয়েছে ১ হাজার ৬৭০ মেগাওয়াট, লোডশেডিং করা হয়েছে ৩৩০ মেগাওয়াট।
রাষ্ট্রীয় সংস্থা পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) সূত্রে জানা যায়, রোববার বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১৪ হাজার ৩০০ মেগাওয়াট। চাহিদার বিপরীতে উৎপাদন হয়েছে ১১ হাজার ৯০৫ মেগাওয়াট। মোট লোডশেডিং করা হয়েছে ২ হাজার ৩৯৫ মেগাওয়াট। যদিও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, লোডশেডিংয়ের পরিমাণ এর চেয়ে অনেক বেশি।
এদিকে কয়লা সংকটের কারণে পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিটের উৎপাদনও বন্ধ হয়েছে আজ। এর ফলে লোডশেডিং আরও কয়েকগুণ বেড়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সদস্য (উৎপাদন) এস এম ওয়াজেদ আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা সার্বিকভাবে চেষ্টা করছি লোডশেডিং কমিয়ে আনার। বেশ কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন বাড়িয়েছি, যাতে ঘাটতি কমিয়ে আনা যায়।
এদিকে বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিষ্টরা এখন নির্ভর করছেন বৃষ্টির ওপর। বৃষ্টি হলে তাপমাত্রা কমবে, এতে চাহিদার পরিমাণ কমে যাবে। একইসাথে কমবে লোডশেডিংয়ের পরিমাণও।
যদিও এখনো কোনো সুখবর দিচ্ছে না আবহাওয়া অধিদপ্তর। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য মতে, সহসা তাপপ্রবাহ কমার কোনো সম্ভাবনা নেই। আবহাওয়া অধিদপ্তর সোমবার জানিয়েছে, অস্বস্তিকর এই গরম আরও পাঁচ-ছয়দিন থাকবে।
এদিকে লোডশেডিংয়ের এ পরিস্থিতিতে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। দিনের তুলনায় রাতে লোডশেডিং বেশি হওয়ায় নির্ঘুম রাত পার করছেন অনেকে। তীব্র গরমে অসুস্থও হয়ে পড়ছেন কেউ কেউ। বিশেষ করে শিশুরা বেশি অসুস্থ হচ্ছে।
মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা পারভেজ আহমেদ বলেন, এমনিতে তো গরম, তার ওপর লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণা। সারা রাত ঘুমাতে পারিনি। বাচ্চারাও ঘুমাতে পারেনি। একটু পরপর উঠে বাচ্চাদের বাতাস করেছি।
মোহাম্মদপুরের শিয়া মসজিদ এলাকায় বসবাস করেন আবদুল আজিজ। তিনি বলেন, সারাদিন কোনোভাবে পার হলেও রাতে কষ্টটা বেশি হচ্ছে। বিদ্যুৎ চলে গেলে বিছানায় আর শুয়ে থাকা যায় না, উঠে পড়তে হয়।
কল্যাণপুরের বাসিন্দা ব্যবসায়ী মো. শাহজাহান বলেন, রাতে তিন-চার ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না। গরমে সবচেয়ে বেশি কষ্ট পায় বৃদ্ধ বাবা-মা আর ছোট বাচ্চারা।
লোডশেডিংয়ের বিদ্যমান পরিস্থিতি আরও দু’সপ্তাহ থাকছে সে কথা জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদও। রোববার তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আরও দুই সপ্তাহ এ অবস্থা থাকতে পারে। আগামী দশ থেকে পনেরো দিনের মধ্যে সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
ওএফএ/এনএফ