মোদিবিরোধী আন্দোলন নিয়ন্ত্রণে পুলিশ

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর আয়োজনে যোগ দিতে শুক্রবার (২৬ মার্চ) ঢাকায় আসছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তার এই সফরের বিরোধিতা করে আন্দোলন, মিছিল-সমাবেশ করছে বেশ কয়েকটি সংগঠন। ঘটেছে সংঘর্ষের মতো ঘটনাও।

মোদিবিরোধী আন্দোলন না করার আহ্বান জানিয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) বলেছে, নরেন্দ্র মোদির আগমনের দিন রাজধানীতে মিছিল-সমাবেশসহ কোনো ধরনের অপচেষ্টা বরদাস্ত করা হবে না।

মোদির বাংলাদেশ সফর বিরোধিতা করে বৃহস্পতিবার (২৫ মার্চ) বিভিন্ন সময় মতিঝিল, শাহবাগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় সমাবেশ, বিক্ষোভ মিছিলের চেষ্টা করা হয়েছে। পুলিশি বাধা, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, সংঘর্ষ এবং আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলায় আহত হয়েছে পুলিশ, আন্দোলনকারী ও দায়িত্বে থাকা সাংবাদিকরাও।

মোদির সফরের বিরোধিতা করে আন্দোলন, মিছিল-সমাবেশ করছে বেশ কয়েকটি সংগঠন

বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের বিক্ষোভ মিছিল থেকে সৃষ্ট ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় সাত পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে ৪ জনকে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সংঘর্ষে ১০-১৫ জন আন্দোলনকারীও আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ।

এ বিষয়ে ডিএমপির মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) সৈয়দ নুরুল ইসলাম বলেন, সংঘর্ষের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৩৪ জনকে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ বাদী হয়ে মামলাটি করেছে।

শুক্রবার রাজধানীতে মোদিবিরোধী আন্দোলনের নামে কোনো অপতৎপরতার আশঙ্কা আছে কি-না জানতে চাইলে ঢাকা পোস্টকে ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেন, আগামীকাল নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিতে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। আন্দোলনের নামে কেউ কোনো অপচেষ্টা করলে, আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) সাজ্জাদুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা অনুরোধ করেছি, বাইরে কোনো ধরনের সভা-সমাবেশ বিক্ষোভ মিটিং না করার জন্য। নির্দেশনাও দিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার। কোনো অনুষ্ঠানের প্রয়োজনীয়তা থাকলে তা ঘরের ভেতর করতে অনুরোধ করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, নির্দেশনা না মানলে আমরা ব্যবস্থা নেবো। এক্ষেত্রে কঠোর আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন সরদার বলেন, বাংলাদেশ সফরের অংশ হিসেবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাতে আসবেন। এ লক্ষ্যে সার্বিক নিরাপত্তার প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।

অন্যদিকে একইভাবে মোদিবিরোধী সভা-সমাবেশ না করার অনুরোধ জানিয়েছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। এ বিষয়ে র‌্যাব লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, মুজিববর্ষ ও সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে বিভিন্ন দেশের কর্ণধার ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা বাংলাদেশ পরিদর্শন করছেন। অতিথিদের আগমনের যে সূচি রয়েছে, সে অনুযায়ী র‌্যাব অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছে।

নিরাপত্তা নিশ্চিতে তৎপর র‍্যাব

তিনি বলেন, র‌্যাব তিন ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। অতিথিদের পরিদর্শনের এলাকাগুলোতে দৃশ্যমান উপস্থিতি, গোয়েন্দা নজরদারি এবং সাইবার মনিটরিং করা হচ্ছে। বিগত দিনগুলোর মতই আগামীতেও র‌্যাব যেভাবে পেশাদারিত্ব ও দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের স্বাক্ষর রেখে যাবে।

অতিথিদের আগমন উপলক্ষে কোনো ধরনের নাশকতা বা বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা রয়েছে কি-না জানতে চাইলে র‌্যাবের গণমাধ্যম শাখার প্রধান বলেন, কোনো ধরনের আশঙ্কা নেই। র‌্যাবসহ সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এসব মনিটরিং করছে। আমাদের সাইবার শাখা সক্রিয় রয়েছে।

অন্যদিকে আগামী ২৬ ও ২৭ মার্চ রাজধানীতে যানচলাচল নিয়ন্ত্রিত থাকবে বলে জানিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ।

বৃহস্পতিবার (২৫ মার্চ) ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগ থেকে জানানো হয়, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে আগত বিদেশি ভিভিআইপিদের গমনাগমনের জন্য আগামী ২৬ ও ২৭ মার্চ (শুক্র ও শনিবার) ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ও প্রধান সড়কগুলোতে যানচলাচল নিয়ন্ত্রিত এবং কিছু কিছু সময়ের জন্য বন্ধ থাকবে। এ সাময়িক অসুবিধার জন্য ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ১০ দিনব্যাপী কর্মসূচি হাতে নিয়েছে সরকার। জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে ১৭ মার্চ থেকে শুরু হয় এ অনুষ্ঠানমালা; চলবে ২৬ মার্চ পর্যন্ত। এই আয়োজনের মূল থিম ‘মুজিব চিরন্তন’।

এরই ধারাবাহিকতায় ২৬ মার্চের আয়োজন হলো- ‘স্বাধীনতার ৫০ বছর ও অগ্রগতির সুবর্ণরেখা’। এদিনের আয়োজনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি উপস্থিত থাকবেন। পাশাপাশি রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত থাকবেন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, আজ সকাল ১১টায় ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবেন নরেন্দ্র মোদি। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর ছাড়াও বিভিন্ন দফতরের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা তার সফরসঙ্গী হিসেবে ঢাকায় আসবেন।

জেইউ/এমএইচএস