নিজের সার্টিফিকেটে আগুন দিচ্ছেন মুক্তা সুলতানা (বাঁয়ে), প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের কাছ থেকে চাকরির নিয়োগপত্র নিচ্ছেন ওই তরুণী (ডানে) /ছবি- সংগৃহীত)

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে লাইভে এসে নিজের সব শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ পুড়িয়েছিলেন মুক্তা সুলতানা নামে এক তরুণী। এরপরই তাকে ৩৫ হাজার টাকা বেতনের চাকরি দেওয়া হয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের একটি প্রকল্পের ‘কন্টেন্ট ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল কমিউনিকেশন অফিসার’ পদে।

চাকরি দেওয়ার পর থেকেই ফেসবুকে প্রতিবাদের ঝড় উঠে। অনেকেই এই সিদ্ধান্তকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য ‘নেতিবাচক বার্তা’ বলে উল্লেখ করেন। ঘটনা উত্তাল ভার্চুয়াল জগত। এ ঘটনার প্রতিবাদে একদল তরুণ ফেসবুকে ইভেন্ট তৈরি করেছেন। যার নাম দেওয়া হয়েছে, ‘আমরাও সার্টিফিকেট পুড়িয়ে সরকারি চাকরি পেতে চাই’। 

এটি একটি প্রতীকী ও ব্যঙ্গাত্মক ইভেন্ট। বুধবার বিকেল ৩টার দিকে ইভেন্টটির বিষয়বস্তুর সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন ১৮ হাজারের বেশি মানুষ। আইসিটি বিভাগের এমন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতীকী ক্ষোভ। বৃহস্পতিবার (১ জুন) বিকেল ৫টায় সবাই একযোগে ইভেন্টের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানাবেন।

ইভেন্টটির মূল আয়োজক ইয়াসিন হোসেন রাকিব নামের একজন ব্লগার। তিনি বলেন, ‘এটি একটি ব্যঙ্গাত্মক ইভেন্ট। আমরাও সার্টিফিকেট পুড়িয়ে সরকারি চাকরি পেতে চাই।’

এদিকে সোমবার মুক্তা সুলতানাকে নিয়োগপত্র দেওয়ার পর থেকেই সমালোচনা করেছেন অনেকেই। প্রতিবাদ করেছেন চাকরিদাতা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের স্ত্রী আরিফা জেসমিন কণিকা। 

তিনি লিখেছেন, ‘এক শ্রেণির মানুষ নিজের যোগ্যতায় সফল না হয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে ব্যবহার করে ভাইরাল হওয়ার পথ বেছে নিয়েছে। নিজের বিবেক, বুদ্ধি, মানবিকতা, বিসর্জন দিয়ে পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রের সম্মান সবকিছুকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ভাইরাল হওয়ার অসুস্থ প্রতিযোগিতায় নেমেছে। আমাদের দেশের কিছু মানুষ আবার তাদের এই অসুস্থ প্রতিযোগিতায় তাদের পাশে দাঁড়াচ্ছে এবং তাদের সাপোর্ট দিয়ে অসুস্থ প্রতিযোগিতাকে উৎসাহিত করছে। সুস্থ, স্বাভাবিক মানুষদের জন্য নিজ যোগ্যতায় সফল হওয়া দিন দিন কঠিন হয়ে যাচ্ছে। পরোক্ষভাবে আমরা বিবেক, বুদ্ধি বিবর্জিত একটা অসুস্থ এবং মানসিক বিকারগ্রস্ত জাতি গঠনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। যা খুবই দুঃখজনক!’ 

সম্প্রতি ফেসবুক লাইভে এসে ২৭ বছরের অর্জিত সব একাডেমিক সার্টিফিকেট পুড়িয়ে ফেলা মুক্তাকে নিজের দপ্তরে ডেকে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে মুক্তাকে চাকরি নিয়োগপত্র তুলে দেন পলক।

তাকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের অধীন ‘এস্টাবলিশমেন্ট অব সিকিউরড ইমেইল ফর গভর্নমেন্ট অ্যান্ড ডিজিটাল লিটারেসি সেন্টার’ প্রজেক্টে ‘কন্টেন্ট ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল কমিউনিকেশন অফিসার’ পদে চাকরির দেওয়া হয়। বেতন ৩৫ হাজার টাকা। 

চাকরি দেওয়ার বিষয়ে সেদিন প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ‘দেশের মেধাবী তরুণ-তরুণীরা যেন হতাশাগ্রস্ত না হয় এবং আত্মবিশ্বাসের সাথে এগিয়ে যেতে পারে, সেজন্য আইসিটি বিভাগ থেকে প্রশিক্ষণসহ বিভিন্নভাবে সহায়তা দিচ্ছে। যথাযথ শিক্ষা গ্রহণ করলে দেশে কোনো শিক্ষিত তরুণ-তরুণী বেকার থাকবে না। তারুণ্যের মেধা ও প্রযুক্তির শক্তিকে কাজে লাগিয়ে দিয়ে নিজেকে তৈরি করতে পারলে চাকরির পেছনে ঘুরতে হবে না। বরং কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র সৃষ্টি করবে’।

এআর/ওএফ