সজিব কবিরাজ অষ্টম শ্রেণি পাস। জীবনের শুরুতে কবিরাজি পেশায় ছিলেন তিনি। রাজধানীর পীরেরবাগ এলাকায় কবিরাজ বলেই পরিচিতি তার। তবে কবিরাজি ছেড়ে এক সময় তিনি মাদক ও অস্ত্র ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। সরাসরি কক্সবাজার থেকে ইয়াবা এবং যশোর থেকে অস্ত্র সংগ্রহ করে ঢাকার মিরপুর ও হেমায়েতপুর এলাকায় ব্যবসা করতেন। 

কারওয়ান বাজার র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন

শুধু তাই নয়, শীর্ষ মাদক ও অস্ত্র ব্যবসায়ী হিসেবে কুখ্যাতি লাভ করা সজিবের বিরুদ্ধে সাধারণ জনগণ কথা বলতে সাহস করত না। খুচরা বিক্রেতারা মাদক বাহক হতে না চাইলে টর্চার সেলে নিয়ে নির্যাতন করতেন সজিব।

শ্যামলীর একটি বাসা থেকে সজিবকে গ্রেফতারের পর মিরপুরের পীরেরবাগ ও সাভারের হেমায়েতপুর থেকে আরও চার অস্ত্রধারী মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর এসব তথ্য জানিয়েছে পুলিশের এলিট ফোর্স র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)।

বৃহস্পতিবার (২৫ মার্চ) গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত অভিযান পরিচালনা করে র‍্যাব-৪ এর একটি আভিযানিক দল। মিরপুর থানাধীন পীরেরবাগ ও সাভার থানাধীন হেমায়েতপুর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে সজিব ও চার মাদক ব্যাবসায়ীকে গ্রেফতার করে র‍্যাব। এ সময় ৬টি বিদেশি পিস্তল, ১২টি ম্যাগাজিন, ৪৮ রাউন্ড গুলি, ৫ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়।

গ্রেফতাররা হলেন- নারায়ণগঞ্জের মো. সজিব কবিরাজ (৩১), ঢাকার কুমকুম আক্তার (২৫), বগুড়ার মো. আরব আলী ওরফে নয়ন (২৮), শরীয়তপুরের মো. শাহীন (২৭) ও চট্টগ্রামের মো. মনজুর আলম (৩৪)।

বৃহস্পতিবার রাতে কারওয়ান বাজার র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র‍্যাব-৪ এর অধিনায়ক (সিও) অতিরিক্ত ডিআইজি মো. মোজাম্মেল হক। তিনি বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযানের শুরুতে শ্যামলীর একটি বাসা থেকে সজিব কবিরাজকে গ্রেফতার করা হয়।

তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে, হেমায়েতপুরে তার নিজের তিনতলা সুরম্য বাড়িতে আলমারির বিশেষ চেম্বার হতে তিনটি অস্ত্র, ৬টি ম্যাগজিন, ২৪ রাউন্ড গুলি, এক হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। এছাড়া তার প্রাইভেটকার থেকে ৫০০ পিস ইয়াবাসহ ড্রাইভার আরব আলীকে গ্রেফতার করা হয়। তার ব্যক্তিগত মোটরসাইকালের সিটের নিচ থেকেও ৪৫০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। 

পরে সজিবের দেওয়া দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মিরপুরের পীরেরবাগে তার বাসার ২য় তলায় রাখা ট্রাভেল ব্যাগ থেকে ৩টি বিদেশি পিস্তল, ৬টি ম্যাগজিন, ২৪ রাউন্ড গুলি, এক হাজার পিস ইয়াবা এবং ২য় তলার টর্চারসেল থেকে ৭টি ব্যাটন (লাঠি) ৬টি হ্যামার উদ্ধার করা হয়।

সজিবের দেওয়া তথ্যের আলোকে খুচরা মাদক বিক্রেতা শাহীনকে ৫০ পিস ইয়াবাসহ গ্রেফতার করা হয় এবং কক্সবাজার থেকে গোপনে রেকটামে লুকানো দুই হাজার পিস ইয়াবাসহ মনজুরুলকে শ্যামলী থেকে গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে অতিরিক্ত ডিআইজি মো. মোজাম্মেল হক বলেন, গ্রেফতার সজিব কবিরাজ অষ্টম শ্রেণি পাস করে জীবনের শুরুতে কবিরাজি পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। পীরেরবাগ এলাকায় কবিরাজ হিসেবে পরিচিত তিনি। পরবর্তীতে মাদক ও অস্ত্র ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে শীর্ষ মাদক ও অস্ত্র ব্যবসায়ী হিসেবে কুখ্যাতি লাভ করেন।

অতিরিক্ত ডিআইজি মো. মোজাম্মেল হক আরও বলেন, গ্রেফতার সজিবসহ প্রত্যেকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় অস্ত্র ও চাঁদাবাজির মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে। তার বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ করলে জান-মালের ক্ষতি করতেন। কোনো খুচরা মাদক ব্যবসায়ী টাকা পরিশোধ না করলে বা ইয়াবা বহনের কাজ করতে না চাইলে বা তার কথা মতো না চললে নিজস্ব টর্চারসেলে ঝুলিয়ে পিটিয়ে হাত পা ভেঙ্গে দেওয়া হতো। এর জন্য তার আলাদা ক্যাডার বাহিনী আছে বলে জানা যায়।

জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায়, সজিবের নামে বিভিন্ন থানায় ৪টি মাদক মামলা রয়েছে। গ্রেফতারদের বিরুদ্ধে আইনানুগ কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন আছে।

জেইউ/এইচকে