সাভারের ঢাকা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (ডিইপিজেড) থেকে রাজধানী ঢাকায় সড়কপথের সরাসরি যোগাযোগের জন্য ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করা হয়েছে প্রায় ছয়মাস আগে। তবে নানা জটিলতায় এ সময়ের মধ্যেও প্রকল্পের নির্মাণ কাজ এখনও পুরোপুরি শুরু হয়নি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের অক্টোবরে ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন করা হয়েছিল। সেসময় নির্মাণ কাজ শুরু করে ২০২২ সালের জুন মাসে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেসময় কোনও কাজই শুরু হয়নি। পরে আরও চার বছর অতিরিক্ত সময় বাড়ানো হয়।

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, ১৬ হাজার ৯০১ কোটি টাকা বাজেটে ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়। প্রকল্পের মেয়াদ অতিরিক্ত চার বছর বাড়ানোর সময় প্রকল্প ব্যয় বাড়ানো হয় আরও ৬৫১ কোটি টাকা। চুক্তি অনুযায়ী মোট প্রকল্প ব্যয়ের ৮৫ শতাংশ চীন সরকার ও ১৫ শতাংশ বাংলাদেশ সরকারের দেওয়ার কথা। এরই মধ্যে গত বছরের সেপ্টেম্বরে প্রকল্পের কাজ পাওয়া চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশনকে (সিএমসি) প্রথম কিস্তি বাবদ ৩২.৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পরিশোধ করে বাংলাদেশ। পাশাপাশি একই বছরের অক্টোবরে ১৭০.৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পরিশোধ করে চীন সরকার।

ঢাকা-আশুলিয়া চার লেনের ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্পটি বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে জিটুজি ভিত্তিতে চুক্তি হয়। শুরু থেকেই প্রকল্পটির পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে ছিল সিএমসি। চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ঋণ সংক্রান্ত জটিলতার কারণেই প্রকল্পটি নির্মাণে ধীরগতি হচ্ছে বলে দাবি কর্তৃপক্ষের।

ঋণ চুক্তির জটিলতা নিরসনের পর প্রকল্পের মূল নকশা তৈরি করতে যৌথভাবে দুই কোম্পানিকে নিয়োগ দেয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ডিজাইন রিভিউ ও সুপারভিশন কনসালটেন্টস হিসেবে নকশা রিভিউ এবং নির্মাণকাজ তদারকির জন্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগে চুক্তি সই হয় বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ এবং পরামর্শক প্রতিষ্ঠান স্পেনের টেকনিকা ওয়াই প্রয়োকটস ও দক্ষিণ কোরিয়ার ডিওএইচডব্লিউএ এবং বাংলাদেশের ডিডিসির মধ্যে।

ইতোমধ্যে ২০২৩ সালের ১৩ এপ্রিল সিএমসিকে চিঠি দেয় ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কা‌জে নি‌য়ো‌জিত পরামর্শক প্রতিষ্ঠান টিপসা। বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষকে (বিবিএ) যার অনুলিপি দেওয়া হয়। এমনকি চুক্তি শুরু হওয়ার পাঁচ মাস পরেও (অক্টোবর ২০২২), এখনও অধিকাংশ নির্মাণ কাজ শুরু করতে পারেনি সিএমসি।

 ওই চিঠিতে দেখা গেছে, বেশকিছু সীমাবদ্ধতার অভিযোগ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। যার মধ্যে রয়েছে ভূমি অধিগ্রহণে জটিলতা ও ড্রয়িংয়ে অগ্রাধিকার দেওয়া। ওই চিঠিতে ১ ও ৩ ধারায় দেখা গেছে, ‘ঠিকাদার চাইলে কাজ শুরু করতে পারতেন। কিন্তু বর্তমানে ডিজাইনের অভাবে এটা সম্ভব হচ্ছে না।’

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এভাবে প্রকল্পের ধীরগতি হলে কাজের ব্যয় বৃদ্ধি পাবে। এই প্রকল্পের জন্য সিএমসিকে নির্বাচন করা হলেও তারা আরও তিন চীনা সাব-কন্ট্রাক্টরকে পুরো প্রকল্পটির কাজ দিয়েছেন। যা চুক্তি বহির্ভূত।

প্রকল্পের সার্বিক বিষয়ে জানতে ২৮ মে (রোববার) সকালে ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক মো. শাহাবুদ্দিন খানের মুঠোফোনে এসএমএস ও একাধিকবার কল করেও কোনও সাড়া পাওয়া যায়নি।

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটি সাভার ইপিজেড থেকে আশুলিয়া-বাইপাল-আব্দুল্লাহপুর হয়ে হযরত শাহাজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত নির্মাণাধীন ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটির সঙ্গে সংযুক্ত হবে। এতে দ্রুত ও সহজে রাজধানীতে যাতায়াত করতে পারবেন ৩০টি জেলার মানুষ। প্রকল্পের আওতায় ১০.৮৩ কিলোমিটার র‍্যাম্প, ১.৯৫ কিলোমিটার দুটি দীর্ঘ ফ্লাইওভার, ১৪.২৮ কিলোমিটার চার লেনের রাস্তা এবং এক্সপ্রেসওয়ের উভয় পাশে ১৮ কিলোমিটার ড্রেন ও ডাক্ট এবং ২.৭২ কিলোমিটার সেতু নির্মাণ করা হবে।

এমএইচএন/কেএ