গাজীপুর সিটি নির্বাচন
প্রার্থীদের দুশ্চিন্তা : সুষ্ঠু ভোট ও ভোটার উপস্থিতি
রাত পোহালেই গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ভোট। নির্বাচন সম্পূর্ণ করতে সকল প্রস্তুতি শেষ করেছে নির্বাচন কমিশন। আসন্ন পাঁচ সিটি কর্পোরেশনের মধ্যে প্রথম ভোট হচ্ছে গাজীপুরে। তাই দেশের সবার চোখ গাজীপুরের দিকে। গাজীপুর সিটির ভোটাররা নির্বাচন কমিশনের দিকে তাকিয়ে আছেন। সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচনের অপেক্ষা করছেন স্থানীয়রা। তবে শেষ দিনেও প্রার্থীরা উৎকণ্ঠা রয়েছেন ভোটার উপস্থিতি ও সুষ্ঠু ভোট নিয়ে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় ভোট গ্রহণ শুরু হয়ে চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। সবগুলো কেন্দ্রেই ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ হবে। প্রতিটি কেন্দ্রেই সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। ভোটগ্রহণে ৪৮০ প্রিজাইডিং অফিসার, ৩ হাজার ৪৯৭ সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ও ৬ হাজার ৯৯৪ পোলিং অফিসার কাজ করবেন।
বিজ্ঞাপন
নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, গাজীপুর সিটি করপোরেশন এলাকায় মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন তৃতীয় লিঙ্গের। ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি। আর ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
জানা গেছে, মেয়র পদে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুন ও আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী আজমত উল্লাহ খানের। তবে দুই প্রার্থীই নিজেদের জয়ের বিষয়ে আত্মবিশ্বাসের কথা জানিয়েছেন।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমত উল্লাহ খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার জন্য নির্বাচন কমিশন শতভাগ আন্তরিক। গাজীপুরের মানুষও একটি সুষ্ঠু ভোট চায়। আমাদের নেতাকর্মীরা নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে কাজ করেছে। আমি দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে চাই, অবশ্যই এ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে।
এদিকে বুধবার দুপুরে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী জায়েদা খাতুন গণমাধ্যমকে বলেন, গাজীপুরের নির্বাচনের দিকে সারা দেশের মানুষ তাকিয়ে রয়েছে। তাই এ নির্বাচনকে বিতর্কিত করা ঠিক হবে না। পুলিশ পরিচয়ে তার এজেন্টদের হয়রানি করা হচ্ছে। কর্মীদের গ্রেপ্তার ও হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তিনি একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নির্বাচন কমিশনের প্রতি এবং নগরবাসীকে সব বাধা উপেক্ষা করে টেবিল ঘড়ি মার্কায় ভোট দেওয়ার আহ্বান রইল।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, নির্বাচনের সকল প্রচার প্রচারণার কাজ সম্পন্ন করেছে প্রার্থীরা। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রের সামনে পোস্টারে ছেড়ে গেছে। সমর্থকরা ভোটকেন্দ্রে আশপাশে ঘুরছেন। কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা যেন না ঘটে সেজন্য সমর্থকরা পাহারা দিচ্ছেন।
জয়দেবপুর বাজার রোডে বাসিন্দা রহমত আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, ভোট ভালো ভাবে হলেই চলে। সুষ্ঠু ভোট হোক এটাই চাই। ভোট সুষ্ঠু হলে নির্বাচন কমিশনের প্রতি মানুষের আস্থা বাড়বে। যা আমাদের জাতীয় নির্বাচনের জন্য সুফল বয়ে নিয়ে আসবে।
তিনি বলেন, আমি ও আমার পরিবারের সবাই ভোট কেন্দ্রে যাব। সবাইকে বলব, ভোট দেন। যোগ্য নেতৃত্ব বাছাই করুন। আমরা ভোট না দিলে যোগ্যরা আর নির্বাচনে দাঁড়াবে না, আর যোগ্যরা না এলে গাজীপুরের উন্নয়ন হবে না।
এদিকে ইসলামী আন্দোলনের মেয়র প্রার্থী গাজী আতাউর রহমান বলেন, নির্ভয়ে কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে দুর্নীতি ও দুঃশাসনমুক্ত পরিচ্ছন্ন নগরী গড়তে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে বলব। সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে পুলিশ ও সিভিল প্রশাসন ও প্রিজাইডিং অফিসারদেরকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। যদি নির্বাচন কোনোরকম প্রশ্নবিদ্ধ হয়, তবে গাজীপুরবাসীকে সঙ্গে নিয়ে জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামতে বাধ্য হব।
জাহাঙ্গীর আলমের ঘনিষ্ঠ সহচরদের এক নেতা ঢাকা পোস্টকে বলেছেন, ‘আমাদের জনসমর্থন আছে। কিন্তু অনেকেই দলের চাপের পড়ে ভোটকেন্দ্রে হাজির হবেন কিনা সেটা নিয়ে সন্দেহ আছে। ভোটকেন্দ্রে দলের নেতাকর্মী ও বুথগুলোতে পোলিং এজেন্ট উপস্থিত না থাকলে নির্বাচনে জয় পাওয়া যাবে না।’
নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনের প্রস্তুত
গাজীপুর সিটি নির্বাচনে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসন পুরোপুরি প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। বৃহস্পতিবার প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে প্রার্থীদের এজেন্ট নিশ্চিত করা হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. ফরিদুল ইসলাম। তিনি বুধবার বেলা ১১টায় গাজীপুরের শহীদ বরকত স্টেডিয়ামে নির্বাচনের প্রস্তুতি উপলক্ষ্যে আয়োজিত পুলিশের ‘ব্রিফিং প্যারেড’ শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এমনটা জানান।
ফরিদুল ইসলাম বলেন, ভোটের দিন প্রার্থীর এজেন্ট বের করে দেওয়া নিয়ে আপনারা (সাংবাদিক) যে আশঙ্কা করছেন, সে বিষয়ে আমাদের সবার নজর আছে। ভোট চলাকালে যদি এমন কোনো বিষয় আমাদের নজরে আসে বা কেউ অভিযোগ করে তবে তাৎক্ষণিকভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবস্থা নেবেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে প্রত্যেক কেন্দ্রে প্রার্থীর এজেন্টের অবস্থান নিশ্চিত করব। আইনের ভেতরে থেকে প্রার্থীরা যে সুবিধা পাওয়ার কথা, তা পাবেন।
ফরিদুল ইসলাম বলেন, নির্বাচন কমিশনসহ আমার একটাই চাওয়া; যেকোনো মূল্যে গাজীপুরে একটি মডেল নির্বাচন উপহার দেওয়া। এ লক্ষ্যে প্রায় ৫ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। পুরো নগরকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে। আমরা নির্বাচন নিয়ে সবদিক থেকে প্রস্তুত।
শিববাড়ী এলাকার ভোটার ইদ্রিস মিয়া বুধবার রাতে ঢাকা পোস্টকে বলেন, আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা পরেই আমাদের ভোট। এক দলের দুই প্রার্থী, তাদের মাঝে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। আজকে নৌকা নাকি টেবিল ঘড়ি জিতবে সেটাই মানুষের মাঝে আলোচ্য বিষয়।
তিনি বলেন, বিএনপি যদি প্রকাশ্যে প্রার্থী দিতেন তাহলে ভোটার উপস্থিতি বেশি হতো। এখন তুলনামূলকভাবে কম হবে। আওয়ামী লীগের সমর্থকরা চেষ্টা করবে ভোটারদের কেন্দ্র নিতে। ভোটার উপস্থিতি যে প্রার্থী আনতে পারবে সেই বিজয়ী হবে।
এমএসআই/ওএফ