দুর্নীতির মাধ্যমে অঢেল সম্পদের অভিযোগ
দুদকের নোটিশ ‘পাত্তা’ দেন না এলজিইডির অতিরিক্ত প্রকৌশলী
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. আবদুর রশিদ মিয়া অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। এমন অভিযোগ অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
অনুসন্ধান পর্যায়ে অনেক অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেলেও অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. আবদুর রশিদ মিয়া শুরু থেকেই চরম অসহযোগিতা করে যাচ্ছেন। বেশ কিছু নথিপত্রসহ পরপর তিনবার তাকে তলবি নোটিশ দেওয়া হলেও কোনো সাড়া দেননি। তার কাছে চাওয়া নথিপত্র সরবরাহ করছেন না আবদুর রশিদ।
বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ গত ১৫ মে শেরেবাংলা নগর থানার মাধ্যমে তলবি নোটিশ পাঠিয়েছেন দুদকের সহকারী পরিচালক মানসী বিশ্বাস। ওই চিঠিতেও ফুটে উঠেছে দুদককে অসহযোগিতার চিত্র। শেরেবাংলা নগর থানা সূত্রে বিষয়টি জানা গেছে।
ওই তলবি নোটিশ মূলত স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের আগারগাঁও এলজিইডি ভবন বরাবর পাঠানো হয়েছে। চতুর্থবার পাঠানো নোটিশে বলা হয়েছে, অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য প্রদানের জন্য গত ১০ এপ্রিল, ১৬ এপ্রিল ও ২ মে নোটিশ প্রেরণ করা হলেও চাহিদাকৃত কোনো রেকর্ডপত্র সরবরাহ করা হয়নি কিংবা উপস্থিত হয়ে কোনো বক্তব্য দেওয়া হয়নি। এ অবস্থায় আপনাকে আগামী ২৩ মে (মঙ্গলবার) অনুসন্ধানের স্বার্থে নিজ, স্ত্রী ও ছেলে-মেয়েদের এনআইডি কার্ড, স্মার্ট কার্ড, পাসপোর্ট, জন্ম সনদের ফটোকপিসহ হাজির হয়ে বক্তব্য প্রদানের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
দুদক আইন ২০০৪ এর ১৯ (৩) ধারায় রেকর্ডপত্র সরবরাহ না করলে ব্যবস্থা গ্রহণের সুযোগ রয়েছে বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে দুদকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, এলজিইডির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আবদুর রশিদ মিয়াকে বারবার তলব করা হলেও তিনি হাজির হননি কিংবা চাহিদাকৃত নথিপত্র সরবরাহ করেননি। দুদকে আসা অভিযোগের বিষয়ে নিজস্ব গোয়েন্দা অনুসন্ধানে বেশ কিছু প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাকে ডাকা হয়েছিল সেসব তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাইয়ের জন্য। কিন্তু তিনি সচেতনভাবেই দুদকের তলবি নোটিশকে অবহেলা করে যাচ্ছেন। সর্বশেষ তাকে শেরেবাংলা নগর থানার মাধ্যমে তলবি নোটিশের চিঠি দেওয়া হয়েছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, এলজিইডির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আবদুর রশিদ মিয়া দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত জ্ঞাত আয় বর্হিভূত বিপুল পরিমাণ স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির মালিকানা অর্জন করেছেন। তার বিরুদ্ধে এলজিইডির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী প্রশাসন ও ট্রেনিং বিভাগে দায়িত্ব পালনকালে অভিযোগ উঠেছে। এর আগে তিনি প্রকল্প পরিচালক ও নির্বাহী প্রকৌশলী হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ এসব পদে দায়িত্ব পালনকালে তিনি বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন বলে অভিযোগে বলা হয়েছে। এর মাধ্যমে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার সম্পদের মালিকানা অর্জন করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। আর এসব সম্পদের অধিকাংশই স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে ও তার নিকট বিভিন্ন আত্মীয় স্বজনের নামে গড়েছেন। অনিয়ম ও দুর্নীতির মধ্যে সবচেয়ে বড় অভিযোগ তিনি আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে এক হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দিয়েছেন। যাদের কাছ থেকে ৫০ হাজার থেকে ৩ লাখ টাকা ঘুষ গ্রহণ করেছেন।
অভিযোগে অঢেল সম্পদের বর্ণনায় বলা হয়েছে- বগুড়ার শেরপুর পৌরসভায় জমি, হিমছায়াপুরে বাগানবাড়ি, একই এলাকায় ১০ নম্বর শাহবন্দেগী ইউনিয়নে খন্দকার তলা মৌজায় ৫ একর জমি, বগুড়ার শেরপুর সেরময়া মৌজায় ১২ বিঘাজমি, রাজশাহীতে ৫ ও ৭ তলা দুটি বাড়ি, একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার, সিরাজগঞ্জে হাটিকুমডুল এলাকায় ২৫ শতাংশ জমির ওপর ফুডগার্ডেন, সিরাজগঞ্জ-বগুড়া মহাসড়কে আরও একটি ফুডগার্ডেন। যার আনুমানিক বাজার মূল্য ৭০ কোটি টাকা। এছাড়া ব্যাংকে কোটি টাকার বেশি এফডিআর ও রাজধানীতে একাধিক বেনামি ফ্ল্যাট।
এ বিষয়ে দুদকের সহকারী পরিচালক মানসী বিশ্বাসের কাছে জানতে চাইলে তিনি দুদকের জনসংযোগ দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন। সেখানে যোগাযোগ করা হলে দুদকের সহকারী পরিচালক (জনসংযোগ) মোহাম্মদ শফিউল্লাহ ঢাকা পোস্টকে বলেন, যেহেতু বিষয়টি অনুসন্ধান পর্যায়ে রয়েছে, তাই এ মুহূর্তে কোনো বক্তব্য দেওয়া সম্ভব নয়।
অন্যদিকে যার বিরুদ্ধে অভিযোগ সেই অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. আবদুর রশিদ মিয়ার সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোনে সাড়া দেননি। এমনকি তার মোবাইল ফোনে মেসেজ পাঠানো হলেও তিনি কোনো জবাব দেননি।
এ বিষয়ে এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ মহসিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
আরএম/ওএফ