ভিন্ন এক পিটার হাসকে দেখা গেল পদ্মায়
অনেকটা হঠাৎ করেই ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব ও ভারতের কূটনীতিকদের জন্য পুলিশের বাড়তি নিরাপত্তা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। সরকারের এমন সিদ্ধান্ত কার্যকরের চারদিনের মাথায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আমন্ত্রণে বৃহস্পতিবার দুপুরে একটি দাওয়াতে অংশ নেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসসহ অন্যান্যরা।
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় আন্তর্জাতিক সামুদ্রিক সংস্থার (আইএমও) মহাসচিব পদে বাংলাদেশের প্রার্থিতার পক্ষে প্রচারণার অংশ হিসেবে ঢাকায় কর্মরত কূটনীতিকদের জন্য এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। কিন্তু সেখানে ভিন্ন এক পিটার হাসকে দেখা গেছে। সরকারের আমন্ত্রণে অন্যসব বিদেশি প্রতিনিধিদের সঙ্গে অনুষ্ঠানে যোগ দিলেও পুরোটা সময় তিনি ছিলেন নিষ্প্রভ।
বিজ্ঞাপন
কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, সরকারের পক্ষ থেকে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলমের করা ব্রিফিংয়ে মনোযোগী ছিলেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। তবে তিনি ব্রিফিং নিয়ে কোনো প্রশ্ন করেননি বা কথা বলেননি। এমনকি কূটনীতিকদের মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেওয়া পিটার খাওয়ার টেবিলেও কারও সঙ্গে কোনো কথা বলেননি। অনেকটা নীরব শ্রোতা হয়ে পুরো অনুষ্ঠান উপভোগ করেছেন। তবে বিভিন্ন রাষ্ট্রের প্রতিনিধি বা কূটনীতিকরা একে অন্যের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেছেন। খাবারের টেবিলেও তারা ছিলেন প্রাণবন্ত। যদিও ওই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিদের বক্তব্য দেওয়ার কোনো নির্ধারিত সিডিউল ছিল না।
সরেজমিনে দেখা গেছে, যথাসময়ে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় আসেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। তার গাড়ির সামনে বা পেছনে ছিল না পুলিশি কোনো প্রটোকল ব্যবস্থা। শুধু তাই নয়, রাষ্ট্রদূতকে বহনকারী গাড়িতে মার্কিন পতাকা ওড়াতে দেখা যায়নি। গাড়ির সামনের সিটে কেবলমাত্র রাষ্ট্রদূতের গানম্যান ছিলেন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত একটি সূত্র জানায়, ব্রিটেন, আমেরিকা, সৌদি আরব ও ভারতের কূটনীতিকদের জন্য পুলিশের বাড়তি নিরাপত্তা প্রত্যাহারের বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। বিষয়টি অবশ্য পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিজেও অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, কূটনীতিকদের বাড়তি নিরাপত্তা প্রত্যাহারের বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।
শাহরিয়ার আলম বলেন, ঢাকায় কর্মরত বিদেশি কূটনীতিকদের নিরাপত্তা অনেক ভালোভাবে এবং দক্ষতার সঙ্গে দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। পৃথিবীর অনেক দেশের চেয়ে বাংলাদেশে বিদেশি কূটনীতিকদের বেশ ভালো মানের নিরাপত্তা দেওয়া হয়। তাদের অব্যাহতভাবে এ মানের নিরাপত্তা দেওয়া হবে।
কূটনীতিকদের অতিরিক্ত নিরাপত্তা বাতিল নিয়ে পরবর্তী সময়ে আর গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে চান না বলেও স্পষ্ট করেন শাহরিয়ার আলম।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, কূটনীতিকদের বাড়তি নিরাপত্তা প্রত্যাহার নিয়ে মনোক্ষুণ্ন হয়েছেন সংশ্লিষ্ট দেশগুলো। বাড়তি পুলিশি সুবিধা পাওয়া কেউ কেউ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে জানিয়েছে।
আমন্ত্রণ জানানো হলেও অনুষ্ঠানে কোনো প্রতিনিধি পাঠায়নি সৌদি আরব। এছাড়া ভারতীয় হাইকমিশনার নিজে না এলেও অনুষ্ঠানে পলিটিক্যাল কাউন্সিলরকে পাঠিয়েছেন। অন্যদিকে যুক্তরাজ্যের ডেপুটি হাইকমিশনারও যোগ দিয়েছেন অনুষ্ঠানে। এছাড়া পুলিশি বাড়তি নিরাপত্তা সুবিধা ছাড়াই জাপানের রাষ্ট্রদূত অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন।
গত রোববার (১৪ মে) থেকে ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ মোট ছয় দেশের কূটনীতিকদের বাড়তি প্রটোকল সুবিধা বাতিল করেছে সরকার।
কূটনীতিকদের বাড়তি প্রটোকল সুবিধা বাতিলের বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, বর্তমানে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তাই কূটনীতিকদের বাড়তি নিরাপত্তা দেওয়ার কোনো আবশ্যকতা নেই।
এদিকে, বিদেশি কূটনীতিকদের আনসার বাহিনী কীভাবে অতিরিক্ত নিরাপত্তা (এসকর্ট) দেবে, সেটি চূড়ান্ত হয়েছে। আগামী ২১ মে'র মধ্যে নোট ভার্বালের (কূটনৈতিক পত্র) মাধ্যমে দূতাবাসগুলোকে বিষয়টি জানানোর কথা রয়েছে।
এনআই/এসএম