রোহিঙ্গা সংকট
‘মোখা’য় ধাক্কা খেল প্রত্যাবাসনের নতুন উদ্যোগ
চলতি মাসে পাইলট প্রকল্পের মাধ্যমে কিছু রোহিঙ্গাকে দিয়ে প্রত্যাবাসন শুরু করার কথা ছিল। সেজন্য মিয়ানমারের একটি প্রতিনিধি দলের বাংলাদেশ সফরের কথা ছিল। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় মোখাসহ বিভিন্ন কারণে প্রত্যাবাসন শুরু করা, এমনকি মিয়ানমারের প্রতিনিধি দলের সফরও এখন নিশ্চিত নয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে এ বার্তা পাওয়া গেছে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাপ্তাহিক বিফ্রিং অনুষ্ঠিত হয়। এতে মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সেহেলী সাবরীন রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন এবং মিয়ানমারের প্রতিনিধি দলের সফর নিয়ে কথা বলেন।
বিজ্ঞাপন
তিনি জানান, সাইক্লোন মোখায় মিয়ানমারের রাখাইনে অনেক ক্ষতি হয়েছে। তাই মিয়ানমারের প্রতিনিধি দল ঠিক কবে আসবে বা প্রত্যাবাসন কবে শুরু হবে তার তারিখ এখনো ঠিক হয়নি।
মুখপাত্র বলেন, গত ৫ মে বাংলাদেশ সরকারের একটি প্রতিনিধি দল এবং প্রত্যাবাসনের প্রথম ব্যাচের অন্তর্ভুক্ত ২০ জন রোহিঙ্গা মিয়ানমারে রাখাইন রাজ্যের মংডু সফর করেন। ফিরে এসে রোহিঙ্গারা যে সকল অস্পষ্ট বিষয় উল্লেখ করেছেন তা ইতিমধ্যে মিয়ানমারকে জানানো হয়েছে।
তিনি জানান, প্রত্যাবাসনের জন্য নির্বাচিত রোহিঙ্গাদের সঙ্গে নিয়ে আলোচনার জন্য মিয়ানমারের একটি প্রতিনিধি দল মে মাসে বা তার নিকটবর্তী সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফর করবে বলে আশা করা যায়।
সেহেলী সাবরীন বলেন, প্রথম ব্যাচে প্রত্যাবাসনের জন্য নির্ধারিত রোহিঙ্গাদের ব্রিফ করার জন্য মিয়ানমারের যে দল বাংলাদেশে আসবেন তারা অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি এ সকল বিষয়ে আরও তথ্য প্রদান করবেন বলে আমরা প্রত্যাশা করি। যা রোহিঙ্গাদের আস্থা অর্জনে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
এদিকে, প্রত্যাবাসন ও মিয়ানমারের প্রতিনিধিদলের সফরের অগ্রগতি নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, প্রত্যাবাসন শুরু কিংবা প্রতিনিধি দলের সফর নিয়ে চূড়ান্ত কিছুই হয়নি বলা যাচ্ছে না। কনক্রিট কোনো কিছু হয়নি। তবে আমরা কাজ করছি।
চীনের ভূমিকায় ২০১৭ সালের নভেম্বরে প্রত্যাবাসন বিষয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে চুক্তি সই করে বাংলাদেশ। ২০১৮ সালের নভেম্বরে মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সমঝোতার ভিত্তিতে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু সে উদ্যোগ ব্যর্থ হয়।
পরবর্তীতে চীনের মধ্যস্থতায় ২০১৯ সালের আগস্টে দ্বিতীয় দফায় প্রত্যাবাসন উদ্যোগও ব্যর্থ হয়। ওই সময় রাখাইন রাজ্যের পরিবেশ নিয়ে শঙ্কার কথা জানায় রোহিঙ্গারা। ফিরে যেতে অপারগতা প্রকাশ করে তারা। প্রায় ছয় বছরেও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে কোনো অগ্রগতি হয়নি।
চলতি বছর নতুন করে আবার রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শুরুর বিষয়ে বেশ উদ্যোগী ভূমিকা পালন করছে চীন। তারই অংশ হিসেবে এপ্রিলের মাঝামাঝিতে বেইজিংয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারকে নিয়ে বৈঠক করেছে চীন। ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় রোহিঙ্গাদের একটি দল নিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা রাখাইন সফর করবেন। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত ৫ মে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি ও রোহিঙ্গা প্রতিনিধিরা রাখাইন সফর করেন। ফিরতি সফরে রোহিঙ্গাদের মনোবল বৃদ্ধির জন্য এ মাসেই মিয়ানমার তাদের প্রতিনিধি দল পাঠানোর কথা ছিল। কিন্তু সাইক্লোন ‘মোখা’র অজুহাত দেখিয়ে সেটি পিছিয়ে দিয়েছে মিয়ানমার।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনে সেনা অভিযান শুরুর পর কয়েক মাসের মধ্যে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়। আগে থেকে বাংলাদেশে ছিল চার লাখের অধিক রোহিঙ্গা। এছাড়া প্রতি বছর নতুন করে প্রায় ৩০ হাজার রোহিঙ্গা শিশু জন্ম নিচ্ছে ক্যাম্পগুলোতে।
এনআই/এসকেডি