>> ডাবল বার্নারের বর্তমান বিল ১০৮০ টাকা, প্রস্তাবিত বিল ১৫৯১ টাকা

>> প্রস্তাবিত মূল্যে তিতাসের বাড়তি আয় হবে ১২৮ কোটি টাকা

>> ননমিটার গ্রাহকদের অতিরিক্ত গ্যাস ব্যবহারই দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবনার কারণ

সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে গ্যাস সংকটের মুখে পড়েছিল দেশ। পাইপলাইনে গ্যাসের চাপ কমে যাওয়া ও বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জ্বালানি সংকটের ফলে লোডশেডিংয়ের ভোগান্তি পোহাতে হয়েছিল গ্রাহকদের। দেশে চলমান এ গ্যাস সংকটের মাঝেই আবাসিক খাতে ননমিটারড গ্রাহকদের গ্যাস ব্যবহারের পরিমাণ পুনর্বিবেচনা ও মূল্য সমন্বয়ের প্রস্তাব দিয়েছে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড।

গত ২ মে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের নিকট মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাবনা পাঠায় প্রতিষ্ঠানটি।

প্রস্তাবনায় তিতাস উল্লেখ করে, কম-বেশি ২৫ লাখ গ্রাহকের বিপরীতে কোনো সমীক্ষা/তথ্য বিশ্লেষণ ব্যতিরেকে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন এক চুলার ক্ষেত্রে ৫৫ ঘনমিটার ও দুই চুলার ক্ষেত্রে ৬০ ঘনমিটার গ্যাস ব্যবহার নির্ধারণ করায় সিস্টেম লস বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে একটি লাভজনক সরকারি প্রতিষ্ঠান আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।

আরও পড়ুন : সংসার খরচ আরও বাড়ল, এখানেই শেষ নয় 

সিঙ্গেল বার্নারে একজন গ্রাহক ৫৫ ঘনমিটার ও ডাবল বার্নারে একজন গ্রাহক ৬০ ঘনমিটার গ্যাস ব্যবহার করেন, এমন বিবেচনায় ২০২২ সালের জুন মাসে গ্যাসের মূল্য নির্ধারণ করে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ১৮ টাকা হিসেবে বর্তমানে মিটারবিহীন গ্রাহকরা সিঙ্গেল ও ডাবল চুলায় যথাক্রমে  ৯৯০ ও ১০৮০ টাকা বিল দিয়ে থাকেন।

কিন্তু তিতাসের ভাষ্য মতে, মিটারবিহীন গ্রাহকরা গ্যাস ব্যবহার করছেন গড়ে ৯৭ ঘনমিটার। যা বেঁধে দেওয়া পরিমাণের চেয়ে অনেক বেশি।

প্রস্তাবনায় তারা বলে, মিটারবিহীন আবাসিক গ্রাহক কর্তৃক গৃহস্থালি রান্নাবান্নার কাজ ব্যতীত পানি বিশুদ্ধকরণের উদ্দেশ্যে পানি ফুটানো এবং বিভিন্ন শিল্পাঞ্চল অধ্যুষিত এলাকায় কলকারখানার শ্রমিকরা ও বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় সাবলেট ভাড়াটিয়ারা একাধিক পরিবারের রান্নার জন্য পালাক্রমে গ্যাস ব্যবহারের কারণে গড় গ্যাস ব্যবহারের তুলনায় ওইসব এলাকায় বেশি গ্যাস ব্যবহৃত হয়। তিতাস গ্যাস ঢাকার বিভিন্ন বাণিজ্যিক এলাকায় যেমন মতিঝিল, কারওয়ান বাজার, মিরপুর এবং শিল্পাঞ্চল এলাকা যেমন তেজগাঁও, সাভার, টঙ্গী, গাজীপুর, আশুলিয়া, সোনারগাঁও প্রভৃতি এলাকায় গ্যাস সরবরাহ করে থাকে।

আরও পড়ুন : গ্যাস সংকটে নাকাল শিল্প, অনুসন্ধান-উত্তোলনে স্থবিরতা

ফলে মিটারবিহীন আবাসিক গ্রাহকদের ক্ষেত্রে এক ও দুই চুলার বিপরীতে মাসিক গ্যাস ব্যবহার ৭৬.৬৫ ও ৮৮.৪৪ ঘনমিটার পুনর্নির্ধারণের আবেদন জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ১৮ টাকা হিসাবে এক চুলায় ১ হাজার ৩৭৯ টাকা এবং দুই চুলায় ১ হাজার ৫৯১ টাকা দাম বাড়ানের প্রস্তাব করা হয়েছে। শতাংশের হিসেবে যা প্রায় ৩৯ থেকে ৪৭ শতাংশ।

ভর্তুকি প্রত্যাহার এবং রাজস্ব ঘাটতি কমানোর লক্ষ্যে চলতি বছরের জানুয়ারিতে নির্বাহী আদেশে শিল্প, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বাণিজ্যিক খাতে গ্যাসের দাম ১৭৯% পর্যন্ত বৃদ্ধি করে সরকার। সে সময় আবাসিক, সিএনজি, সার এবং চা বাগানের ব্যবহারকারীদের জন্য গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়নি।

বর্তমানে তিতাসের বিতরণ এলাকায় বৈধ গ্রাহকের সংখ্যা ২৮ লাখ ৫৭ হাজার। যার মধ্যে প্রি পেইড মিটারভিত্তিক গ্রাহকের সংখ্যা ৩ লাখ ৩২ হাজার ও নন মিটারভিত্তিক গ্রাহকের সংখ্যা ২৫ লাখ ২৫ হাজার। প্রস্তাবিত মূল্যবৃদ্ধিতে তিতাসের বাড়তি আয়ের পরিমাণ দাঁড়াবে ১২৮ কোটি টাকায়।

এ প্রসঙ্গে তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হারুনুর রশীদ মোল্লা ঢাকা পোস্টকে বলেন, মূলত ননমিটারড গ্রাহকরা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি গ্যাস ব্যবহার করেন। বিপরীতে মিটারড গ্রাহকরা পরিমাণগত গ্যাস ব্যবহার করেন। মিটারড গ্রাহকদের গ্যাস ব্যবহারের যে পরিমাণ, সেটাকে ধরে আমরা কমিশনের কাছে ননমিটারড গ্রাহকদের গ্যাস ব্যবহারের পরিমাণ ৭৬ ও ৮৮ ঘনমিটার নির্ধারণ করার প্রস্তাব দিয়েছি।

আরও পড়ুন : নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস-বিদ্যুৎ সরবরাহে ‘মোখা’র প্রভাব

তবে তিতাসের এই প্রস্তাবনাকে অযৌক্তিক বলছেন বিশেষজ্ঞরা।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সিনিয়র সহসভাপতি ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির সর্বশেষ শুনানিতে আমরা দেখেছি গ্রাহকরা প্রতি মাসে সর্বোচ্চ ৫০ ঘনমিটার গ্যাস ব্যবহার করেন, যা নির্ধারণ করে দেওয়া পরিমাণের চাইতে কম। আবার এই ৫০ ঘনমিটারের পুরোটা কিন্তু গ্রাহক পায় না। অধিকাংশ সময়েই পাইপলাইনে গ্যাসের স্বল্পতা থাকে। এছাড়া লিকেজের মাধ্যমে গ্যাস অপচয়, অবৈধ সংযোগের মাধ্যমে মুনাফা তো করছেই। অতএব মূল্যবৃদ্ধির এই প্রস্তাবনা সম্পূর্ণভাবে অযৌক্তিক।

ওএফএ/এসকেডি