জাতীয় নির্বাচনে নিরপেক্ষ মাঠের বিষয়ে কিছু বলব না : সিইসি
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমলাতান্ত্রিক সরকার নিয়ন্ত্রণ করব। তবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরপেক্ষ মাঠের বিষয়ে আপনাদের (সাংবাদিকদের) কিছু বলব না।
মঙ্গলবার (১৬ মে) রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সঙ্গে বৈঠক শেষে এ কথা বলেন সিইসি।
বিজ্ঞাপন
সিইসি বলেন, ‘আমাদের তরফ থেকে সব দলকে আহ্বান করা হবে। আমরা চাই, আপনারা সবাই নির্বাচনে আসুন এবং নির্বাচনটাকে অংশগ্রহণমূলক ও উৎসবমুখর করে তুলুন। আমাদের যে দায়িত্ব, সেটা কোনো দলের দিকে তাকানো নয়। আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে ভোটাররা যেন নির্ভয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন। মূলত সেই চেষ্টাটাই আমরা করব। এক্ষেত্রে কিন্তু নির্বাচনকালীন যে রাজনৈতিক সরকার এবং যে আমলাতান্ত্রিক সরকার থাকবে; আমলাতান্ত্রিক সরকার বলতে মিন করছি মন্ত্রিপরিষদ সচিব থেকে সহকারী সচিব পর্যন্ত এবং রাজনৈতিক সরকার বলতে উপ-মন্ত্রী থেকে উপর পর্যন্ত। দুটো মিলেই কিন্তু পরিপূর্ণ সরকার। আমরা রাজনৈতিক সরকার ও আমলাতিন্ত্রক সরকারের ওপর যে নিয়ন্ত্রণ আইন আমাদের ওপর প্রদত্ত হয়েছে, সেটি প্রয়োগ করার চেষ্টা করব।’
তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে আমাদের সবাইকে সহায়তা করতে হবে। সরকারের সদিচ্ছার কথা বলেছি। বঙ্গবীর আমাদের বলেছেন যে, আমরা কিছুটা দুর্বল কি-না? আমরা বলেছি, সরকারের সদিচ্ছা অতিশয় গুরুত্বপূর্ণ। কারণ রাজনৈতিক সরকারের নিয়ন্ত্রণেই থাকবে কিন্তু অনেকটা, দীর্ঘদিনের যে আমলাতান্ত্রিক সরকার অর্থাৎ ডিসি, এসপি ও বিডিআর। আমরা বারবার একটা অভিযোগ শুনেছি যে, পুলিশের একটা ভূমিকা থাকে নেতিবাচক। এটা পুলিশের জন্য নয়, স্থানীয়ভাবেই হয়তো পুলিশকে পক্ষাশ্রীত করার চেষ্টা করা হয়ে থাকে প্রার্থীদের পক্ষ থেকে। পুলিশের হাতে অস্ত্র থাকে, শক্তি থাকে, ইউনিফর্ম থাকে, সেই দিকটাও আমরা দেখব। আমি পুলিশকে দোষারোপ করছি না। আমিই পুলিশের কাছে যাচ্ছি কনভিন্স করার জন্য, পুলিশ আমার কাছে আসছে, এ বিষয়টাই কিন্তু আমাদের সবার নিউট্রলাইজ করতে হবে।’
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচনে মিডিয়ার একটা রোল থাকবে, যে অনিয়ম তা যদি দৃশ্যমানভাবে ফুটিয়ে তোলা যায়, তাহলে সেটা নির্বাচন কমিশনের যথাযথ ভূমিকা নিতে সহায়ক হবে। নিরপেক্ষ মাঠে কি করব, সেটা আমরা নিজেরাই চিন্তা করব। আপনাদের কাছে বলতে চাচ্ছি না।’
দীর্ঘদিনের প্রশাসনিক ব্যবস্থা ভাঙ্গা যাবে কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমরা যে নির্বাচনগুলো করেছি, তা মোটামুটি তুলনামূলকভাবে সুশৃঙ্খলভাবে হয়েছে। আমি বলব না যে, অ্যাবস্যুলিটলি হয়েছে। সেক্ষেত্রে কিন্তু আমরা সরকার, পুলিশ এবং প্রশাসনের আন্তরিক সহযোগিতা পেয়েছি। আমরা কখনো অসহযোগিতা পাইনি। আশা করি, জাতীয় নির্বাচনেও তারা এ ভূমিকা পালন করবেন। যাতে জনগণের আস্থা ও সম্মানবোধ, আপনাদের ওপর, আমাদের ওপর এবং সরকারের ওপরও প্রতিষ্ঠা পায়।’
আরেক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘সরকারের স্বদিচ্ছা ছাড়া নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না একথা আমরা বলিনি। যদি সরকারের স্বদিচ্ছা এবং সহযোগিতা না থাকে এবং তার যে অঙ্গ সংগঠনগুলো পুলিশ ও প্রশাসন সহায়তা না করে তাহলে যে সক্ষমতা আছে তা সীমিত হয়ে পড়বে। বিশেষ করে পুলিশ, আর্মি, বিডিআর যদি আমাদের নিরপেক্ষভাবে সহায়তা করে। যদি অন্য কোনো পক্ষ থেকে প্রভাবিত না হয়, তাহলে আমাদের শক্তিটা অনেক বেড়ে যাবে। সেখানে আমাদের সক্ষমতা আরও বৃদ্ধি পাবে।’
সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটির প্রধান বলেন, ‘আমরা তাদের আশ্বাস দিয়েছি, আমাদের দায়িত্ব যতকুটু সম্ভব সাধ্য অনুযায়ী পালন করার চেষ্টা করব। আবার এটাও বলেছি যে হ্যাঁ, নির্বাচন কমিশনের ওপর নির্বাচন আয়োজনের একটা বড় দায়িত্ব আছে। একইসঙ্গে আপনারাও যারা দলে আছেন, নেতারা আছেন, কর্মীরা আছেন, তাদেরও দায়িত্ব আছে সার্বিকভাবে নির্বাচনের জন্য একটা অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে দেওয়া। খুব প্রতিকূল পরিবেশ যদি বিরাজ করে, তাহলে আমাদের জন্য অনেকটা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়তে পারে।’
বঙ্গবীর বলেছেন, নির্বাচনের সময় সরকার হচ্ছে নির্বাচন কমিশন। আমরা এটা বুঝি কিন্তু তারপরেও গ্রাউন্ড রিয়েলিটিটাকে মাথায় রেখে বলেছি সেই ক্ষেত্রেও আমরা চেষ্টা করব। যতদূর সম্ভব দক্ষতা, সততা এবং সাহসিকতার সঙ্গে দায়িত্বটা পালন করব। উনি কিন্তু শুরুতেই বাসাইল নির্বাচনের কথা বলেননি, যেটি আমাদের আশ্বস্ত করেছে। তিনি বলেছেন যদি বাসাইল নির্বাচনটা সুষ্ঠু হয়, তাহলে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তারা অংশগ্রহণ করবেন। আমরা বারবার বলেছি যে, একটা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চাই। উনি বলেছেন অংশগ্রহণমূলক যদি না হয়, তাহলে আমাদের কিছু করার থাকবে না।’
এসআর/এফকে