শালা-দুলাভাই কোন্দল
থানায় ডেকে প্রবাসীকে হাজতে ঢোকালেন ওসি
অর্থ লেনদেনের অভিযোগ নিষ্পত্তি করতে এক প্রবাসীকে থানায় ডেকে এনে হাজতে ঢোকানোর অভিযোগ উঠেছে চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রুহুল আমিনের বিরুদ্ধে। শুক্রবার (১২ মে) রাত ১১টার দিকে হাটহাজারী থানায় এ ঘটনা ঘটে।
থানা হেফজতে ঢুকিয়ে অভিযোগ নিষ্পত্তির বিষয়টিকে বেআইনি বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা। বিষয়টি নিয়ে ওসি উচ্চ আদালতের নির্দেশনা লঙ্ঘন করেছেন বলেও অভিযোগ তাদের।
বিজ্ঞাপন
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভুক্তভোগী ইলিয়াস হাটহাজারী উপজেলার মেখল ইউনিয়নের ফকিরহাট এলাকার বাসিন্দা। তিনি মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রবাসী। ৮ মাস আগে তিনি তার শ্যালক তাজুল ইসলামকে সেখানে নিয়েছিলেন। তবে ভিসা জটিলতায় গত এপ্রিলে ইলিয়াস দেশে আসেন। এরপর তার শ্যালক তাকে বিদেশে নিয়ে যাওয়ার পর ভিসা করিয়ে দেওয়ার নামে ৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন। বিষয়টি নিয়ে হাটহাজারী থানায় একটি অভিযোগ দেওয়া হয়।
অভিযোগের তদন্তে ওই প্রবাসীর বাড়িতে যান থানার এক এসআই। উভয়পক্ষকে নিয়ে কয়েকবার বৈঠকও করেন। একপর্যায়ে বিষয়টি সমাধান করতে ওসি রুহুল আমিন উভয়পক্ষকে শুক্রবার রাতে হাটহাজারী থানায় ডাকেন। দীর্ঘক্ষণ বৈঠক চললেও বিষয়টি সুরাহা না হওয়ায় প্রবাসী ইলিয়াসকে হাজতে ঢুকিয়ে দেন ওসি। খবর পেয়ে থানায় আসেন প্রবাসীর স্ত্রী আরজু মনি। তিনি আসার পরও ওসি প্রবাসীকে ছাড়ছিলেন না। একপর্যায়ে তিনি জেলা এসপি এস এম শফিউল্লাহকে ফোন করে বিষয়টি জানান। এসপির হস্তক্ষেপে ছাড়া পান প্রবাসী ইলিয়াস।
ভুক্তভোগী প্রবাসীর স্ত্রী আরজু মনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, অভিযোগকারী আমার আপন ছোট ভাই। সে টাকা পাবে বলে আমার স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছে। সে কখনো ৫ লাখ পাবে বলে আবার কখনো বলে ৩ লাখ। বাস্তবে আমার স্বামী তাকে বিদেশ নিয়েছেন বিমান ভাড়া দিয়ে। বিদেশে গিয়ে ভিসা করানোর জন্য তাকে সহায়তা করেছেন। কিন্তু তার শারীরিক সমস্যা থাকায় ভিসা হয়নি। এজন্য তাকে দেশে চলে আসতে হয়। দেশে আসার পর সে আমার স্বামী ও আমার নামে নানা অভিযোগ দিচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে থানা থেকে সজীব নামে একজন এসআই গিয়ে আমার বাড়িতে হুমকি দিয়ে এসেছেন।
তিনি আরও বলেন, শুক্রবার রাতে ওসি আমার স্বামীকে আবার থানায় ডাকেন। থানায় আসার পর ওসি আমার স্বামীকে বেআইনিভাবে হাজতে ঢুকিয়ে দেন। আমি খবর পেয়ে থানায় আসলে ওসি বলেন, আমার স্বামীকে চুরির মামলা দিয়ে চালান দেবে। এরপর বিষয়টি আমি এসপিকে ফোন করে জানাই। এরপর এসপির হস্তক্ষেপে আমার স্বামী ছাড়া পান।
অভিযোগের বিষয়ে থানার ওসি রুহুল আমিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, শ্যালক-দুলাভাইয়ের বিদেশে লেনদেনের একটি সমস্যা ছিল। যেহেতু সমাধান হয়নি তাদেরকে বলেছি নিজেরা অথবা স্থানীয় জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে সমাধান করতে। এরপরও সমাধান না হলে আদালতের শরণাপন্ন হতে।
তবে প্রবাসীকে হাজতে ঢুকানোর বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি বিষয়টি অস্বীকার করেন।
থানায় শালিস বসিয়ে সমাধানের চেষ্টা বেআইনি বলে মন্তব্য করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট এস এম দিদার উদ্দিন। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমলযোগ্য ঘটনা হলে ওসি মামলা রুজু করে তদন্ত করবেন। অআমলযোগ্য ঘটনা হলে আদালতের অনুমতি নিয়ে তদন্ত করতে হবে। এর বাইরে যাওয়ার সুযোগ ওসির নেই। এক্ষেত্রে একটি অভিযোগ ওসি সমাধানের চেষ্টা বেআইনি। তিনি সুস্পষ্ট উচ্চ আদালতের আদেশ লঙ্ঘন করেছেন। শুধুমাত্র একটি অভিযোগের ভিত্তিতে একজন প্রবাসীকে হাজতে ঢুকিয়ে তিনি নাগরিক অধিকার ক্ষুণ্ণ করেছেন।
চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার এস এম শফিউল্লাহ ঢাকা পোস্টকে বলেন, হাটহাজারী থানা এলাকা থেকে এক প্রবাসীর স্ত্রী শুক্রবার রাতে আমাকে ফোন দিয়ে তার স্বামীকে আটকে রাখার অভিযোগ দিয়েছিলেন। তাকে আইনগত সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
এমআর/এসকেডি